‘ইবাদত প্রমাণ করেছে, সে ভালো বোলার’

টেস্ট প্রতি উইকেট মোটে একটি করে। বোলিং গড় ভীষণ বাজে। ওভারপ্রতি রান অনেক বেশি। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের আগে ইবাদত হোসেন চৌধুরির টেস্ট রেকর্ড ছিল একদমই যাচ্ছেতাই। বোলিংয়ে স্কিল, কারুকাজ ও ধারাবাহিকতাও দেখা যায়নি আগে তেমন। সেই ইবাদতই দুর্দান্ত বোলিং করে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অভাবনীয় এক জয়ের কাছে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2022, 11:26 AM
Updated : 4 Jan 2022, 11:26 AM

ইবাদত নিজেকে নতুন করে চেনানোর দিনে সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে লিটন কুমার দাস বললেন, ইবাদতের এই রূপ বের করে আনতেই তার ওপর আস্থা রেখেছিল দল।

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্টের আগে ১০ টেস্টে ইবাদতের শিকার ছিল ১১টি। বোলিং গড় ছিল ৮১.৫৪। ১০টির বেশি উইকেট শিকারি বোলারদের মধ্যে টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বোলিং গড় ছিল তার। ওভারপ্রতি রান দিয়েছিলেন সাড়ে তিনের বেশি।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্য ও এক সময়কার ভলিবল খেলোয়াড় ক্রিকেটের পথে হাঁটা শুরু করেন ‘পেসার হান্ট’ প্রোগ্রাম দিয়ে। গতির কারণেই মূলত দ্রুত তাকে তুলে আনা হয় শীর্ষ পর্যায়ে। তবে পাঁচ বছর ধরে টেস্ট দলে ও দলের আশেপাশে থাকলেও বোলিং স্কিলে উল্লেখযোগ্য উন্নতি চোখে পড়েনি আগে।

এই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও তিন পেসারের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ধারহীন ও খরুচে। বেশ কয়েকবারই আলগা বোলিং করে তিনি সরিয়ে দিয়েছেন চাপ। সেই ইবাদত দ্বিতীয় ইনিংসে যেন অন্য এক বোলার। দারুণ দুটি স্পেলে তিনি বদলে দিয়েছেন ম্যাচের চিত্র।

চতুর্থ দিনে টানা ৯ ওভারের প্রথম স্পেলে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ৯ ওভারে ২৩ রানে ১ উইকেট নেন তিনি। দ্বিতীয় স্পেলে ৭ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন ৩টি। পরে করেন আরেক ওভার। সব মিলিয়ে ৩৯ রানে ৪ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

নিজেকে মেলে ধরতে ইবাদতের এই সময় নেওয়াকে স্বাভাবিক বলেই মনে করেন লিটন। তিনি বললেন,

“আমিও যখন শুরু করেছিলাম, পারফরম্যান্স অতটা ভালো ছিল না। সত্যি বলতে, বাংলাদেশের এখন যে দলটা খেলছে, সবারই যে পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো, তা কিন্তু নয়। ক্রিকেটারদের তাই সুযোগ দিতে হবে। আমরা অনেক দিন পরপর টেস্ট খেলি। সে (ইবাদত) একটা ফরম্যাটেই খেলে। অনেক সময় বাংলাদেশে খেলা হলে খেলে, আবার খেলে না। এই জিনিসগুলো মাথায় রাখতে হবে যে একজন পেসারের জন্য সবসময় সব কিছু অনুকূলে থাকে না।”

“হয়তো গড় ও ইকোনমি একটু বেশি ছিল। কিন্তু তার যে সামর্থ্য আছে, সে যে ভালো বোলার, আজ তা প্রমাণ করেছে। সামনেও দেখাবে, আমি আশাবাদী। ওর ম্যাচ ১১ কী ১২টা। আমার মনে হয় একেকটা টেস্ট খেলোয়াড়ের ১৫-১৭ ম্যাচ লাগে অভিজ্ঞতা আনতে, ক্রিকেটকে বুঝতে। ওই সুযোগ সবাইকে দেওয়া উচিত।”

চতুর্থ দিনে ইবাদতের বোলিংয়ের সময় স্লিপ থেকে নাজমুল হোসেন শান্ত বারবার চিৎকার করে বলছিলেন, যতটা জোরে সম্ভব বল করতে। দুই দল মিলিয়েই এই ম্যাচের সবচেয়ে গতিময় বোলার ছিলেন ইবাদত। মঙ্গলবার তিনি ১৪০ স্পর্শ করেন নিয়মিতই।

লিটন জানালেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই স্টাম্প সোজা ও গতিময় বল করতে ইবাদতকে তারা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন বারবার।

“আজকে উইকেটে বল কিছুটা নিচে থাকছিল, কিছু বল কিক করছিল। ইবাদত বল করলে অন্তত ১৩৮-১৪০ (গতি) থাকে গড়ে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ইবাদতকে এটা বলা যে, ডান্ডায় ডান্ডায় বল করা (স্টাম্প সোজা বল করা)। তাহলে সেখান থেকে বল উঁচু-নিচু হলে এলবিডব্লিউ বা বোল্ড হওয়ার সুযোগ থাকবে।

“এটা করতে আমরা ওকে প্রেরণা জোগাচ্ছিলাম পেছন থেকে, যেমন শান্ত বারবার বলছিল যে জোরে জোরে, কারণ ও যত জোরে বল করছিল, উইকেট থেকে সহায়তা পাচ্ছিল।”

লিটন বললেন, ইবাদতের বোলিং এ দিন গোটা দলকেই আন্দোলিত করেছে। 

“ইবাদত আজকে অসাধারণ ছিল। ওর দুটো স্পেলই চমৎকার ছিল। একই জায়গায় বল করার কারণে অনেকটা সহায়তা পেয়েছে। তার ব্রেক থ্রু দলকে অনেক উজ্জীবিত বরেছে।”