শেষের বাজে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হার

কোনো ম্যাচে তিন বিভাগেই পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া যেন এখন অসম্ভব এক চাওয়া। কোনো একটি বিভাগেও যে ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছে না বাংলাদেশ। সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচেও দেখা গেল তেমনটা। দেড়শ রানের আশেপাশে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগানো দলটি শেষের বাজে ব্যাটিংয়ে থমকে গেল কেবল একশ পেরিয়েই। অনায়াসে সেই রান তাড়া করে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নিল পাকিস্তান।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2021, 12:50 PM
Updated : 20 Nov 2021, 12:50 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার ৮ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের ১০৮ রান তারা পেরিয়ে যায় ১১ বল বাকি থাকতে।

ওই ছোট্ট পুঁজি নিয়েও লড়াইয়ের চেষ্টা ছিল বোলারদের। কিন্তু সহায়তা মেলেনি ফিল্ডারদের। আমিনুল ইসলাম বিল্পবের বলে হাত থেকে ছুটেছে দুটি ক্যাচ। আগের দিন শেষ ওভারে বোলিং পাওয়া লেগ স্পিনার এই ম্যাচে ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নেন এক উইকেট, অনায়াসেই সেটি হতে পারত তিন।

টসে পূরণ হয় দুই দলেরই চাওয়া। জিতে ব্যাটিং নেন মাহমুদউল্লাহ, জিতলে বোলিংই নিতেন বাবর আজম। মিরপুরের তুলনায় উইকেট বেশ ভালো ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আধার তাতে কাটেনি।

বিশ্রাম কাটিয়ে দলে ফেরা শাহিন শাহ আফ্রিদি প্রথম ওভারেই রাখেন প্রভাব। দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করে দেন সাইফ হাসানকে। আগের ম্যাচে কোনোমতে ১ রান করা তরুণ ওপেনার এবার পান গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ।

প্রথম ম্যাচের মতো এবারও বাজে শটে বিদায় নেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ২ ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান দুই ওপেনার।

দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় বাংলাদেশ। আফ্রিদিকে ফ্লিক করে দারুণ ছক্কা মারেন আফিফ। পরের বলে তিনি জায়গায় দাঁড়িয়ে ডিফেন্স করলেও বিনা কারণে বল ছুঁড়েন আফ্রিদি। বল গিয়ে লাগে আফিফের পায়ের পেছন দিকে।

বেশ ব্যথা পেলেও এই ঘটনায় ভড়কে যাননি আফিফ, খেলে যান দায়িত্ব নিয়ে। এক-দুই নিয়ে খেলার ফাঁকে ফাঁকে বাউন্ডারি মারতে শুরু করেন শান্ত। জমে যায় জুটি।

আফিফের সম্ভাবনাময় ইনিংস থামে ভীষণ হতাশাজনকভাবে। আগে থেকেই রিভার্স সুইপ করার জন্য তৈরি হয়ে যান তিনি। বুঝতে পেরে বল টেনে দেন শাদাব খান। ব্যাটের অগ্রভাগে লেগে আসা সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান এই লেগ স্পিনার। ভাঙে তৃতীয় উইকেটে ৩৭ বল স্থায়ী ৪৬ রানের জুটি।

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে আরেকটি জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন শান্ত। হারিস রউফের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে ভাঙে ২৮ রানের জুটি।

পরের ওভারে শাদাবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শান্ত। ৩৪ বলে খেলা বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ৪০ রানের ইনিংস গড়া পাঁচ চারে। এরপর আর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান ও আমিনুল ইসলাম করতে পারেননি তেমন কিছু।

প্রথম ১২ ওভারে ৭৮ রান তোলা বাংলাদেশ শেষ ৮ ওভারে করে কেবল ৩০ রান!

সফরকারীদের প্রায় সবাই আঁটসাঁট বোলিং করেন। এক প্রান্তে বাউন্ডারি কেবল ৫৭ মিটারের হলেও সেই দিক লক্ষ্য করে চড়াও হওয়ার তেমন কোনো সুযোগ দেননি তারা। ৪ ওভারে ১৫ রানে ২ উ্কেট নেন আফ্রিদি। বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজ ২ উইকেট নেন ২২ রানে।

আগের ম্যাচের চেয়ে উইকেট ভালো, লক্ষ্য আরও কম। তাই সত্যিকারের কোনো চাপ ছিল না সফরকারীদের ওপর। তৃতীয় ওভারে বাবর বোল্ড হয়ে গেলেও সহজ জয়ই পায় পাকিস্তান।

ছোট রান তাড়ায় সাবধানী ব্যাটিংয়েই এগিয়ে যায় তারা। এর মধ্যেই মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফখর জামানকে ফেরানোর সুযোগ তৈরি করেন আমিনুল। কিন্তু সহজ দুটি ক্যাচ ছেড়ে তরুণ এই লেগ স্পিনারকে হতাশায় ডুবান সাইফ ও তাসকিন আহমেদ।

অনেক সময় পেলেও মিড উইকেট সীমানায় ফখরের ক্যাচ জমাতে পারেননি সাইফ। ২৬ রানে বেঁচে যাওয়া ফখর পরে ফিরেন ম্যাচ শেষ করে। ৫১ বলে তিন ছক্কা ও দুই চারে ৫৭ রানের ইনিংসে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

৩৮ রানে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া রিজওয়ান ফিরেন এক রান পরেই। আমিনুলের বলেই পয়েন্টে ক্যাচ মুঠোয় জমান সাইফ। ভাঙে ৮৫ রানের জুটি। ৪৫ বলে খেলা রিজওয়ানের ৩৯ রানের ইনিংস গড়া চারটি চারে। 

বাংলাদেশের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়ের দিনে আলোচনায় থাকছে শের-ই-বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ম্যাচের চতুর্দশ ওভারে বিস্ময়করভাবে নর্দার্ন গ্যালারি থেকে নিরাপত্তা বেষ্টনি টপকে একজন মাঠে ঢুকে পড়েন! মুস্তাফিজের পা ছুঁয়ে হাঁটু গেড়ে সেজদার মতো ভঙ্গি করেন ওই দর্শক। তার মাথা স্পর্শ করা মুস্তাফিজ আর কোনো বল না করেই মাঠ ছাড়েন। হতাশার হারের দিন যুক্ত হলো সুরক্ষা বলয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শক ঢুকে পড়ার বিপত্তি।

আগামী সোমবার একই মাঠে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০৮/৭ (নাঈম ২, সাইফ ০, শান্ত ৪০, আফিফ ২০, মাহমুদউল্লাহ ১২, সোহান ১১, মেহেদি ৩, আমিনুল ৮*, তাসকিন ২* ; আফ্রিদি ৪-০-১৫-২, ওয়াসিম ৩-০-৯-১, মালিক ২-০-১৬-০, রউফ ৩-০-১৩-১, শাদাব ৪-০-২২-২, নওয়াজ ৪-০-২৫-১)।

পাকিস্তান: ১৮.১ ওভারে ১০৯/২ (রিজওয়ান ৩৯, বাবর ১, ফখর ৫৭*, হায়দার ১*; মেহেদি ৪-০-২৩-০, তাসকিন ৪-০-২২-০, মুস্তাফিজ ২.১-০-১২-১, শরিফুল ১.৫-০-১০-০, আমিনুল ৪-০-৩০-১, শান্ত ১.১-০-৪-০, আফিফ ১-০-৬-০)।

ফল: পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ফখর জামান