চতুর্থ মেয়াদে নাজমুলের তিনটি ‘টপ প্রায়োরিটি’

প্রায় ৯ বছর বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করার পর নাজমুল হাসান অনুভব করছেন, অনেক কাজ করার এখনও বাকি। চতুর্থ মেয়াদে বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বলছেন, সামনের সময়টুকুই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। নতুন মেয়াদে এগিয়ে যাওয়ার পথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের তিনটি ক্ষেত্রও ঠিক করে ফেলেছেন তিনি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2021, 02:49 PM
Updated : 7 Oct 2021, 02:49 PM

বিসিবির নির্বাচনে বুধবার যৌথভাবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বোর্ড পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বোর্ড সভাপতিও নির্বাচিত হন নাজমুল হাসান। এই নিয়ে টানা তিন মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হলেন তিনি। এর আগে এক বছর দায়িত্বে ছিলেন সরকারের মনোনয়নে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এত লম্বা সময় শীর্ষ কর্তার দায়িত্বে ছিলেন না আর কেউ।

পুরনো দায়িত্ব নতুন করে নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল বললেন, এবারের মেয়াদে আগের চেয়েও কঠিন পরীক্ষা তাদের অপেক্ষায়।

“আজকে নতুন বোর্ড পরিচালকদের প্রতি আমার একটা শর্ট ব্রিফিং ছিল। আমি বলেছি, আমাদের অনেক কাজ বাকি। অনেক কাজ… এতদিন যে কাজ করেছি, অনেক মনে করেন বা কেউ যদি মনে করেন, অনেক কিছু করে ফেলেছি, এটা হবে সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ সবচেয়ে কঠিন সময় সামনে আসছে।”

“এখনকার সময়টা আগের চেয়ে অনেক কঠিন হবে। কারণ, এখন আমরা একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে, আমাদের প্রত্যাশা বেড়েছে, ক্রিকেটারদের প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি পুরো ভিন্ন।”

এই অনেক কাজের মধ্যে আপাতত তিনটি দিকে শুরুতে নজর দিতে চান নাজমুল। একটি একটি করে সেই লক্ষ্যগুলোর কথা শোনালেন তিনি।

‘তিনটা টপ প্রায়োরিটি কাজ আমরা ভাগ করেছি। একটা হচ্ছে, শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম (পূর্বাচলে)। যত দ্রুত সম্ভব, এটা চালু করতে হবে। কারণ বিশ্বকাপে যে অংশগ্রহণের কথা বলেছি আমরা (স্বাগতিক হওয়ার লড়াই), ওখানে এটা দেখানো আছে যে ওই সময়ের মধ্যে এটা কমপ্লিট করব। এটা থাকতেই হবে, এটা ছাড়া পারব না আমরা।”

“নম্বর দুই, গঠনতন্ত্র। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। গঠনতন্ত্রে নির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তন আমাদের আনতে হবে। সব বোর্ড পরিচালককে আমি বলেছি, গঠনতন্ত্রে কোথায় কোন পরিবর্তন আনা দরকার, তাদের যদি কোনো মতামত থাকে, পরের বোর্ড সভায় যেন উপস্থাপনা দেওয়া হয়। আমার কিছু আছে (চাওয়া)।”

বোর্ড সভাপতি নিজের চাওয়ায় আছে ক্লাবগুলোকে গঠনতন্ত্রে আরও গুরুত্ব দেওয়া। গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ক্লাবের ভোট ও অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন ।

“এতগুলো ক্লাব আমাদের এখানে (বোর্ডে) অংশগ্রহণ করে, কিন্তু ক্লাবগুলোর ভোট নাই (বেশির ভাগই)। অথচ এমন সব নাম দেখি, যারা ভোটার, কাউন্সিলর দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে ক্রিকেটের কোনো সম্পর্কই নাই। আমি এই ৮-৯ বছরে তাদের কোনো লোক ক্রিকেটে আছে বলে দেখিনি। এটা একটা উদাহরণ দিলাম, যেখানে পরিবর্তন আসা উচিত। আরও অনেক কিছু আছে, যেখানে নজর দেওয়া উচিত আমাদের।”

তৃতীয় যে ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বললেন নাজমুল, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেটা নিয়ে আলোচনা দুই দশকের বেশি সময় ধরে। আগের সব বোর্ড এটার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ পর্যন্ত করেনি। নাজমুল নিজেও আগের মেয়াদগুলোতে কয়েক দফায় করতে চেয়ে এখনও পারেননি। তবে সেখানেও তিনি বললেন গঠনতন্ত্রের বাধার কথা।

“ফাইনালি, গঠনতন্ত্রে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কথা আছে। আমরা যে এটা করব বলে আসছি এতদিন ধরে, গঠনতন্ত্রে কিছু জায়গা আছে, যেটা সাংঘর্ষিক। গঠনতন্ত্রের এই জিনিসটিও দেখতে হবে, এটার সঙ্গে সম্পর্কিত যা।”

নাজমুল হাসানের মেয়াদের ৯ বছরে মাঠের ক্রিকেটের পারফরম্যান্সে ভালো-মন্দ নানা ছবি থাকলেও সবচেয়ে বড় অভিযোগের জায়গা অবকাঠামো নিয়ে। এত দীর্ঘ সময় দায়িত্বে থেকেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন তারা খুব বেশি করতে পারেননি। নতুন মেয়াদে অবকাঠামো নিয়ে কাজ করার প্রুতিশ্রুতি দিলেন তিনি।

“আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা করতে গিয়েই অবকাঠামো নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। ক্রিকেট একাডেমি এরমধ্যেই এক জায়গায় হয়েছে, আরেক জায়গায় হচ্ছে। আর কোথায় কোথায় হবে, আমরা একটা প্রস্তাব আজকেই করেছি যে এসব বিবেচনা করা হোক দ্রুত।”

“ওরা প্রস্তাব করেছে, ডেভেলপমেন্টের জন্য, বয়সভিত্তিক পর্যায়ের জন্য আলাদা একাডেমি চাই। তখন আমি অন দা স্পট বলেছি, আমার চিন্তা এরকম যে, চট্টগ্রামে হচ্ছে, সিলেটে আছে, খুলনায় হবে, এরকম সারা বাংলাদেশে ৮-১০টা একাডেমি আমরা করছি, যা হবে বিশ্বমানের, যতটুকু সম্ভব খুব ভালো একাডেমি। ওখান থেকে তিনটা থাকবে ডেডিকেটেড, ব্যাটিংয়ের জন্য একটা ফাস্ট বোলারদের জন্য একটা, স্পিনারদের জন্য একটা। ওখানে আমাদের দেশি-বিদেশি কোচ রেডি থাকবে, ডেভেলপমেন্টের জন্য। অবকাঠামোর উন্নতি প্রচুর করতে হবে, যদি আমরা পরের পর্যায়ে যেতে চাই।”

এছাড়াও আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে পাঁচে নেওয়া, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে উন্নতিসহ আরও অনেক লক্ষ্যের কথা নাজমুল বলেছেন, যেসব তিনি বলে আসছেন বছরের পর বছর ধরেই।