ছোট ছোট কাজ করে বড় সাফল্য মিরাজের

টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু। সময়ের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ এখন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। উঠেছেন ওয়ানডে বোলারদের র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে। দারুণ এই পথচলায় স্রেফ ছোট ছোট বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েই আজকের এই সাফল্য, বললেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2021, 02:48 PM
Updated : 26 May 2021, 02:48 PM

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে দারুণ বোলিংয়ে মিরাজ নেন ৭ উইকেট। এতে বুধবার আইসিসির প্রকাশিত র‍্যাঙ্কিংয়ে তিন ধাপ এগিয়ে তিনি উঠেছেন দুই নম্বরে। পেয়েছেন ক্যারিয়ার সেরা রেটিং পয়েন্ট। তার ৭২৫ রেটিং পয়েন্ট বাংলাদেশের কোনো বোলারের সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ২০০৯ সালের নভেম্বরে সাকিব আল হাসানের ৭১৭।

এই সংস্করণে বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দুইয়ে মিরাজ। ২০০৯ সালে সাকিব প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে উঠেছিলেন শীর্ষে আর ২০১০ সালে আব্দুর রাজ্জাক দুইয়ে।

বিসিবির পাঠানো ভিডিও বার্তায় মিরাজ বললেন, র‍্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে উঠে তিনি নিজেই চমকে গেছেন।

“ওয়ানডে বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমি কখনও ভাবিনি ওয়ানডে বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে উঠতে পারব।”  

২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকেই বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন মিরাজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে গড়েছিলেন রেকর্ড। তবে সবসময়ই তার ভেতরে তাড়না কাজ করত তিন সংস্করণে খেলার, বিশেষ করে ওয়ানডেতে। এজন্য কী করতে হবে, সেটাও ঠিক করে ফেলেছিলেন তিনি।

“যখন টেস্ট ক্রিকেট শুরু করেছিলাম, তখন টেস্ট বোলারই ছিলাম। তবে আমার ভেতর একটা জিনিস সবসময় কাজ করত যে শুধু টেস্ট খেলব না, সব সংস্করণেই খেলব। তখন আমার চিন্তাই ছিল, ওয়ানডেতে আমি দলে কীভাবে অবদান রাখতে পারি, পারফর্ম করতে পারি।”

“আমি জানতাম ওয়ানডে খেলতে হলে আমাকে ইকোনমি রেট ঠিক রাখতে হবে, এই জায়গাটায় মনোযোগ দিয়েছিলাম। যদি ইকোনমি রেটটা ঠিক রাখি তাহলে আমার দলে খেলার সম্ভাবনাটা বেশি থাকবে। দলের প্রয়োজনের সময় যদি ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি খেলতে পারি তাহলে আমার জন্য ভালো হবে এবং দলের জন্যও ভালো হবে।”

বাড়তি চিন্তা না করে শুধু ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে উন্নতির চেষ্টা করেছেন বলে জানালেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে দারুণ বোলিংয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ

“আমি বেশি কিছু চিন্তা করিনি। স্রেফ ছোট ছোট ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা করেছি, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কোন জায়গায় উন্নতি করলে আমি টানা খেলতে পারব, দলের সাহায্য হবে এবং আমার নিজের ভালো হবে ওই সব জায়গা নিয়ে কাজ করেছি। আমার কোচের সঙ্গেও কথা বলেছি এবং কাজ করার চেষ্টা করেছি।”
২০১৭ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কায় অনেকটা নাটকীয়ভাবে ওয়ানডে অভিষেক হয় মিরাজের। প্রস্তুতি ম্যাচে শুভাগত হোমের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর দেশ থেকে ডেকে নেওয়া হয় তাকে।
শুরুতে দারুণ বোলিং করা মিরাজ পরে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন। উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ক্যারিয়ারে দেখিয়েছেন লড়াইয়ের মানসিকতা।
“আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমি টেস্ট দিয়ে শুরু করেছিলাম। তখন ওয়ানডে খেলিনি, তেমন সুযোগও পাইনি। ওয়ানডে আমি নিয়মিত খেলার সুযোগ পেয়েছি ২০১৮ সাল থেকে। সেটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ, যেটা আমরা জিতেছিলাম। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ওয়ানডে খেলা হচ্ছে। এরপর এশিয়া কাপে খেললাম, দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেললাম। আয়ারল্যান্ড সফরে খেললাম। পরে বিশ্বকাপে।”
“ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই শুরু হয়েছিল। ছোট ছোট পারফরম্যান্স করতে করতে আজ এই পর্যন্ত। ওয়ানডেতে সবসময় ব্যাটসম্যানের রানের জন্য তাড়া থাকে, আমি মনে করেছি ওই জায়গায় যদি আমি মনোযোগী থাকি, আমি যদি ভালো করতে পারি তাহলে আমার সুযোগ বেশি থাকবে।”

৪৮ ওয়ানডে ইনিংসে মিরাজের উইকেট এখন ৫৪টি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৪.৪২ করে।