অধিনায়কদের বিশ্বকাপ ভাবনা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দুয়ারে। গ্রুপিং, সূচি সবই হয়ে গেছে, এখন শুধু মাঠের লড়াইয়ের অপেক্ষা। আগামী ১৭ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হবে আসর। কোভিড-১৯ মহামারীর কঠিন পরিস্থিতিতে আয়োজিত হলেও প্রতিযোগিতাটিতে অংশ নিতে মুখিয়ে আছে প্রতিটি দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2021, 12:47 PM
Updated : 17 August 2021, 01:23 PM

করোনাভাইরাসের ছোবলে এক বছর পিছিয়ে হচ্ছে বৈশ্বিক এই আসর। প্রায় এক মাসের টুর্নামেন্টের ফাইনাল হবে ১৪ নভেম্বর।

টুর্নামেন্টটি নিয়ে আইসিসির ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেছেন দুই বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড, একবার করে শিরোপা জেতা পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম, ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যানসহ অংশ নেওয়া দলগুলোর অধিনায়করা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড

“শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে বছরের শেষ দিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাঠে নামতে আমরা রোমাঞ্চিত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দারুণ রোমাঞ্চকর আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তো এটা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বতাপূর্ণ, ক্রিকেটাররা প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে দর্শনীয় একটি আসরের আশা করছি আমরা।”

“সুপার টুয়েলভে আমাদের গ্রুপটি দারুণ, যেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। মাঠের লড়াই শুরু করতে তর সইছে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা সবসময়ই রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলে। আমি নিশ্চিত ক্যারিবিয়ান ও পুরো বিশ্বে আমাদের সমর্থকরা মাঠে আমাদের দেখার জন্য অধীর প্রতীক্ষায় আছে।”

পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম

“টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা বহুল প্রতীক্ষিত বৈশ্বিক টুর্নামেন্টটির প্রস্তুতিতে আমাদের এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। আমরা এই সময়টাকে কাজে লাগাব ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলে।  আমাদের লক্ষ্য কেবল ছোট ছোট বিষয়গুলোকে ঠিক করাই থাকবে না, যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জিততেও চাইব আমরা। যাতে এই জয়ের ধারাবাহিকতা ও ছন্দ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বয়ে নিয়ে যেতে পারি।”

“পাকিস্তানের জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১ ঘরের আসরের মতো, যেহেতু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আরব আমিরাত আমাদের ভেন্যু ছিল। আরব আমিরাতে আমরা কেবল আমাদের প্রতিভাকে লালন ও দলের উন্নতি করিনি, এই কন্ডিশনে শীর্ষ দলগুলোকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরও হয়েছি।”

“দলের সব খেলোয়াড় রোমাঞ্চিত, অনুপ্রাণিত ও উৎসাহী। এই টুর্নামেন্টকে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ হিসেবে দেখছেন খেলোযাড়রা। আমাদের জন্য উপযুক্ত কন্ডিশনে সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ হিসেবে দেখছে সবাই।”

“আমার দিক থেকে, পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে এটা আমার প্রথম আইসিসির বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্ট। আমি ২০১৭ সালে (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে) সাফল্য পেয়েছি, ২০১৯ সালে (বিশ্বকাপে) হতাশ হয়েছি যখন আমরা দুই ফাইনালিস্টকে লিগ ম্যাচে হারানোর পরও সেমি-ফাইনালে সামান্য পয়েন্টের জন্য জায়গা করে নিতে পারিনি। পারফরম্যান্স দিয়ে দলকে অনুপ্রাণিত করাই আমার লক্ষ্য, যাতে আমরা এশিয়াতে আইসিসির মেজর ইভেন্ট জেতা প্রথম পাকিস্তান দল হতে পারি।”

ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান

“ছেলেদের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি দারুণ হবে। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মান দ্রুত উন্নতি করছে এবং প্রতিটি দেশেরই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে। লড়াই শুরু করতে তর সইছে না আমাদের।”

নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন

“মহামারীর কারণে বিশ্বের খেলাধুলায় অনেক বিঘ্ন ঘটার পর মনে হচ্ছে, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে অনেক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এটা সব সময়ই দারুণ প্রতিযোগিতামূলক আসর হয়ে থাকে, যেখানে প্রতিটি দলেরই আছে ম্যাচ-জয়ী খেলোয়াড় যে ম্যাচ খুব দ্রুত ঘুরিয়ে দিতে পারে।”

“আমার মতে, অভিজ্ঞ ও নতুন দারুণ কিছু প্রতিভাভাবান খেলোয়াড় নিয়ে গড়া আমাদের দলটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। আরব আমিরাতে হওয়া গত বছরের আইপিএলে আমরা দেখছি, এখানের উইকেট টুর্নামেন্টের সময় গড়ানোর সঙ্গে পরিবর্তন হতে পারে। পেস ও স্পিন দুই বোলিংই এই কন্ডিশনে কাজে দেয়।”

“এখন পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নিয়ে আমাদের গ্রুপটি শক্তিশালী। সব দলই শক্তিশালী, ফলে রোমাঞ্চকর একটি প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে। আমি জানি, ছেলেরা আরেকটি বৈশ্বিক আসরের জন্য মুখিয়ে আছে এবং এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বৈশ্বিক মঞ্চে নিউ জিল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করতে অপেক্ষায় আছে।”

দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা

“২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি জাতি হিসেবে প্রোটিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের স্বপ্ন পূরণে এই আসর আমাদের জন্য তিনটি সুযোগের মধ্যে প্রথম।”

“আমরা দারুণ একটি গ্রুপে আছি। আর এই গ্রুপের সবার বিপক্ষেই আমরা আমরা ফাইনালে ওঠার ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে লড়াইয়ে নামব। আমাদের দলটিও দারুণ, যেটা গড়া হয়েছে নতুন কিছু প্রতিভা দিয়ে, সঙ্গে আছে অভিজ্ঞদের কয়েকজন যারা তরুণদের পথ দেখাবে।”

শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দাসুন শানাকা

“টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এর খেলোয়াড়, সমর্থক এবং সব অংশীদার যারা খেলাটি পছন্দ করে এবং ভালবাসে তাদের সবার জন্য সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ একটি উপলক্ষ। আমি নিশ্চিত সবাই এই টুর্নামেন্টের জন্য অপেক্ষা করছে, যেমনটা আমরা দল হিসেবে করছি। এই ধরনের টুর্নামেন্ট খেলাটিকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে। কারণ, এর অল্প সময়ের লড়াইয়ের আবহ ও রোমাঞ্চ সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।”

“শ্রীলঙ্কার এমন কিছু খেলোয়াড় আছে যারা খুব সহজে টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিতে পারে ও ফল এনে দিতে পারে। আমাদের বোলিং শক্তিশালী হচ্ছে, ব্যাটিংয়ে এমন কিছু খেলোয়াড় আছে যারা ইনিংস গড়ে দিতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গতি এনে দিতে সক্ষম। যদিও আমরা ফিল্ডিংয়েও আমরা মনোযোগ বাড়াচ্ছি।”

অস্ট্রেলিয়ার কিপার-ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স কেয়ারি (চোটের কারণে বর্তমানে বাইরে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ)

“আমার কাছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দারুণ রোমাঞ্চকর। আমরা এটার জন্য অতিরিক্ত ১২ মাস অপেক্ষা করেছি। এখন এর সূচি এবং অস্ট্রেলিয়ার ড্র (কবে ও কাদের বিপক্ষে খেলবে) দেখাটা দারুণ ব্যাপার।”

“ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনো সময়ই খেলতে পারা উত্তেজনাপূর্ণ। আমরা জানি, তারা গত কয়েক বছর ধরে সাদা বলের সংস্করণে কতটা প্রভাবশালী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সম্প্রতি খেলার পর আমরা বুঝতে পেরেছিল তাদের বিপক্ষে লড়াইও কতটা কঠিন হতে পারে। আমরা এই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।”

বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ

“আমাদের শক্তির জায়গা দলের অলরাউন্ডাররা এবং বোলিং বিভাগ। পাশাপাশি আমাদের ব্যাটিংও ভালো এবং দলের ব্যালান্স দারুণ। পাঁচ-ছয়জন অলরাউন্ডার আছে আমাদের, যারা ব্যাট-বল দুটিতেই অবদান রাখতে পারে।”

“এই মুহূর্তে আমাদের ফাস্ট বোলাররা অবিশ্বাস্য পারফর্ম করছে। স্পিন তো বরাবরই আমাদের শক্তি। তারা যদি কয়েকটি ম্যাচে নিজেদের মেলে ধরতে পারে, আশা করি আমরা ভালো কিছু ফল পাব।”

ওমান অধিনায়ক জিশান মাকসুদ

“টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমাদের দেশে যারা খেলবে, সব দলকে আমি আন্তরিক স্বাগত জানাই। ঘরের মাঠে আইসিসির বৈশ্বিক আসরে খেলা আমাদের জন্য অসাধারণ এক সুযোগ। স্বাগতিক ও খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের সামর্থ্য কতটা, তা বিশ্বকে দেখানোর বড় সুযোগ এটি।”

নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক পিটার সিলার

“এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। টুর্নামেন্টে ভালো অবস্থায় থাকাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের মূল লক্ষ্য, গ্রুপের প্রথম দুটি স্থানে থাকা, তাহলে আমরা পরবর্তী বিশ্বকাপে (সুপার ১২) খেলার সুযোগ পাব।”

নামিবিয়া অধিনায়ক জেরার্দ ইরাসমাস

“ক্রিকেট নামিবিয়ার জন্য এটা অনেক বড় এক মঞ্চ। ১৮ বছরের মধ্যে মেজর কোনো টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেয়েছি আমরা। এর গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক। প্রতিযোগিতাটি ক্রিকেট নামিবিয়ার সংগঠনকে ক্রিকেটের মানচিত্রে জায়গা করে দিবে এবং খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের মূল্য দেবে।”

আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি

“বিশ্বকাপে খেলতে পারা আমাদের দলের জন্য খুবই রোমাঞ্চের। দলের অনেক খেলোয়াড়েরই এই অভিজ্ঞতা হয়নি। আমি জানি, তারা খুবই রোমাঞ্চিত। আশা করি, আমরা কিছু ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারব।”

“চাপ সব সময়ই থাকবে। প্রথমবারের মতো আইসিসি আসরে দলকে নেতৃত্ব দিব, আমি খুবই রোমাঞ্চিত। ছেলেরা কীভাবে মানিয়ে নেয়, সেটা দেখতেও মুখিয়ে আছি। একবার বিমানে উঠে গেলে, বিশেষ কিছু করার ভাবনায় ডুবে থাকব আমরা।”

পাপুয়া নিউ গিনি অধিনায়ক আসাদ ভালা

“এটা সম্মানের। বিশেষ করে আমার কাছে, বিশ্বকাপে এই দলকে আমি নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছি। একবারে শুরু থেকে দলের সঙ্গে থাকা, বাছাইপর্বে খেলা, শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হওয়া এবং বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া; দলটির জন্য স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।”

স্কটল্যান্ড অধিনায়ক কাইল কোয়েটজার

“প্রথম রাউন্ডে আমাদের তিনটি বড় ম্যাচ রয়েছে। প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। র‍্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের থেকে উপরে থাকা দলগুলোকে হারানো সব সময়ই দারুণ। তবে সহযোগী দেশ হিসেবে আমরা জানি, প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ এবং র‍্যাঙ্কিংয়ে ওপরে বা নিচে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে খেলা বা জেতা গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনটি বড় ম্যাচ, প্রতিটিই আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান। ”