গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি, রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সের পর যেন ওয়ানডেতে রান করতেই ভুলে গিয়েছিলেন লিটন। আবার জিম্বাবুয়েকে পেয়ে তিনি পেলেন বড় রানের দেখা।
তার আর দশটা ইনিংসের মতো স্ট্রোকের মহড়ায় নান্দনিক সেঞ্চুরি এটি নয়। এদিন তার ব্যাটিংয়ে দেখা যায় লড়াইয়ের ছাপ। নিজের সহজাত প্রবৃত্তির সঙ্গে আপোস করার প্রতিজ্ঞা। পরিস্থিতিকে সম্মান করার পরিণত মানসিকতা। সময় নিজের পক্ষে এলে তা কাজে লাগানো।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে শুক্রবার লিটনের সেঞ্চুরিই বাংলাদেশকে টেনে তোলে বিপর্যয় থেকে। সেঞ্চুরির পরপরই যদিও আউট হয়ে যান ১১৪ বলে ১০২ করে। তবে তার সেঞ্চুরিই দলের ইনিংসের মেরুদণ্ড।
গত বছরের মার্চে সিলেটে ১৭৬ রানের ইনিংসটির পর ৮ ওয়ানডে মিলিয়ে লিটনের মোট রান ছিল ১০১। খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে একাদশে জায়গা হারিয়ে। এই ম্যাচে তাকে আবার ফেরানো হলো একাদশে। জিম্বাবুয়েকে পেয়েই তিনি পেলেন বড় রানের দেখা। তার চার ওয়ানডে সেঞ্চুরির তিনটিই এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
প্রতিপক্ষ বিবেচনায় সেঞ্চুরিটিকে ‘সহজ’ বলে রায় দিতে পারেন অনেকে। তবে আদতে এটি নিশ্চিতভাবেই লিটনের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসগুলির একটি।
লিটনের ব্যাটিং নিয়ে যে অভিযোগগুলো ওঠে প্রায় নিয়মিতই, উইকেটে তিনি বেশি ছটফট করেন, উপযুক্ত বলের অপেক্ষা করেন না, সহজে উইকেট ছুঁড়ে আসেন, এরকম সব তীরের সামনে বর্ম যেন এই ইনিংস। তিনি দেখালেন, এভাবেও ইনিংস গড়তে পারেন তিনি!
ম্যাচের প্রথম এক-দেড় ঘণ্টায় উইকেট ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। ঘাসের ছোঁয়া থাকা বাউন্সি উইকেটে জিম্বাবুয়ের পেসাররা বোলিংও করে ভালো। সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের বাজে শটে বাংলাদেশের রান এক পর্যায়ে ছিল ৪ উইকেটে ৭৪। রান রেট তখন চারের নিচে।
লিটন তাতে আতঙ্কিত হননি। রানের তাড়নায় রোমাঞ্চের পথে হাঁটেননি, আলগা শটে লড়াইয়ে ক্ষান্ত দেননি। ১০ বল খেলে করেন প্রথম রান। প্রথম বাউন্ডারি পান ষোড়শ ওভারে। লড়াইটা তবু চালিয়ে যান। ফিফটি করেন ৭৮ বলে।
ওয়ানডেতে এর আগে তার সেঞ্চুরি ও ফিফটি তিনটি করে। এর একটিতেই কেবল ফিফটি ছুঁতে বল লেগেছিল পঞ্চাশের বেশি (৫৪ বলে)। এবার সেই তুলনায় ধৈর্যের পরীক্ষা তার ছিল প্রবল। তিনি তাতে উতরে যান।
এরপর যখন সহজ হয়ে আসে উইকেট, মূল বোলাররাও সরে যান আক্রমণ থেকে, সেটা কাজে লাগানোর মতো ধার তো লিটনের ব্যাটে আছেই! ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে তাই লাগে কেবল ৩২ বল।
সেঞ্চুরির পরও তার কাছে দলের চাওয়া ছিল আরও। থিতু ব্যাটসম্যান টিকে থাকলে শেষ দিকে রান বাড়তে পারত আরও। তার ইনিংসের ওজনও বাড়ত তাতে। সেসব হয়নি। তবে এভাবেও ব্যাট করা যায়, এমন খেলেও সেঞ্চুরি করা যায় এবং কার্যকর অবদান রাখা যায়, এটি নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন লিটন।
সবচয়ে বড় কথা, তিনি নিজে এভাবেও পারেন, এই বিশ্বাসটা জন্মানোর কথা। তাকে নিয়ে সব প্রশ্নের জবাব অবশ্যই নয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ইনিংস। তবে জবাব দেওয়ার শুরুটা অন্তত হতে পারে এই ইনিংস।