ইরফানের বিধ্বংসী ফিফটিতে মোহামেডানের জয়

ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে আব্বাস মুসা আলভির দুর্দান্ত ইনিংস, দারুণ পারফরম্যান্সে তাসামুল হকের অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা, পারটেক্সের উজ্জীবিত শরীরী ভাষা, সবকিছুতেই ছিল অঘটনের আভাস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবতার রূপ পেল না তা। অভিজ্ঞতার লড়াইয়ে তারা পেলে উঠলেন না। ইরফান শুক্কুরের ঝড়ো অপরাজিত ফিফটি ম্যাচ জিতে নিল মোহামেডান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2021, 03:51 PM
Updated : 3 June 2021, 03:51 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জয় ৬ উইকেটে।

ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে আলভি খেলেন ৪৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। তাসামুলের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৫৯। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার পারটেক্স ২০ ওভারে তোলে ১৫৭ রান।

তাসামুল পরে বল হাতে তিন উইকেট নিয়ে বিপাকে ফেলে দেন মোহামেডানকে। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ উতরে ১৪ বল বাকি রেখেই জিতে যায় ক্রীড়াঙ্গনের ঐতিহ্যবাহী দলটি।

২৯ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন ইরফান। ওপেনিংয়ে মাহমুদুল হাসান করেন ২৬ বলে ৩৮। কেটে যায় মোহামেডানের বড় ফাঁড়া।

চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় মোহামেডানের শুরুটা হয় ঘটনার ঘনঘটায়। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে পেসার ইমরান আলিকে টানা দুটি ছক্কা মারেন পারভেজ। দুটিই লেংথ বলে দুর্দান্ত টাইমিংয়ে লং অন দিয়ে।

পরের ওভারে আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান ১ রানে বেঁচে যান স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। পারটেক্সকে দিতে হয় খেসারত। টানা দুই বলে চার-ছক্কায় ছুটতে থাকেন মাহমুদুল।

চতুর্থ ওভারেই নাটকীয়তা। অধিনায়ক তাসামুল আক্রমণে এসে প্রথম বলেই এলবডিব্লউ করে দেন পারভেজকে (১১ বলে ১৭)। পরের বলেই আরও বড় শিকার, সাকিব আল হাসান!

স্বপ্নের মতো এক ডেলিভারি সেটি। মিডল স্টাম্পে পিচ করা বল তীক্ষ্ন টার্ন করে সাকিবের ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে। হতভম্ব সাকিব ‘গোল্ডেন ডাক’ পেয়ে মাঠ ছাড়েন ধীর পায়ে।

তবে শটের মহড়ায় চাপকে পেয়ে বসতে দেননি মাহমুদুল। শামসুর রহমানের সঙ্গে কার্যকর এক জুটিও হয় তার।

পারটেক্সের হয়ে দারুণ জুটি গড়েন তাসামুল হক ও আব্বাস মুসা আলভি।  

৪৫ রানের জুটি শেষে এই দুজন ফেরেন পরপর দুই ওভারে। ইমরানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন শামসুর (১৬ বলে ১৯)। তাসামুলকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে কিপারের হাতে ধরা পড়েন মাহমুদুল (২৬ বলে ৩৮)। দুজনকেই অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট দেখা যায়।

৭৮ রানে ৪ উইকেট হারানো মোহামেডান তখন শঙ্কায়। তবে ইরফান ও নাদিফ চৌধুরির ব্যাটে দূর হয়ে যায় তা। দ্রুতগতিতে রান তুলে দলকে জয় এনে দেন দুজন।

৫ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৫২ করেন ইরফান। নাদিফ অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ২৭ করে। দুজনের অবিচ্ছন্ন জুটি ৪৮ বলে ৮০ রানের।

ম্যাচের প্রথম ভাগে ছিল পারটেক্সের দাপট। প্রথম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার আসিফ হাসানকে বাউন্ডারি মেরে শুরু হয় আলভির ছুটে চলা। দ্বিতীয় ওভারে শুভাগত হোমকে বাউন্ডারির পর জায়গায় দাঁড়িয়ে ছক্কায় ওড়ান লং অফ দিয়ে।

তৃতীয় ওভারে সাকিব আক্রমণে এসে প্রথম বলেই ফেরান সায়েম আলম রিজভিকে। পারটেক্সের ইনিংস নতুন মাত্রা পায় সেখান থেকেই। আলভির ঝড়ো ব্যাটিং চলতে থাকে। তাসামুল সঙ্গ দেন জুটি গড়ায়, ফাঁকে নিজেও খেলেন নান্দনিক কিছু শট।

তাসকিনকে চোখধাঁধানো আপার কাটে ছক্কা মারেন আলভি, আবু জায়েদকে ছক্কা মারেন বেরিয়ে এসে পয়েন্টের ওপর দিয়ে। তাসকিন দ্বিতীয় স্পেলে ফেরেন পাওয়ার প্লের পর, এবার তাকে লং অফ দিয়ে ছক্কায় পাঠান আলভি।

তাসামুল তখনও পর্যন্ত খেলছিলেন একটু রয়ে-সয়ে। তিনিও রানের গতি বাড়ান সাকিবকে পরপর দুই বলে চার-ছক্কায়।

স্বীকৃতি ক্রিকেটে নিজের প্রথম ফিফটি আলভি স্পর্শ করেন ৩৬ বলে। মাইলফলক উদযাপন করেন আবু হায়দারের বলে পুল করে ছক্কায়।

আলভির আনন্দদয়ী ইনিংস শেষ হয় তাসকিনের বল আকাশে তুলে। মিড অফে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন পারভেজ হোসেন ইমন। থেমে যায় তাসামুলের সঙ্গে ৭৪ বলে ৯৫ রানের জুটি।

এরপর নাজমুল হোসেন মিলন ও ধীমান ঘোষ দাঁড়াতে না পারলেও শেষ দিকে দ্রুত রান তোলেন শফিউল হায়াত (১১ বলে ১৮*)। ৫৬ বলে ৫৯ করে শেষ বলে রান আউট হন তাসামুল।

পারটেক্স তখন দারুণ এক জয়ের আশায়। সেই আশা পরে আরও উজ্জ্বল হয়েও মিইয়ে যায়, নায়ক শেষ পর্যন্ত ইরফান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পারটেক্স: ২০ ওভারে ১৫৭/৫ (সায়েম ২, আলভি ৬৪, তাসামুল ৫৯, মিলন ০, ধীমান ১, শফিউল ১৮*; আসিফ ৪-০-২৭-০, শুভাগত ১-০-১২-০, সাকিব ৪-১-৩১-১, তাসকিন ৪-০-৩৩-২, আবু জায়েদ ৪-০-২৬-১, আবু হায়দার ৩-০-২৫-০)।

মোহামেডান: ১৭.৪ ওভারে ১৫৮/৪ (পারভেজ ১৭, মাহমুদুল ৩৮, সাকিব ০, শামসুর ১৯, ইরফান ৫২*, নাদিফ ২৭*; জয়নুল ১-০-৩-০, ইমরান ৩-০-৪৩-০, মঈন ২.৪-০-৩৩-০, তাসামুল ৩-০-১৮-৩, শাহবাজ ৪-০-৩২-০, নিহাদউজ্জামান ৪-০-২৮-০)।

ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইরফান শুক্কুর।