আইপিএলে মঙ্গলবার ২ রানে জিতেছে রাজস্থান। তাদের ১৮৫ রানের জবাবে পাঞ্জাব ৪ উইকেটে করতে পারে ১৮৩।
অথচ নিকোলাস পুরান ও এইডেন মারক্রামের বিস্ফোরক জুটিতে জয়টা ছিল পাঞ্জাবের নাগালেই। শেষের আগের ওভারে মুস্তাফিজ যখন বোলিংয়ে এলেন, ১৭ বলে ৩০ রানে ব্যাটিংয়ে পুরান, ১৬ বলে ২৩ রানে মারক্রাম।
বাঁহাতি পেসারের প্রথম তিন বলে পুরান নিতে পারেন কেবল এক রান। চতুর্থ বলে আউট হতে পারতেন মারক্রাম। ডান দিকে ঝাঁপিয়েও বল গ্লাভসে জমাতে পারেননি সাঞ্জু স্যামসন, আসে এক রান। পরের দুই বলে দুটি সিঙ্গেল।
শেষ ওভারে দরকার ৪। কার্তিকের প্রথম দুই বলে মারক্রাম নেন এক রান। পরের চার বলে আর রানই নিতে পারেনি পাঞ্জাব!
তৃতীয় বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন পুরান। পরের বলে কোনো রান নিতে না পারা দিপক হুডা পঞ্চম বলে ক্যাচ দেন উইকেটকিপারকে। শেষ বল ব্যাটেই লাগাতে পারেননি ফাবিয়ান অ্যালেন। অবিশ্বাস্য জয়ের উল্লাসে মাতে রাজস্থান।
৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক ২০ বছর বয়সী পেসার কার্তিক। ২ উইকেট পেতে পারতেন মুস্তাফিজও। কিন্তু তার বলে ক্যাচ পড়েছে দুটি। ৪ ওভারে তিনি দেন ৩০ রান।
এদিন বাংলাদেশের এই পেসার বোলিং করেছেন মাথা খাটিয়ে। গতি পরিবর্তন করে সারাক্ষণ ভাবনায় রেখেছেন ব্যাটসম্যানদের। লেংথেরও পরিবর্তন করেছেন। ওয়াইড ইয়র্কারের চেষ্টা দেখা গেছে কয়েকবার। ক্রিজও ব্যবহার করেছেন দারুণভাবে। ১৯তম ওভারে ওয়াইড ক্রিজ থেকে অ্যাঙ্গেল তৈরি করে পুরানকে পরীক্ষায় ফেলেন তিনি।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাঞ্জাবের রান তাড়ায় ইনিংসের প্রথম ওভারে মুস্তাফিজ দেন স্রেফ ৪ রান। চেতন সাকারিয়ার পরের ওভারে আউট হতে পারতেন লোকেশ রাহুল। পয়েন্টে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি এভিন লুইস। জীবন পেয়ে সাকারিয়ার পরের ওভারে পরপর তিন বলে রাহুল মারেন একটি চার ও দুটি ছক্কা।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মুস্তাফিজ বোলিংয়ে ফিরে দ্বিতীয় বলে দারুণ ডেলিভারিতে পরাস্ত করেন মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে। পরের বলে বাউন্ডারি হজম করলেও চতুর্থ বলে পেতে পারতেন উইকেট। কিন্তু শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ ফেলেন সাকারিয়া। এবারও ব্যাটসম্যান রাহুল!
আইপিএল ইতিহাসে এর আগে পাওয়ার প্লের মধ্যে তিনবার জীবন পেয়েছিলেন আর কেবল একজনই, ২০০৯ আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে সেই সময়ের কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সানি সোহেল ।
এই ওভারে মুস্তাফিজ খরচ করেন ৮ রান।
ঝড় তুলে মায়াঙ্ক ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৪ বলে, ৬ চার ও ২ ছক্কার সাহায্যে। দশম ওভারেই বিনা উইকেটে শতরান স্পর্শ করে পাঞ্জাব।
দ্বাদশ ওভারে রাহুলকে ফিরিয়ে ১২০ রানের জুটি ভাঙেন সাকারিয়া। এক ওভার পর মায়াঙ্ককে ফিরিয়ে দেন রাহল তেওয়াতিয়া। রাহুল ৩৩ বলে ৪৯, আর মায়াঙ্ক ৪৩ বলে করেন ৬৭ রান।
আবার যখন বোলিংয়ে ফেরেন মুস্তাফিজ, ২৪ বলে পাঞ্জাবের দরকার কেবল ৩২ রান। প্রথম তিন বলে একটি করে চার ও ছক্কা মারেন পুরান। ওভার থেকে আসে ১৪ রান।
তবে নিজের তৃতীয় ওভারে দারুণ বোলিংয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। আর শেষ ওভারে কার্তিকের দারুণ সব ইয়র্কারের কোনো জবাবই পায়নি পাঞ্জাব।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১ ওভারে শতরান স্পর্শ করা রাজস্থান ছুটছিল দুইশর পথে। কিন্তু শেষ ৬ ওভারে ৪৯ রান তুলতে দলটি হারায় ৭ উইকেট।
এভিন লুইস ও যাশাসবি জয়সওয়ালের ব্যাটে ভালো সূচনা পায় রাজস্থান। লুইসের (২১ বলে ৩৬) উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে তারা তোলে ৫৭ রান।
অধিনায়ক স্যামসন অবশ্য টিকতে পারেননি। চারে নেমে ১৭ বলে ২৫ রান করে বাউন্ডারিতে অ্যালেনের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন লিয়াম লিভিংস্টোন। ফিফটির খুব কাছে গিয়ে থামেন জয়সওয়াল। ৩৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪৯ রান করেন তিনি।
পাঁচে নেমে মাত্র ১৭ বলে ৪ ছক্কা ও ২টি চারে ৪৩ রান করেন মহিপাল লমরোর। কিন্তু শেষ দিকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি পারাগ, রাহুল তেওয়াতিয়া, মরিসরা। তাদের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।
ইনিংসের শেষ দুই বলে দুটিসহ ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন আর্শদিপ সিং। ২১ রানে মোহাম্মদ শামির প্রাপ্তি ৩টি। তবে শেষে সব আলো কেড়ে নেন কার্তিক।
আসর স্থগিত হওয়ার আগে রাজস্থানের সাত ম্যাচের সবকটি খেলে মুস্তাফিজ নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। রান দেন ওভার প্রতি ৮.২৯। এবার ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় উইকেট না পেলেও দলের জয়ে অবদান রাখলেন ঠিকই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজস্থান রয়্যালস: ২০ ওভারে ১৮৫ (লুইস ৩৬, জয়সওয়াল ৪৯, স্যামসন ৪, লিভিংস্টোন ২৫, মহিপাল ৪৩, পারাগ ৪, তেওয়াতিয়া ২, মরিস ৫, সাকারিয়া ৭, কার্তিক ১, মুস্তাফিজ ০*; শামি ৪-০-২১-৩, ইশান ৪-০-৩৯-১, হুডা ২-০-৩৯-১, আর্শদিপ ৪-০-৩২-৫, রশিদ ৩-০-৩৫-০, হারপ্রিত ৩-০-১৭-১)
পাঞ্জাব কিংস: ২০ ওভারে ১৮৩/৪ (রাহুল ৪৯, মায়াঙ্ক ৬৭, মারক্রাম ২৬*, পুরান ৩২, হুডা ০, অ্যালেন ০*; মুস্তাফিজ ৪-০-৩০-০, সাকারিয়া ৩-০-৩১-১, কার্তিক ৪-০-২৯-২, মরিস ৪-০-৪৭-০, তেওয়াতিয়া ৩-০-২৩-১, মহিপাল ১-০-৭-০, পারাগ ১-০-১৬-০)
ফল: রাজস্থান রয়্যালস ২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কার্তিক তিয়াগি।