মিরাজের হ্যাটট্রিক ফিফটির পর শেষের রোমাঞ্চের অপেক্ষা

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ব্যাটে-বলে প্রস্তুতিটা ততটাই ভালো হচ্ছে মেহেদী হাসান মিরাজের। জাতীয় ক্রিকেট লিগে তিনি ব্যাট হাতে টানা তিন ইনিংসে করেছেন ফিফটি। তাতে রংপুর বিভাগকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিয়েছে খুলনা বিভাগ। ম্যাচের শেষ দিনে হতে পারে যে কোনো ফল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2021, 02:01 PM
Updated : 9 Nov 2021, 02:01 PM

লিগের চতুর্থ রাউন্ডে প্রথম স্তরের ম্যাচটিতে ২৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় মঙ্গলবার তৃতীয় দিন শেষে রংপুরের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৫৩ রান। চতুর্থ ও শেষ দিনে তাদের দরকার এখনও ১৯৫ রান, খুলনার চাই ৯ উইকেট।

প্রথম ইনিংসে ৩৫ রানে এগিয়ে থাকা খুলনার দ্বিতীয় ইনিংস থামে এ দিন ২১২ রানে। আট নম্বরে নেমে মিরাজ করেন ৮৮ বলে ৭ চারে ৫৪ রান।

প্রথম ইনিংসে এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার করেছিলেন অপরাজিত ৭২ রান। আগের রাউন্ডে ব্যাটিংয়ে একমাত্র ইনিংসে করেছিলেন ৬৭। হাত ঘুরিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টিসহ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট।

চলতি ম্যাচে প্রথম ইনিংসে তিনি নিয়েছেন ৪ উইকেট। আসরে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তার শিকার ২৬টি।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে ১ উইকেটে ২১ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করে খুলনা। আগের দিন ১৪ রানে অপরাজিত তুষার ইমরান এ দিন ব্যাটিংয়ে নামেননি শুরুতে। অমিত মজুমদারের সঙ্গী হন ইমরুল কায়েস।

ইমরুল টেকেন কেবল ১১ বল। পেসার আলাউদ্দিন বাবুর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে মেহেদি মারুফের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

একটু পর আলাউদ্দিনের বলেই আলগা শটে বোল্ড হন জাতীয় দলে ফেরার লড়াইয়ে থাকা মোহাম্মদ মিঠুন। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের স্কোর একশর কাছে নিয়ে যান অমিত ও নাহিদুল ইসলাম।

নাহিদুলকে (৪১ বলে ৫১) বোল্ডকে ৬৫ রানের জুটি ভাঙেন নাসির হোসেন। জিয়াউর রহমানকে দ্রুত বোল্ড করে দেন আলাউদ্দিন।

১০২ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মিরাজ। এক প্রান্ত আগলে রেখে অমিত ফিফটি করেন ১৮৯ বলে। এরপর আর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি বেশিদূর। ২২৪ বলে ৫৫ রান করা ওপেনারকে বোল্ড করেন নাসির।

মিরাজ ফিফটি পূর্ণ করেন ৭৯ বলে। চা-বিরতির আগে বাঁহাতি স্পিনার সোহরাওয়ার্দী শুভর বলে সিলি মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি।

পরে ব্যাটিংয়ে নেমে তুষার যোগ করতে পারেন কেবল ১ রান। ২৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় খুলনা। রংপুরকে আড়াইশর কাছাকাছি লক্ষ্য দিতে বড় ভূমিকা রাখে এগারো নম্বরে নেমে আব্দুল হালিমের ১৭ বলে ২ চার ও একটি ছক্কায় ১৮ রানের ক্যামিও ইনিংস।

৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে রংপুরের সফলতম বোলার নাসির। আলাউদ্দিন ও সোহরাওয়ার্দী নেন ৩টি করে উইকেট।

রান তাড়ায় নেমে রংপুরের শুরুটা ভালো হয়নি। সপ্তম ওভারে তারা হারায় জাহিদ জাবেদকে। নিচু হওয়া ডেলিভারিতে অফ স্টাম্প উপড়ে ফেলেন আগের রাউন্ডে অভিষিক্ত তরুণ পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। প্রথম ইনিংসে তিনি নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

দিন শেষে মাইশুকুর রহমান ১৯ ও তানবীর হায়দার ২৩ রানে অপরাজিত আছেন। ৬৭ বলে ৩২ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন আছেন এই দুজন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা ১ম ইনিংস: ২৫৭

রংপুর ১ম ইনিংস: ২২২

খুলনা ২য় ইনিংস: ৮৫.২ ওভারে ২১২ (আগের দিন ২১/১) (অমিত ৫৫, তুষার ১৫, ইমরুল ১, মিঠুন ৭, নাহিদুল ৪১, জিয়াউর ২, মিরাজ ৫৪, মৃত্যুঞ্জয় ৫, রায়হান ৩*, হালিম ১৮; আলাউদ্দিন ১৮-৩-৫৮-৩, সোহরাওয়ার্দী ২২.২-৮-৪৪-৩, নাসির ২৩-১০-৩৫-৪, আব্দুর রহমান ৭-০-২৮-০, আরিফুল ৩-০-১৪-০, তানবীর ৩-০-১৩-০, নাঈম ৯-৩-১০-০)

রংপুর ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৪৮) ১৮ ওভারে ৫৩/১ (মাইশুকুর ১৯*, জাহিদ ৬, তানবীর ২৩*; মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-১৭-১, হালিম ৪-১-১২-০, মিরাজ ৫-১-৭-০, রায়হান ৩-১-২-০, নাহিদুল ২-০-১০-০)।

ম্যাচে নাসুমের ১০ উইকেট

প্রথম স্তরের আরেক ম্যাচে প্রথম ইনিংসে অল্পতে গুটিয়ে যাওয়া ঢাকা বিভাগ দ্বিতীয় ইনিংসে আব্দুল মজিদ ও রকিবুল হাসানের ফিফটিতে লড়াই করছে। তবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এখনও সিলেট বিভাগের হাতেই আছে।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিন ৯০ ওভার ব্যাটিং করে ঢাকা তুলতে পারে কেবল ২১২ রান। দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৩৪ রান। প্রথম ইনিংসে ১৪২ রানের ঘাটতি পুষিয়ে তারা এগিয়ে আছে স্রেফ ৯২ রানে।

প্রথম ইনিংসে ৭টির পর দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত ৩ উইকেট নিয়েছেন সিলেটের বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহেমদ।

১ উইকেটে ২২ রান নিয়ে দিন শুরু করেন মজিদ ও জয়রাজ শেখ। দিনের শুরুতেই জয়রাজকে এলবিডব্লিউ করে দেন পেসার ইবাদত হোসেন।

তৃতীয় উইকেটে ৯৯ রানের বড় জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন মজিদ ও রকিবুল। দুই জনই বিদায় নেন ফিফটির পরপর। মাঝে টিকতে পারেননি তাইবুর রহমান।

নাসুমের বলে এলবিডব্লিউ হওয়া মজিদ ১৪৫ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় করেন ৫৯ রান। ১৬০ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৪ রান রকিবুলের। 

প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন এবার থামেন ২২ রানে। সাতে নেমে রুবেল মিয়া করেন ২৫ রান। ২২ রান করে দিনের শেষ দিকে আউট হন সুমন খান।

দিন শেষে নাজমুল ইসলাম অপু ১৯ ও এনামুল হক ১ রানে অপরাজিত আছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা বিভাগ ১ম ইনিংস: ১২৩

সিলেট বিভাগ ১ম ইনিংস: ২৬৫

ঢাকা বিভাগ ২য় ইনিংস: ১০৩ ওভারে ২৩৪/৮ (আগের দিন ২২/১) (মজিদ ৫৯, জয়রাজ ১৮, রকিবুল ৫৪, তাইবুর ২, মাহিদুল ২২, রুবেল ২৫, নাজমুল ১৯*, সুমন ২২, এনামুল ১*; ইবাদত ২১-৬-৩৬-২, নাসুম ৩৭-৯-৬৯-৩, রেজাউর ১৫-৫-২২-১, শাহানুর ১৬-৩-৪৪-১, রাহাতুল ১০-০-৪৫-০, কাপালি ৪-০-১০-১)