নাসুমের ফ্লাইটে আশার ঝিলিক

নাসুম আহমেদ ঝুলিয়ে দিলেন বল। পা বাড়িয়ে ড্রাইভ করতে চাইলেন হেনরি নিকোলস। বল তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বিশাল টার্ন করে উড়িয়ে দিল বেলস। পরের বল আবার ভাসিয়ে দিলেন নাসুম। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম যেন পা বাড়ালেন সম্মোহিতের মতো। বল টার্ন করে লাফিয়ে গ্লাভসে ছোবল দিয়ে আশ্রয় নিল নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। দুটি ডেলিভারিতে নাসুম যেন জানান দিলেন, তিনি এখন এই দলের অংশ!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2021, 04:36 PM
Updated : 8 Sept 2021, 04:36 PM

শেষ লাইনটায় অবশ্য খটকা লাগতে পারে অনেকের। এর আগে কী তাহলে তিনি দলের অংশ ছিলেন না! অস্ট্রেলিয়া সিরিজে টানা পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন, প্রথম ম্যাচে চার উইকেটও নিয়েছেন। এই সিরিজেরও টানা চার ম্যাচ খেললেন। তাকে এখন একাদশের নিয়মিত একজনই বলা যায়।

কিন্তু নিয়মিত মানেই সবসময় অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। নিজের ছাপ রাখা, আলাদা জায়গা তৈরি করে নেওয়া ও দলের নির্ভরতা হয়ে ওঠার ব্যাপার তো থাকে! নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্সে নাসুম বার্তাটা ছড়িয়ে দিতে পারলেন, দল এখন তার ওপর নির্ভর করতেই পারে।

একটা ম্যাচের পারফরম্যান্সেই সেটা হয়নি। তবে সংশয়ের যে জায়গাটুকু ছিল, আপাতত তা দূর করতে পেরেছেন তিনি এই ম্যাচে। চার ওভারে মেডেন দুটি। ১০ রানে উইকেট ৪টি। ১৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। সেটা শুধু সংখ্যায় নয়, মানেও।

তার বোলিং ফিগার এমনিতে ম্যাচের পর ম্যাচ ধরে যথেষ্টই ভালো। কিন্তু স্কোরকার্ডে ২২ গজের সত্যিকার পারফরম্যান্সের প্রতিফলন সবসময় পড়ে না। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম ম্যাচেই যেমন, ৪ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছিলেন। কিন্তু বোলিং খুব একটা ভালো করেননি। শর্ট বলে উইকেট পেয়েছেন। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেট পেয়েছেন। বেশির ভাগই ছিল মূলত ব্যাটসম্যানদের উপহার।

তার বোলিংয়ে মূল ঘাটতির জায়গাও ছিল সেটি। প্রায় প্রতি ওভারেই শর্ট বল দু-একটি করা। লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে না পারা। টানা এক জায়গায় বল করতে না পারা। ভালো ডেলিভারি করে চাপটা তৈরি করতেই আবার আলগা বল করে চাপ সরিয়ে দেওয়া। একজন আব্দুর রাজ্জাক যেটা দিনের পর দিন করেছেন কিংবা কিছুদিন করেছেন আরাফাত সানি, সেই কাজটিই করতে পারছিলেন না নাসুম।

উইকেট পড়তে পারার জায়গাতেও খানিকটা খামতি ফুটে উঠছিল তার বোলিংয়ে। মন্থর ও টার্নিং উইকেটের মৌলিক কাজ ফ্লাইট দেওয়া ও ধীরে বল করা। নাসুম মাঝেমধ্যেই জোরে বোলিং করে সহজ করে তুলছিলেন ব্যাটসম্যানদের কাজ।

অবশেষে এই ম্যাচে নাসুম দেখাতে পারলেন পরিপূর্ণ প্যাকেজ। এ দিন তার নিয়ন্ত্রণ ছিল দারুণ। বল রেখেছেন আদর্শ জায়গায়। পাওয়ার প্লেতে ও পরে, বল করেছেন ব্যাটসম্যান বুঝে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সত্যিকারের বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনারের মতোই ফ্লাইট ও লুপে বিভ্রান্ত করতে পেরেছেন ব্যাটসম্যানদের। ঠিক যে নাসুমকে প্রয়োজন বাংলাদেশ দলের!

আগের ম্যাচগুলোর সঙ্গে তার এই ম্যাচের বোলিংয়ের পার্থক্য নাসুম নিজে তুলে ধরলেন ম্যাচের পর। বললেন স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথের অবদানের কথাও।

“এডজাস্টমেন্ট বলতে, সিমে একটু হিট করেছি বেশি। সিমে বল করার চেষ্টা করেছি। মাঝেমধ্যে দু-একটা বল ক্রস সিমেও করেছি। উইকেট একটু টার্নিং ছিল, চেষ্টা ছিল একটা জায়গায় বল করার।”

“কোচও আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন। তার সঙ্গে আমি অনেক কিছু শেয়ার করি, তিনিও আমার সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করেন। কালকে অনুশীলনে কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলছিলেন, এই উইকেটে আরেকটু আস্তে বল করলে ভালো হয়। কালকে ওইটাই অনুশীলন করেছিলাম আর আজকে তা ম্যাচে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি।”

নিজেকে এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করছেন কিনা, সেই প্রসঙ্গ অবশ্য এড়িয়ে গেলেন নাসুম। তবে দল যে তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, এটুকু জানাতে ভুললেন না।

“আসলে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়েছি কিনা, এখনও জানি না। তবে দল থেকে অনেক সাপোর্ট পাচ্ছি। বিশেষ করে, অধিনায়ক ও সিনিয়র ক্রিকেটাররা আমাকে অনেক সমর্থন করছেন। এটায় আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমি ভালোও করছি।”