গল টেস্টের প্রথম দিনে উইকেট পড়েছিল মাত্র ৩টি। সেখানে সোমবার দ্বিতীয় দিনে দুই দলের মিলিয়ে পড়ে ১৩ উইকেট! যার ১২টিই স্পিনারদের। প্রথম ইনিংসে বড় লিডের আশায় স্বাগতিকরা।
শ্রীলঙ্কাকে ৩৮৬ রানে অলআউট করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিন শেষ করেছে ৬ উইকেটে ১১৩ রান তুলে। ফলোঅন এড়াতে এখনও তাদের প্রয়োজন ৭৪ রান।
গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের মতো ব্যাটিং সহজ ছিল না দ্বিতীয় দিনের উইকেটে। আগের দিনের ৩ উইকেটে ২৬৭ রানের সঙ্গে এদিন আর ১২৯ রান যোগ করতে পারে শ্রীলঙ্কা। ১০৫ রানে তারা হারায় শেষ ৭ উইকেট। ১৩২ রান নিয়ে দিন শুরু করে দিমুথ করুনারত্নে থামেন ১৪৭ রানে।
অফ স্পিনে ৮৩ রানে ৫ উইকেট নেন চেইস। বাঁহাতি স্পিনার ওয়ারিক্যান ৮৭ রানে নেন ৩টি। এ দিন পেসারদের একমাত্র উইকেটটি নেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, দিনের প্রথমটি।
আগের দিনের ৫৬ রানের সঙ্গে আর ৫ রান যোগ করে অদ্ভুতভাবে হিট উইকেট আউট হন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। পেসার গাব্রিয়েলের বল ডিফেন্স করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বল ড্রপ খেয়ে পড়তে যাচ্ছিল স্টাম্পের ওপর। ব্যাট দিয়ে বল সরাতে গিয়ে নিজেই বেলস ফেলে দেন ধনাঞ্জয়া!
একটু পর চেইসের অফ স্পিনে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন করুনারত্নে। ৩০০ বলে ১৫ চারে সাজানো তার ১৪৭ রানের ইনিংসটি। ওয়ারিক্যানের বাড়তি বাউন্সে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন রমেশ মেন্ডিস। বাঁহাতি এই স্পিনার পরে এলবিডব্লিউ করে দেন সুরঙ্গা লাকমলকে।
শুরুতে গ্যাব্রিয়েলের শর্ট বলে ভুগছিলেন দিনেশ চান্দিমাল। পরে স্পিনারদের সুইপ ও কাট শট খেলে আত্মবিশ্বাস কিছুটা বাড়াতে পারলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। চেইসকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্লিপে (৮৩ বলে ৪৫)। ওয়ারিক্যানের বলের টার্নের বিপরীতে সুইপ করে ক্যাচ দেন দুশমন্থ চামিরা।
শেষ উইকেটে লাসিথ এম্বুলদেনিয়া ও প্রাভিন জয়াবিক্রমার ২৫ রানের জুটিতে ৩৮৬ পর্যন্ত যেতে পারে শ্রীলঙ্কা। একটি করে চার-ছক্কায় ১৭ রান করা এম্বুলদেনিয়াকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন চেইস। টেস্টে চতুর্থবার এই স্বাদ পেলেন তিনি।
জবাবে চা বিরতির আগে সাত ওভার কাটিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার। জার্মেইন ব্ল্যাকউড অবশ্য ফিরতে পারতেন ২ রানে। চামিরার বলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার, শ্রীলঙ্কাও নেয়নি রিভিউ, নিলে সিদ্ধান্ত পাল্টে যেত।
দুই ওপেনার ২০ ওভারে গড়ে ফেলেন ৪৬ রানের জুটি। পথ হারানোর শুরু এরপরই। পরের ওভারের প্রথম বলেই ব্ল্যাকউডকে এলবিডব্লিউ করে দেন বাঁহাতি স্পিনার এম্বুলদেনিয়া। ব্ল্যাকউড নষ্ট করেন একটি রিভিউও।
টিকতে পারেননি এনক্রুমা বনার। আরেক বাঁহাতি স্পিনার জয়াবিক্রমার কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বলে তিনি ক্যাচ দেন স্লিপে। আক্রমণে এসেই ব্র্যাথওয়েটকে (৪১) থামান অফ স্পিনার মেন্ডিস। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ধরা পড়েন লেগ স্লিপে পাথুন নিসানকার হাতে।
প্রথম দিনে ফিল্ডিংয়ের সময় হেলমেটে বলের আঘাতে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া জেরেমি সোলোজানোর কনকাশন বদলি হিসেবে সুযোগ পাওয়া শেই হোপও করতে পারেননি তেমন কিছু। নিজের পরের ওভারে তাকে শর্ট লেগ ফিল্ডারের ক্যাচে ফিরিয়ে মেন্ডিস জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা, শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা হয়নি।
‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নেমে ওয়ারিক্যান টিকতে পারেন কেবল ৮ বল। জয়াবিক্রমার বলে তিনি ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। মেন্ডিস পরে ফিরিয়ে দেন চেইসকে। শর্ট লেগে আরেকটি দারুণ ক্যাচ নেন ওশাদা ফার্নান্দো।
তখন ১০০ রানে নেই ৬ উইকেট। দিনের শেষ দুই ওভার কাটিয়ে দেন জেসন হোল্ডার ও কাইল মেয়ার্স। দিনের শেষ দুই বলে বাউন্ডারি মেরে মেয়ার্স অপরাজিত আছেন ২২ রানে। হোল্ডার ১ রানে। তৃতীয় দিন তাদের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
মেন্ডিস ৬ ওভারে ২৩ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট, জয়াবিক্রমার ২টি, ১টি এম্বুলদেনিয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৩৩.৫ ওভারে ৩৮৬ (আগের দিন ২৬৭/৩) (করুনারত্নে ১৪৭, ধনাঞ্জয়া ৬১, চান্দিমাল ৪৫, মেন্ডিস ১৩, লাকমল ১১, চামিরা ৩, এম্বুলদেনিয়া ১৭, জয়াবিক্রমার ৮*; গ্যাব্রিয়েল ১৯-০-৬৯-২, হোল্ডার ১৯-৯-২৪-০, কর্নওয়াল ২৭-৩-৯১-০, মেয়ার্স ৩-০-৯-০, ওয়ারিক্যান ৩২-৫-৮৭-৩, চেইস ২৮.৫-৩-৮৫-৫, ব্ল্যাকউড ১-০-৬-০, ব্র্যাথওয়েট ৪-০-৬-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৪২ ওভারে ১১৩/৬ (ব্র্যাথওয়েট ৪১, ব্ল্যাকউড ২০, বনার ১, হোপ ১০, চেইস ২, ওয়ারিক্যান ১, মেয়ার্স ২২*, হোল্ডার ১*; লাকমল ৫-১-৬-০, চামিরা ৪-০-৮-০, এম্বুলদেনিয়া ১৫-৪-৩৯-১, জয়াবিক্রমা ১২-৪-২৫-২, মেন্ডিস ৬-১-২৩-৩)