সেই সুরে অবশ্য আশার ছন্দ খুব একটা নেই। টি-টোয়েন্টিতে দলের নতুন শুরুর কথা বলা হলেও আসলে তা হচ্ছে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। সামনে সেখানে দারুণ গোছানো পাকিস্তান। যাদের শক্তির গভীরতা অনেক। স্কিলের পরিধি ব্যাপক। যারা আত্মবিশ্বাসেও টইটম্বুর।
বিপরীত অবস্থানে থাকা এই দুই দলের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু শুক্রবার। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচ দুপুর ২টা থেকে।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের ৫ ক্রিকেটার নেই এবারের সিরিজে। সেই তালিকায় আছে মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ একজন। যাকে নিয়ে নির্বাচকরা বলছেন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি নিজে এটিকে নিচ্ছেন ‘বাদ’ হিসেবে। চোট নিয়ে বিশ্বকাপের শেষ দিকে খেলতে না পারা সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন নেই এখানেও। সঙ্গে বাদ দেওয়া হয়েছে লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও রুবেল হোসেনকে। তামিম ইকবাল তো চোটের কারণে নেই আগে থেকেই।
৬ জনের বদলে দলে নেওয়া হয়েছে ৬ জনকে। সংখ্যার হিসেবে বড়সড় পরিবর্তনই। কিন্তু সেখানে ইয়াসির আলি চৌধুরি, নাজমুল হোসেন শান্তর মতো প্রত্যাশিত নাম যেমন আছে, সেখানে আছে সাইফ হাসান ও আকবর আলির মতো চমকও। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে এই সিরিজের আগে পর্যন্ত কখনোই সাইফকে টি-টোয়েন্টির জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়নি। আকবরও দলের দৃশ্যপটে ছিলেন না কোথাও।
এখানে যতটা না আছে পরিকল্পনা, তার চেয়ে বেশি আছে অভাবনীয় কিছু পাওয়ার আশা। নতুন শুরুর প্রক্রিয়া নিয়ে তাই প্রশ্ন রয়েই গেছে।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য বিশ্বকাপে ফিরেই তাকাতে চান না। হতাশার এই সাম্প্রতিক অতীতকে পেছনে ফেলে তিনি আলিঙ্গন করতে চাইলেন সম্ভাবনাময় আগামীকে।
“বিশ্বকাপ নিয়ে এখন আর কথা বলছে চাচ্ছি না। এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে মনোযোগ দিতে চাই। এই তিনটা ম্যাচে আমরা দলের জন্য কতটুকু ভালো অবদান রাখতে পারি, ওটাই মুখ্য বিষয়। যে জিনিসগুলো আগে হয়ে গেছে, সেসব নিয়ে চিন্তা করলে বরং নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।”
“আমরা পজিটিভভাবে চিন্তা করছি সবকিছু। সিরিজটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে৷ পাকিস্তান সেরা দলগুলির একটি এই মুহূর্তে। আমাদের অনেকগুলো নতুন ছেলে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হবে।”
সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে ট্রফির মঞ্চেও উঠতে পারেনি পাকিস্তান। তবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আলোচিত দলগুলির একটি তারা। স্কিল তো তাদের কখনোই খারাপ নয়, বিশ্বকাপে তারা চমকে দিয়েছে দুর্দান্ত টিম স্পিরিট ও উজ্জীবিত ক্রিকেট দিয়ে। প্রতিভাবান এই দলটি বাবর আজমের নেতৃত্বে হয়ে উঠেছে একতাবদ্ধ।
বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে একমাত্র দল হিসেবে অপরাজিত থেকে তারা শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গেছে সেমি-ফাইনালে। তবে বিশ্বকাপের সেই বিশ্বাস আর স্পিরিটকেই ধরে রাখতে চান বলে জানালেন বাবর।
“বিশ্বকাপে যেভাবে এগোচ্ছিলাম, এরপর সেমি-ফাইনাল হেরে যাওয়ার পর অবশ্যই খারাপ লেগেছে। পুরো দলই কষ্ট পেয়েছে। পরে সবাই মিলে বসেছি, ভুলগুলো নিয়ে কথা বলেছি, কোথায় আমরা ভালো করতে পারতাম, কোথায় উন্নতি করতে হবে, এসব নিয়ে কথা বলেছি।”
“পুরা দলের আত্মবিশ্বাস অটুট আছে। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আছে। আত্মবিশ্বাস দারুণ দলের। মোমেন্টাম আছে আমাদের। আমরা নিজেদের শক্তির জায়গায় থাকব এবং বিশ্বকাপে যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছি, সেটিই ধরে রাখার চেষ্টা করব।”
এই ম্যাচে অবশ্য খানিকটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে পাকিস্তান। ম্যাচের আগের দিনই ১২ জনের দল ঘোষণা করেছে তারা। সেখানে রাখা হয়নি একাদশের নিয়মিত দুই সদস্য আসিফ আলি ও ইমাদ ওয়াসিমকে। তবে যারা আছেন, তারাও কম যান না। হায়দার আলি, খুশদিল শাহরা দারুণ প্রতিভাবান ও আগ্রাসী। মোহাম্মদ নওয়াজ তো বেশ পরীক্ষিত এবং বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে বেশ।
“এটা ওদের হোম সিরিজ। কাজেই ওদেরকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। ওদের কয়েকজন ক্রিকেটার নেই, তবে যারা আছে, তারাও কম নয়। বিপিএল খেলে ওরা সবাই। ওদেরকে সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।”
মিরপুরে বাংলাদেশকে সমীহ করার মূল কারণ এখানকার ব্যাটিং-প্রতিকূল উইকেটে বাংলাদেশের দারুণ রেকর্ডের জন্য। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে টার্নিং উইকেটে পথ বেছে নিলে তা ডেকে আনতে পারে বিপদ। ম্যাচের আগের দিন মাহমুদউল্লাহ বললেন, উইকেট এবার খুব ভালো হবে বলেই ধারণা তার।
লিটন-সৌম্যরা না থাকায় বাংলাদেশের একাদশে বড় কৌতূহলের জায়গা টপ অর্ডার নিয়ে। মোহাম্মদ নাইম শেখ থাকছেন নিশ্চিতভাবেই। সঙ্গে সাইফ নাকি শান্ত, সেটিই প্রশ্ন। কিংবা থাকতে পারেন তিনজনই। সেক্ষেত্রে নাঈম-সাইফকে ওপেনিংয়ে আর শান্তকে দেখা যেতে পারে তিনে। এই তিনজনই খেললে ইয়াসির আলি চৌধুরির কাঙ্ক্ষিত অভিষেক পিছিয়ে যেতে পারে আরও।
বোলিং আক্রমণে তিন পেসার নাকি দুটি, সেটা নির্ভর করবে উইকেটের ওপর। স্পিন আক্রমণে শেখ মেহেদি হাসান ও নাসুম আহমেদের থাকা এরকম নিশ্চিতই। তিন পেসার খেললে কমে যাবে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে খেলানোর সম্ভাবনা।
তবে দিনশেষে, একাদশে যে-ই খেলুক, একা পার্থক্য গড়ার মতো ক্রিকেটার এই দলে নেই নিশ্চিতভাবেই। ভালো ফল পেতে বাংলাদেশকে তাই নির্ভর করতে হবে দুর্দান্ত দলীয় পারফরম্যান্স ও প্রতিপক্ষের বাজে দিনের জন্য।
ভালো ফল মানে জয়। এই পাকিস্তানের বিপক্ষে কাজটা খুব কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাস্তবতায় খুব জরুরি। দলের যে মানসিক অবস্থা, দেশের ক্রিকেটে যে গুমোট আবহাওয়া, সবকিছুর সমাধান কেবল মিলতে পারে মাঠের ক্রিকেটেই। জয়ের চেয়ে বড় টনিক যে আর নেই।