চলতি মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের তিন দিন শেষে দারুণ শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে নিউ জিল্যান্ড একটু এগিয়ে থাকলেও পরের দুটি দিনেই অভাবনীয় পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচের লাগাম এখন বাংলাদেশের হাতে।
অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেটের চরম দুঃসময়ে এই সফরে গেছে দল। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের পর দেশের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজের সব ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে তো বিধ্বস্ত হন মুমিনুল-মুশফিকরা।
পাকিস্তান সিরিজ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই নিউ জিল্যান্ডের পথে উড়াল দেয় বাংলাদেশ দল। সেখানে লম্বা সময় থাকতে হয় কোয়ারেন্টিনে। সব মিলিয়ে দলের মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না মোটেও।
খালেদ মাহমুদকে টিম ম্যানেজমেন্টে যুক্ত করার একটি বড় কারণ, ড্রেসিং রুম উজ্জীবিত করতে পারার ক্ষমতা। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি শোনালেন, কীভাবে দলকে প্রেরণা জোগানোর চেষ্টা করেছেন।
“আমি সবার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে পছন্দ করি, চেষ্টা করি অনুপ্রাণিত করতে। দল হিসেবে সবাইকে একটি কথা বলেছিলাম যে, আমরা এখানে ১০ টেস্ট (৯টি) খেলে সব হেরেছি। তবে ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে একটি ম্যাচে ৫৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে হেরে গিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম যে, ‘আমরা তো বারবার হারতে পারি না। একটা গ্রুপকে হাত তুলতে হবে, ভালো করতে হবে। সেটা এই গ্রুপই কেন হবে না? এই গ্রুপই ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি।”
“জয়-হার পরের কথা। আমরা যদি প্রক্রিয়া ঠিক রাখি, সেই সাহসটা রাখি…এখানে তো জুজু নেই। হ্যাঁ, নিউ জিল্যান্ড এখানে নিজেদের কন্ডিশনে সব প্রতিপক্ষকেই বিপদে ফেলে। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল যে পারব। ওই প্রেরণাই সবাইকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে, ‘তোমরা পারবে।”
দলকে তিনি সাহস জুগিয়েছেন বটে, তবে নিজের মনেই ছিল সংশয়। নিউ জিল্যান্ড সফর বাংলাদেশের জন্য বরাবরই ছিল কঠিন। এবার সেখানে নেই অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। নিউ জিল্যান্ডে দুটি টেস্ট সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ এখন অবসরে। সবশেষ টেস্ট সফরে সেঞ্চুরি করা সৌম্য সরকার ফর্ম হারিয়ে দলের বাইরে। দলে তাই তারুণ্যের ছড়াছড়ি।
খালেদ মাহমুদের মতে, অনুশীলনে ঘাম ঝরানোর পুরস্কার পেয়েছেন তরুণরা।
“ভয় ছিল একটা, সত্যি বলতে। এত তরুণ একটা দল…আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটিং যদি দেখি, সাদমান, জয় ও শান্ত, পরের দিকে ইয়াসির ও লিটন, কেউ এতটা অভিজ্ঞ নয়। তবে প্রত্যেকের সামর্থ্য আছে ভালো খেলার। সুনির্দিষ্ট কিছু ট্রেনিং করা, কী করব এখানে, কী অনুশীলন হবে, এসব নিয়ে ছেলেরা অনেক ফোকাসড ছিল ও কষ্ট করেছে। ভালো খেলার জন্য সবকিছু করেছে ওরা।”
তবে তিন দিনেই যে কাজ শেষ নয়, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন টিম ডিরেক্টর। শেষটা ভালো করে কাঙ্ক্ষিত ফল আদায় করতে চান তিনি।
“এখনও অনেক কিছু বাকি আছে। দুটি দিন বাকি আছে আরও। খেলার এখনও ১৮০ ওভার বাকি আছে। আমরা টিকে থাকতে চাই, ভালো করতে চাই। জিততে না পারলেও অন্তত ড্র করতে চাই।”
“কালকে সকালটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ৪ উইকেট আছে আমাদের, এই জুটিটা হবে গুরুত্বপূর্ণ। মেহেদী হাসান ও ইয়াসির আলি রাব্বিকে উইকেটে সময় কাটাতে হবে। আমরা যদি আরও ৭০ রানের মতো করতে পারি ও দেড়শর কাছে লিড নিতে পারি, তাহলে ভালো অবস্থানে থাকব।”
চতুর্থ দিনে চার ওভার পরই আবার নতুন বল নিতে পারবে নিউ জিল্যান্ড। লিড দেড়শ রানে নিয়ে যাওয়া তাই বাংলাদেশের জন্য হবে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। এরপর নিউ জিল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট করা কিংবা তাদের রান আটকে রাখার কাজটিও সহজ হওয়ার কথা নয়।
খালেদ মাহমুদ অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, লিড দেড়শতে নিতে পারলে ভালো ফল অপেক্ষায় বাংলাদেশের সামনে।
“দেড়শ রানের লিড যদি পাই, এরপর যদি ভালো জায়গায় বল করি, এই উইকেটে দ্রুত রান করাটা সহজ নয়। প্রথম ইনিংসে যেমন আমরা গোছানো ছিলাম, পরিকল্পনা করে বোলিং করেছি, দ্বিতীয় ইনিংসেও যদি তা ধরে রাখতে পারি, যদি আটকে রাখতে পারি, চাপ দিতে পারি, রান করতে না দিলে নিউ জিল্যান্ড চাপে থাকবে।”
“শুরুতে যদি ২-৩টা উইকেট নিতে পারি, ওরা সবসময় চাপে থাকবে। এই উইকেটে যা খুবই সম্ভব। ভালো সুযোগ আছে আমাদের।”