ফ্লাওয়ার-সাঙ্গাকারাসহ ১০ জন আইসিসি হল অব ফেমে

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ফাইনালের আগে বিশেষ একটি তালিকায় ১০ জন ক্রিকেটারকে হল অব ফেমে জায়গা দিয়েছে আইসিসি। সেই ১৮৯৮ সালের জানুয়ারিতে অভিষিক্ত অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার থেকে ২০১৫ সালের অগাস্টে অবসর নেওয়া শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা পর্যন্ত এই তালিকায় স্থান পাওয়া ক্রিকেটারদের মিলিত ক্যারিয়ারে ব্যাপ্তি শত বছরের বেশি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2021, 05:37 PM
Updated : 13 June 2021, 05:37 PM

ক্রিকেটের শুরুর দিককার সময় থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটি যুগ থেকে জায়গা পান দুই জন করে। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের নাম প্রকাশ করেছে আইসিসি।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আগের সময় অর্থাৎ শুরুর দিককার যুগ থেকেম মন্টি নোবেল ও অব্রি ফকনার। দুই বিশ্ব যুদ্ধের মাঝের সময় থেকে আছেন লিয়েরি কনস্ট্যানটাইন ও স্ট্যান ম্যাককেব। বিশ্ব যুদ্ধ পরবর্তী যুগ থেকে আছেন ভিনু মানকড় ও টেড ডেক্সটার। ওয়ানডে যুগ থেকে আছেন বব উইলিস ও ডেসমন্ড হেইন্স। আধুনিক যুগ থেকে সাঙ্গাকারার সঙ্গে আছেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার।

তাদের নিয়ে আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পাওয়া ক্রিকেটার হলো ১০৩ জন। জিম্বাবুয়ের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই তালিকায় এলেন ফ্লাওয়ার। 

অব্রি ফকনার: দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২৫ টেস্ট খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। ৪০.৭৯ গড়ে এক হাজার ৭৫৪ রানের সঙ্গে তার নামের পাশে রয়েছে ২৬.৫৮ গড়ে ৮২ উইকেট। আইসিসির টেস্ট ব্যাটসম্যান ও বোলার দুটিরই র‍্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায় ওঠা একমাত্র ক্রিকেটার ফকনার। খেলোয়ড়ি জীবনে ছিলেন অসাধারণ এক অলরাউন্ডার, পরে দুর্দান্ত কোচ। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটকে আকার দেওয়া ‘গুগলি চতুষ্টয়ের’ সদস্য ছিলেন তিনি।

মন্টি নোবেল: অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। দলটির হয়ে ৪২ টেস্টে ৩০.২৫ গড়ে রান করেছেন এক হাজার ৯৯৭। উইকেট নিয়েছেন ১২১টি, বোলিং গড় ২৫। এখনও টেস্ট ক্রিকেটে দেশের হয়ে দ্রুততম হাজার রান ও একশ উইকেট নেওয়া ক্রিকেটার তিনি। একইসঙ্গে ক্রিকেটার, ব্যাংকার ও একজন দক্ষ ডেন্টিস্ট- সত্যিকারের এক অলরাউন্ডার ছিলেন তিনি।

লিয়েরি কনস্ট্যানটাইন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের প্রথম গ্রেট অলরাউন্ডার ধরা হয় তাকে। ১৮ টেস্ট খেলে ১৯.২৪ গড়ে রান করেছেন ৬৩৫, উইকেট নিয়েছে ৩০.১০ গড়ে ৫৮টি। খেলার ধরনের দিক থেকে নিজের সময় থেকে এগিয়ে ছিলেন কয়েক যুগ। শুধু ক্রিকেটার হিসেবেই নন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও ছিলেন চ্যাম্পিয়ন। হাউস অব লর্ডসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সদস্য ছিলেন তিনি।

স্ট্যান ম্যাককেব: অস্ট্রেলিয়া হয়ে ৩৯ টেস্টে ২ হাজার ৭৪৮ রান করেছেন তিনি ৪৮.২১ গড়ে। উইকেট নিয়েছেন ৩৬টি, বোলিং গড় ৪২.৮৬। তিনটি স্মরণীয় ইনিংস রয়েছে তার। সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৭ রানে অপরাজিত থাকার পর ১৯৩৫ সালে জোহানেসবার্গে ১৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তিন বছর পর নটিংহ্যামে অ্যাশেজে চার ঘণ্টারও কম সময়ে খেলেন ২৩২ রানের ইনিংস। ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তার অধিনায়ক স্যার ডন ব্র্যাডম্যান থেকে।

টেড ডেক্সটার: ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৬২ টেস্ট। ৪৭.৮৯ গড়ে ৪ হাজার ৫০২ রান করেছেন। ৩৪.৯৩ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৬৬টি। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে ইংল্যান্ড নির্বাচকদের চেয়ারম্যান ছিলেন ডেক্সটার। আঁটসাঁট রক্ষণের সঙ্গে ফ্রন্ট কিংবা ব্যাক ফুটে যে কোনো বোলিংকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল তার। আইসিসির খেলোয়াড়দের র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার।

ভিনু মানকড়: ভারতের সব সময়ের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। ৪৪ টেস্ট খেলে রান করেছেন ২ হাজার ১০৯, গড় ৩১.৪৭। তার নামের পাশে রয়েছে রয়েছে ১৬২ উইকেট, যেখানে গড় ৩২.৩২। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৫২ সালে লর্ডস টেস্টে ৭২ ও ১৮৪ রানের ইনিংসের পর বাঁহাতি স্পিনে তিনি ম্যাচে করেন ৯৭ ওভার! টেস্ট ক্যারিয়ারে সব জায়গায় ব্যাটিং করা বিশ্ব ক্রিকেটের তিন ব্যাটসম্যানের একজন মানকড়। পরবর্তী সময়ে আরেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কারের কোচ ছিলেন তিনি। গাভাস্কার আগেই জায়গা পেয়েছেন হল অব ফেমে।

ডেসমন্ড হেইন্স: ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১১৬ টেস্ট খেলেছেন তিনি। ৪২.২৯ গড়ে রান করেছেন ৭ হাজার ৪৮৭। গর্ডন গ্রিনিজ ও হেইন্স জুটির রান (৬ হাজার ৪৮২) টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ। ওই যুগে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন হেইন্স।

বব উইলিস: ইংল্যান্ডের হয়ে ৯০ টেস্ট খেলেছেন এই পেসার। ২৫.২০ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৩২৫টি। দুই মিটার উচ্চতার এই পেসার বাউন্স করাতে পারতেন বেশির ভাগ উইকেটে। অসাধারণ ইয়র্কার ও বাউন্সারে ভোগাতে পারতেন ব্যাটসম্যানদের। ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেডিংলি টেস্ট জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন উইলিস। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪৩ রানে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট।

আধুনিক ক্রিকেট যুগ (১৯৯৬-২০১৫ সাল)

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার: জিম্বাবুয়ের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা করে নিয়েছেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। দেশের হয়ে ৬৩ টেস্টে ৫১.৫৪ গড়ে ৪ হাজার ৭৯৪ রান করেছেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। স্টাম্পের পেছনে দাঁড়িয়ে ১৫১টি ক্যাচের সঙ্গে নয়টি করেছেন স্টাম্পিং। ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে নাগপুরে তার খেলা ২৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস এখনও টেস্ট ক্রিকেটে কিপার-ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ক্রিকেট জীবন শেষে তিনি এখন দারুণ সফল একজন কোচ। টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে ইংল্যান্ডকে শীর্ষে তুলেছিলেন ফ্লাওয়ার।

কুমার সাঙ্গাকারা: শ্রীলঙ্কার হয়ে ১৩৪ টেস্ট খেলা সাঙ্গাকারা রান করেছেন ১২ হাজার ৪০০, গড় ৫৭.৪০। এই উইকেটরক্ষক ক্যাচ নিয়েছেন ১৮২টি, স্টাম্পিং করেছেন ২০টি। টেস্ট ও ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। লাল বলের ক্রিকেটে ব্র্যাডম্যানের পর সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি তার। ২০১৭ সালে কেবল ১৬ রানের জন্য টানা ছয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি।