বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে সবচেয়ে পুরনো সংগঠকদের একজন জালাল ইউনুস। বোর্ডে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। নাজমুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সবশেষ দুটি পরিচালনা পর্ষদে জালাল ছিলেন মিডিয়া বিভাগের প্রধান। দেশের ক্রিকেটের ভালো-মন্দ কিছুর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না সেখানে। এখন তার দায়িত্ব সরাসরি জাতীয় দল নিয়েই।
সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে তুমুল আলোচিত ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের নতুন চেয়ারম্যান জালাল। আগের প্রধান আকরাম খানের জায়গায় শুক্রবার বিসিবি সভায় দায়িত্ব দেওয়া হয় জালালকে।
জাতীয় দল সংক্রান্ত দেখভালের দায়িত্ব বিসিবির এই বিভাগের। জাতীয় দলের গঠন, পরিচালনা, পোশাক, খাওয়া, আবাসন, অনুশীলন থেকে শুরু করে সবকিছুর দায়িত্ব তাদের। এছাড়াও ক্রিকেটারদের কেন্দ্রীয় চুক্তি, ক্রিকেটারদের ছুটি ও নানা প্রয়োজন, তাদের শৃঙ্খলা, কোচ ও সাপোর্ট স্টাফদের চুক্তি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচি নিয়ে আইসিসি ও অন্যান্য দেশের বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করা ও ঠিক করা, ‘এ’ দল, নির্বাচকদের চুক্তি ও পরিচালনা এবং আরও অনেক কিছু এই বিভাগের আওতায় পড়ে। বোর্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর একটি এটি। তবে মূল কাজটা জাতীয় দলকে ঘিরেই।
এমন এক সময়ে জালাল ইউনুস এই দায়িত্ব পেলেন, দেশের ক্রিকেট যখন অনেকটা টালমাটাল। জাতীয় দলের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই, মাঠের বাইরের নানা বিতর্কে জেরবার দেশের ক্রিকেট।
সঙ্কট যে চলছে, সেটি নিজেই বললেন জালাল। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, কাজ করতে চান দেশের ক্রিকেটকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে।
“ধন্যবাদ জানাই বোর্ড সভাপতিকে। উনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব পালন করার। কোনো মানুষই শতভাগ নিখুঁত নয়। আমারও হয়তো দোষ থাকবে। তবে যে ক্রাইসিসগুলো আছে এখন আমাদের, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার ও দেশের ক্রিকেটকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করব। এটা আমার লক্ষ্য। আমাদের ক্রিকেটকে আমরা ঠিক পথে দেখতে চাই।”
সেই সঙ্কট উত্তরণে তার প্রথম দৃষ্টি জাতীয় দলে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলে, জাতীয় দলের সাজঘরে।
ড্রেসিং রুমে যে অনিশ্চয়তা আর অস্থিরতার স্রোত বয়ে চলেছে, তাতে আস্থার বাঁধ দিতে চান জালাল।
“পরিচালনা বিভাগের প্রথম কাজ হচ্ছে জাতীয় দলকে ঘিরে। জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমে আমি স্বাস্থ্যকর একটা আবহ আনতে চাই। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ মানে ব্যাপক একটা কথা। ক্রিকেটাররা থাকে, টিম ম্যানেজমেন্ট, স্টাফরা থাকে। তাদের নিয়ে আমরা যদি একটা ভালো পরিবেশ রাখতে পারি, তাহলে ক্রিকেট ঠিক পথে থাকবে।”
নানা সময়ে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে। আকরাম খান দায়িত্বে থাকার সময় এবং আগেও, ‘এ’ দলের সিরিজ নিয়মিত আয়োজন করতে পারেনি তারা। ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে ব্যবধান, সেটি তাই ঘুচিয়ে উঠতে পারেননি ক্রিকেটারদের বড় অংশ। বেশির ভাগ ক্রিকেটারকেই জাতীয় দলে আসতে হয়েছে যথেষ্ট প্রস্তুত না হয়েই। ‘এ’ দলের কোনো নিয়মিত সূচি বা ধারাবাহিক খেলা কখনোই ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেটে।
জালাল ইউনুস এখানে তুলে ধরলেন নানা বাস্তবতার কথা। পাশাপাশি জানালেন এদিকে নজর দেওয়ার ইচ্ছার কথাও।
“সত্যি বলতে, ‘এ’ দলের সিরিজ বা সফর, এসব মহামারীর কারণে অনেক পিছিয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করেছি অনেকবার। আকরাম খান তার দায়িত্বে দারুণ সফল ছিলেন। হয়তো অনেক কিছু ছিল তার এখতিয়ারের বাইরে।”
“এখন বাংলাদেশ টাইগার্স হচ্ছে, এইচপি দল থাকবে। তাদের সঙ্গে আমার বসতে হবে। তারা কোন জায়গায় কাজ করবেন, আমি কোন জায়গায়, এটা আমার জানতে হবে। ওভারল্যাপিং হচ্ছে কিনা, জানতে হবে। হলেও সমস্যা নেই। আমরা ঠিক করে নেব। তবে অবশ্যই ‘এ’ দল বা অন্য কোনো নামে যদি হয়, কার্যক্রম রাখতে হবে আমাদের।”