বিশ্বকাপ থেকে ফিরেই নাসুমের ৭ উইকেট

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে সবে দেশে ফিরেছেন নাসুম আহমেদ। একদিন পর জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমেই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং উপহার দিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। তার স্পিনে ঢাকা বিভাগকে অল্প রানে গুটিয়ে প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার পথে আছে সিলেট।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2021, 12:59 PM
Updated : 7 Nov 2021, 12:59 PM

চতুর্থ রাউন্ডে প্রথম স্তরে রোববার প্রথম দিনে শূন্য রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ঢাকা অলআউট হয়েছে ১২৩ রানে। দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে সিলেট বিভাগ তুলেছে ৭৯ রান। ৪৪ রানে পিছিয়ে আছে তারা।

নিজের প্রথম ওভারে তিনটিসহ ৪৩ রানে নাসুম নেন ৭ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার আগের সেরা বোলিং ছিল ৯৭ রানে ৭ উইকেট।

ব্যর্থ বিশ্বকাপ অভিযান শেষে বাংলাদেশ দলের একাংশের সঙ্গে নাসুম দেশে ফেরেন গত শুক্রবার। দলের মতো তার নিজেরও বিশ্বকাপ খুব একটা ভালো কাটেনি। শেষ ম্যাচে সুযোগ পাননি একাদশে। চার ম্যাচে উইকেট নেন পাঁচটি।

মাত্র একদিন বিশ্রাম নিয়ে লিগে নেমেই দারুণ বোলিংয়ে নিজেকে মেলে ধরলেন তিনি। সিলেট বিভাগের কোচ ও বাংলাদেশের সাবেক ব্যাটসম্যান রাজিন সালেহ জানালেন, দুবাই থাকতেই লিগে খেলার জন্য তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন নাসুম।

ঢাকার ইনিংসের অর্ধেকেরও বেশি রান আসে একজনের ব্যাট থেকে। ছয় নম্বরে নেমে ১২৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ রান করেন তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনে উইকেটে টার্ন মিলেছে। সেটি দারুণভাবে কাজে লাগান নাসুম।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ঢাকা। কোনো রান না তুলতেই ৭ বলের মধ্যে তারা হারায় ৪ উইকেট!

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নাসুমের প্রথম বলেই ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রনি তালুকদার। তৃতীয় বলে বোল্ড হন এবারের লিগে প্রথম খেলতে নামা জয়রাজ শেখ। শেষ বলে এলবিডব্লিউ রকিবুল হাসান। বলার অপেক্ষা রাখে না, রান না দিয়েই উইকেট তিনটি নেন নাসুম।

মেডেন দিয়ে শুরু করা ইবাদত হোসেন নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ করে দেন আব্দুল মজিদকে।

শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন তাইবুর ও মাহিদুল। পঞ্চম উইকেটে দুজন গড়েন ৮৯ রানের জুটি। কিন্তু এ জুটি ভাঙার পরই আবার ধস নামে ঢাকার ইনিংসে। ৩৩ রানের মধ্যে তারা হারায় শেষ ৬ উইকেট!

নিজের পরপর দুই ওভারে তাইবুর (৯৬ বলে ২০) ও সুমন খানকে বোল্ড করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাসুম। মাঝে রেজাউর রহমান রেজার শিকার রুবেল মিয়া।

নাসুম পরে এলবিডব্লিউ করে দেন ঢাকার সর্বোচ্চ স্কোরার মাহিদুল ও এনামুল হককে। আর হোসেন আলিকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেন শাহানুর রহমান।

ব্যাটিংয়ে নেমে সিলেটের শুরুটাও ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারে সুমন খানের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন ইমতিয়াজ হোসেন। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা ১৭০ রানের ইনিংস খেলা অমিত হাসানও যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

২৮ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দিনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেন সায়েম আলম (৪৫*) ও কিপার-ব্যাটসম্যান জাকির হাসান (২০*)। ১০৪ বলে ৫১ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন আছেন এই দুজন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা বিভাগ ১ম ইনিংস: ৫০.৩ ওভারে ১২৩ (মজিদ ০, রনি ০, জয়রাজ ০, রকিবুল ০, তাইবুর ২০, মাহিদুল ৬৪, রুবেল ১, নাজমুল ১৬*, এনামুল ৪, হোসেন আলি ০; ইবাদত ৯-৪-১৩-১, নাসুম ১৮-৬-৪৩-৭, শাহানুর ৫.৩-২-১২-১, রেজাউর ১২-৭-২৫-১, রাহাতুল ৬-১, ১৬-০)

সিলেট বিভাগ ১ম ইনিংস: ৩০ ওভারে ৭৯/২ (ইমতিয়াজ ২, সায়েম ৪৫, অমিত ৬, জাকির ২০*; সুমন ৮-১-৪০-১, এনামুল ৬-২-৭-০, নাজমুল ৬.৩-২-১৩-০, হোসেন আলি ৫-১-৫-১, তাইবুর ৩.৩-০-৯-০)

মিরাজের টানা দ্বিতীয় ফিফটি

ব্যাট ও বল হাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতিটা বেশ ভালোই হচ্ছে মেহেদি হাসান মিরাজের। জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম স্তরে টানা দ্বিতীয় ফিফটি করেছেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে প্রথম দিন শেষে রংপুর বিভাগের বিপক্ষে খুলনা বিভাগের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২৫৭ রান।

আট নম্বরে নেমে ১০১ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৭২ রানে অপরাজিত আছেন মিরাজ। ১৮৩ বলে ৮ চারে ৭৬ রান করেন ইমরুল কায়েস।

আগের রাউন্ডে ব্যাটিংয়ে একমাত্র ইনিংসে মিরাজ করেছিলেন ৬৭ রান। হাত ঘুরিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টিসহ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। প্রথম তিন রাউন্ডে সব মিলিয়ে তার উইকেট ২২টি।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই অমিত মজুমদারকে হারায় খুলনা। এক ঘণ্টার বেশি সময় উইকেটে কাটিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি এনামুল হক বিজয় (৫৯ বলে ২৩)।

একই ওভারে এনামুলকে ফেরানোর পর তুষার ইমরানকে (০) এলবিডব্লিউ করে দেন স্পিনার সোহরাওয়ার্দী শুভ। অভিজ্ঞ তুষারের এবারের লিগে বাজে সময় দীর্ঘ হলো আরও। 

ইনিংস বড় করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুনও। ৯১ বলে ১৯ রান করা খুলনা অধিনায়ককে এলবিডব্লিউ করে দেন পেসার আলাউদ্দিন বাবু। টিকতে পারেননি নাহিদুল ইসলাম।

ইমরুল ফিফটি তুলে নেন ১২৬ বলে। সেঞ্চুরির পথে থাকা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান আলাউদ্দিন। জিয়াউর রহমানকে (১০) বোল্ড করে দেন আব্দুর রহমান।

নবম উইকেটে রায়হান উদ্দিনের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটিতে দলের স্কোর দুইশ পার করেন মিরাজ। ফিফটি করেন তিনি ৭৬ বলে। রায়হান ২২ রান করে ফেরার পর আব্দুল হালিমকে নিয়ে দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন মিরাজ। দ্বিতীয় দিন তিনি ইনিংসটা কতদূর টেনে নিতে পারেন, সেটিই দেখার।

রংপুরের হয়ে এদিন ৩টি করে উইকেট নেন আলাউদ্দিন ও সোহরাওয়ার্দী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৫৭/৯ (অমিত ১, এনামুল ২৩, ইমরুল ৭৬, তুষার ০, মিঠুন ১৯, নাহিদুল ৮, জিয়াউর ১০, মিরাজ ৭২*, মৃত্যুঞ্জয় ১২, রায়হান ২২, হালিম ০*; আলাউদ্দিন ১৭-৫-৫৪-৩, আরিফুল ১৩-২-৩২-১, নাসির ১১-৫-২৩-০, সোহরাওয়ার্দী ২৮-৬-৬৯-৩, আব্দুর রহমান ১৮-২-৫৮-২, তানবীর ২-০-১০-০, নাঈম ১-১-০-০)