ফখরের রেকর্ড ১৯৩ ছাপিয়ে দ. আফ্রিকার জয়

প্রায় সাড়ে তিনশ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২৫তম ওভারে ১২০ রানে নেই ৫ উইকেট। বড় হারের মঞ্চ প্রস্তুত। সেই ম্যাচ জমিয়ে তুললেন ফখর জামান। তবে আশা জাগিয়েও ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন না বাঁহাতি এই ওপেনার। আলো দেখলেও জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারল না পাকিস্তান। দারুণ জয়ে সিরিজে সমতা আনল দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2021, 04:51 PM
Updated : 4 April 2021, 06:11 PM

জোহানেসবার্গে রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৭ রানে জিতেছে স্বাগতিকরা। ৩৪২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ফখরের বীরত্বে পাকিস্তান করেছে ৩২৪ রান।

তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা।

দা ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে একটুর জন্য দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পাননি ফখর। ১০ ছক্কা ও ১৮ চারে ১৯৩ রান করে ফিরেন রান আউট হয়ে। দুর্দান্ত ইনিংসের জন্য জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

এই ইনিংসের পথে দারুণ এক কীর্তি গড়েন ফখর। রান তাড়ায় ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটি এখন তার। টপকে গেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে শেন ওয়াটসনের করা অপরাজিত ১৮৫ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় লক্ষ্য এনে দিতে মিলিত অবদান রাখেন ব্যাটসম্যানরা। ৮ রানের আক্ষেপ নিয়ে ৯২ রানে আউট হন টেম্বা বাভুমা। কুইন্টন ডি ককের ব্যাট থেকে আসে ৮০ রান। ঝড়ো ফিফটি করেন রাসি ফন ডার ডাসেন ও ডেভিড মিলার।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালো শুরু এনে দেন ডি কক ও এইডেন মারক্রাম। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মারক্রাম(৩৯)। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফাহিম আশরাফকে ছক্কায় উড়িয়ে পরের বলেই তার বিদায়ে ভাঙে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি।

দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন ডি কক। তাকে সঙ্গ দেন বাভুমা। ৬০ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে সেঞ্চুরিতে চোখ রাখেন স্বাগতিক কিপার-ব্যাটসম্যান। বোল্ড করে তাকে থামান হারিস রউফ। ৮৬ বলে খেলা ডি ককের ৮০ রানের ইনিংসে ১০ চারের পাশে একটি ছক্কা।

শুরুতে নিজেকে গুটিয়ে রাখা বাভুমাও ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকেন রানের গতি। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের ফিফটি আসে ৬৮ বলে। তিনি এগোতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ফন ডার ডাসেন এবার দেখতে বসেছিলেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। আউট হতে বসেছিলেন প্রথম বলেই। কিন্তু বেঁচে যান কিপার মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যর্থতায়।

জীবন পাওয়ার পর চড়াও হন বোলারদের উপর। বাভুমার সঙ্গে তার জুটিতে ওভার প্রতি রান আসে দশের বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকা পায় আরেকটি শত রানের জুটি।

৩৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করা ফন ডার ডাসেন থামেন ৬০ রান করে। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ৪টি ছক্কা ও ৬টি চার।

আশা জাগিয়েও সেঞ্চুরি পাননি বাভুমা। ৯২ রানে তাকে ফিরিয়ে দেন রউফ। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের ১০২ বলের ইনিংস গড়া ৯ চারে। এরপর দ্রুত দুটি উইকেট হারালেও রানের গতিতে ভাটা পড়তে দেননি মিলার। ২৭ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

রান তাড়ায় পাকিস্তান হোঁচট খায় শুরুতেই। দ্বিতীয় ওভারে তারা হারায় ইমাম-উল-হককে। স্লিপে ধরা পড়েন তিনি লুঙ্গি এনগিডির বলে। এই পেসারকে চার মেরে রানের খাতা খোলেন বাবর আজম।

পাকিস্তান অধিনায়ক ও ফখরের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে এগিয়ে যেতে সফরকারীরা। পাওয়ার প্লেতে তোলে ৬৮ রান।

এরপরই আনরিক নরকিয়ার ছোবলে পাল্টে যায় চিত্র। চার বলের মধ্যে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বাবর ও রিজওয়ানকে থামান গতিময় এই পেসার। দানিশ আজিজের আরেকটি ব্যর্থতায় চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান।

১৫ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারানো দলের হাল ধরতে পারেননি শাদাব খান।

১২০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে প্রায় একার লড়াইয়ে জয়ের আশা দেখান ফখর। আসিফ আলি, ফাহিম তাকে দিতে পারেননি খুব একটা সঙ্গ।

৭০ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া ফখর পঞ্চম সেঞ্চুরিতে যান ১০৭ বলে। রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসিকে দুই ওভার মিলিয়ে মারেন ৫ ছক্কা। ফখরের তৃতীয় ফিফটি আসে কেবল ২১ বলে। এরপরও দারুণ সব শট খেলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে।

কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। শেষ ওভারে ২ রান নেওয়ার পথে একটু মন্থর হওয়ার মাশুল দেন রান আউট হয়ে। শেষ দিকে তিন চারে পরাজয়ের ব্যবধান কমান হাসনাইন।

আগামী বুধবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৪১/৬ (ডি কক ৮০, মারক্রাম ৩৯, বাভুমা ৯২, ফন ডার ডাসেন ৬০, মিলার ৫০*, ক্লাসেন ১১, ফেলুকওয়ায়ো ৩, রাবাদা ১*; আফ্রিদি ১০-১-৭৫-১, হাসনাইন ১০-০-৭৪-১, ফাহিম ৯-০-৬২-১, রউফ ১০-০-৫৪-৩, শাদাব ৯-০-৬৪-০, আজিজ ২-০-১১-০)।

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩২৪/৯ (ইমাম ৫, ফখর ১৯৩, বাবর ৩১, রিজওয়ান ০, আজিজ ৯, শাদাব ১৩, আসিফ ১৯, ফাহিম ১১, আফ্রিদি ৫, রউফ ১*, হাসনাইন ১২*; রাবাদা ১০-২-৪৩-১, এনগিডি ৯-০-৬৬-১, ফেলুকওয়ায়ো ১০-০-৬৭-২, নরকিয়া ১০-১-৬৩-৩, শামসি ৭-০-৬০-১, মারক্রাম ৪-০-১৬-০)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায়।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ফখর জামান।