ইংল্যান্ড নয়, ইংলিসের ‘ঘর’ এখন অস্ট্রেলিয়া

জন্ম, বেড়ে ওঠা ও ক্রিকেটের পাঠ শুরু ইংল্যান্ডে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় জশ ইংলিস এখন আর ইংলিশ নন, একজন অস্ট্রেলিয়ান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া দলে ঠাঁই হয়েছে তার। যদিও ইংল্যান্ডে তার শেকড় এবং এখনও ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত মুখ, তবু দ্বৈত সত্ত্বার কোনো টানাপোড়েন নিজের ভেতরে নেই তার। এই কিপার-ব্যাটসম্যান জানিয়ে দিলেন, অস্ট্রেলিয়াই তার আপন হয়ে থাকবে আজীবন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2021, 05:51 AM
Updated : 30 August 2021, 08:34 AM

অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে একমাত্র নতুন মুখ ইংলিস। যদিও খুব বড় চমক তা নয়। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ও দুর্দান্ত কিপিংয়ে জাতীয় দলের দুয়ারে কড়া নাড়ছিলেন তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই।

ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স তো বটেই, তাকে নিয়ে অনেকের কৌতূহলের মূল কারণ তার অতীতও। ইংলিশ বাবা-মায়ের ঘরে ইংলিসের জন্ম ইংল্যান্ডের লিডসে। ক্রিকেট শিখেছেন ইয়র্কশায়ারের একাডেমিতে। এই কাউন্টির বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন চার মৌসুম। তার স্বপ্নে থাকার কথা ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা।

তবে বাস্তবতার লিখন ছিল অন্যরকম। তার বাবা-মা ছুটি কাটাতে প্রায়ই যেতেন অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটিকে তাদের এতটা ভালো লেগে যায় যে, সেখানেই থিতু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ইংলিসের বয়স যখন ১৪, পুরো পরিবার পাকাপাকিভাবে পাড়ি জমায় অস্ট্রেলিয়ায়।

তার পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কাঠামোতেই নিজেকে গড়ে তোলা, এগিয়ে চলা এবং এখন অস্ট্রেলিয়ার হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সীমানায়। ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটকে বললেন, ইংল্যান্ড নিয়ে বিন্দুমাত্র পিছুটান তার নেই।

“সাধারণত বলা হয়, ছেলেবেলায় ক্রিকেট শুরুর সময় সবাই দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে। আমার জন্য ব্যাপারটি সেরকম ছিল না। আমি স্রেফ ক্রিকেট খেলতে উপভোগ করতাম ও সতীর্থদের সঙ্গে মজা করতাম।”

“অস্ট্রেলিয়াই এখন আমার ঘর এবং বাকি জীবনও এটাই থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে আমি অবিশ্বাস্যরকমের গর্বিত।”

দিন দশেক আগে, বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার খবর যখন জানলেন, ইংলিস তখন ইংল্যান্ডেই। ‘দা হানড্রেড’ টুর্নামেন্টে খেলছিলেন লন্ডন স্পিরিটের হয়ে। প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলির ফোন যখন পেলেন, তখন তিনি টিম বাসে। নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছিলেন কার্ডিফে। সতীর্থদের কলতানে তখন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না তিনি। বেইলিকে স্রেফ একটি বার্তা পাঠিয়ে জানান যে, সুযোগমতো কল ব্যাক করবেন।

ভ্রমণের বাকি সময়টা তার কেটেছে রোমাঞ্চ, উৎকণ্ঠা, শঙ্কা, এমন নানা অনুভূতির দোলাচলে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করা হবে এই সময়টায়, তিনি জানতেন। কিন্তু ফোন পাওয়া মানেই তো দলে জায়গা পাওয়া নয়! ইংলিস শোনালেন তার সেই সময়কার ভাবনা।

“ভাবছিলাম… তিনি জানাবেন যে আমি দলে আছি কিংবা নেই। তবে সত্যি বলতে, মনে হচ্ছিল যে, এবার হবে না (সুযোগ মিলবে না)… বিশ্বকাপ দল বলে কথা…।”

মাঠে যাওয়ার পর একটু ফাঁকা জায়গা পেয়ে ফোন করলেন বেইলিকে। জানতে পারলেন স্বপ্ন পূরণের খবর। এরপর? ইংলিস কথায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেন তার সেই সময়ের অনুভূতির ঝড়।

“হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, কথা বলতে পারছিলাম না। সত্যি বলতে, কয়েক মিনিট ধরে বুঝে উঠতে পারছিলাম না, আমার কী বলা উচিত। তবে সত্যিই অসাধারণ ব্যাপার। আমি আকাশে উড়ছিলাম।”

“জানতাম যে গত বছর দুয়েক খুব ভালো খেলেছি। কিন্তু এটাও মাথায় ছিল, ভালো কিপার-ব্যাটসম্যান অনেক ছিল আশেপাশে। ওই ফোন কল এবং দলে জায়গা পাওয়া আমাকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, আমার খেলা যথেষ্টই ভালো।”

তার খেলা যে যথেষ্ট ভালো, এটা মাঠের পারফরম্যান্সে বারবার দেখিয়েছেন ইংলিস। ইংল্যান্ডের চলতি টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে তিনি এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোরার। ১৪ ইনিংসে ৫৩১ রান করেছেন ২ সেঞ্চুরিতে। গড় ৪৮.২৭, স্ট্রাইক রেট ১৭৫.৮২।

দা হানড্রেড-এ যদিও এতটা বিধ্বংসী হতে পারেননি। তার পরও ১৩৬.২২ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৭৩ রান। দলে জায়গা পাওয়ার খবর পাওয়ার দিন ওই ম্যাচে খেলেন ৪৫ বলে ৭২ রানের ইনিংস।

এসবের আগেই তিনি মাতিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সবশেষ মৌসুমে সব সংস্করণেই। বড় দৈর্ঘ্যের আসর শেফিল্ড শিল্ডে ৮ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরিতে ৫৮৫ রান করেছেন ৭৩.১২ গড়ে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ছাপ রাখেন এখানেও, স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৫.০২!

এছাড়াও ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্টে ৫ ইনিংসে ২০৯ রান করেছেন ৪১.৮০ গড় ও ১২৩.৬৬ স্ট্রাইক রেটে। বিগ ব্যাশে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে রান ৪১৩। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার স্ট্রাইক রেট ১৫১.৬১।

ওপেনিং থেকে মিডল অর্ডারের সব জায়গায় তিনি ব্যাট করতে পারেন। প্রথাগত শটের পাশাপাশি স্কুপ, রিভার্স স্কুপ, র‌্যাম্পের মতো শট খেলেন নিয়মিত। তার কিপিংও দুর্দান্ত।

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ায় বড় ভূমিকা আছে তার আরেকটি দক্ষতার। স্পিন বোলিং খেলায় দারুণ সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন তিনি নানা সময়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যা কাজে লাগতে পারে প্রবলভাবে। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিং আরও মাস তিনেক আগেই বলেছিলেন, স্পিন ভালো খেলার কারণে ইংলিসকে বিশ্বকাপ দলে রাখা উচিত।