চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের কিছু খণ্ডচিত্র এগুলো। মূল ব্যাটসম্যানরা ঘুরেফিরে লম্বা সময় কাটালেন মাঠের দুই প্রান্তের নেটে। গ্রানাইটের স্লাবেও অনেকটা সময় ব্যাট করলেন তামিম ইকবাল, মুশফিক, মুমিনুল হকরা। এ দিনের অনুশীলন সেশনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, বোলারদের ব্যাটিং ঝালাই।
আধুনিক ক্রিকেটে লোয়ার অর্ডারদের ব্যাটিং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে অনেক। বিশেষ করে, টেস্টে লেজের ব্যাটসম্যানদের অবদান অনেক সময়ই গড়ে দেয় বড় পার্থক্য। কিন্তু টেস্টে বাংলাদেশের হাজারও সমস্যার মধ্যে একটি লেজের ব্যাটিংও। গত দুই বছরে লোয়ার অর্ডারদের (৮ নম্বর থেকে ১১) কাছ থেকে পাওয়া অবদানে বাংলাদেশই সবচেয়ে পিছিয়ে। এমনকি আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়েও লেজ থেকে গড়ে রান পেয়েছে বেশি!
গত দুই বছরে লোয়ার অর্ডার থেকে ৭ টেস্টে মোটে ৩৫৪ রান পেয়েছে বাংলাদেশ, গড় মাত্র ৯.৮৩। এই সময়ে আফগানরা লোয়ার অর্ডার থেকে পেয়েছে গড়ে ১১.৭৫ রান, জিম্বাবুয়ে ১১.৬২।
লেজের ঝাপটা প্রচণ্ড জরুরি বলেই তাদের নিয়ে এ দিন লম্বা সময় কাটালেন প্রধান কোচ, ব্যাটিং কোচরা। ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক বরাবরের মতোই থ্রো ডাউন খেলানোর পাশাপাশি ব্যাটিং কোচের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হলেন অনেকবার।
সঙ্গে দেখা গেল আরেকজন বিশেষ ‘কোচ।’ কোচদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রায় পুরো সময় লোয়ার অর্ডারদের ব্যাটিং দেখলেন লিটন দাস। শুধু পর্যবেক্ষণ করাই নয়, ইবাদতের স্টান্স ঠিক করা, কাঁধের পজিশন দেখিয়ে দেওয়া, খালেদ-মুস্তাফিজদের নানা পরামর্শ ও সাহস দেওয়া, সব মিলিয়ে লিটনকে দেখা গেল প্রবল উৎসাহে সবাইকে সহায়তা করতে।
লোয়ার অর্ডারদের এই সেশন ভিডিও করে রাখার পাশাপাশি টুকটাক পরামর্শ দিচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরন। অনুশীলনের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন এই সেশনের উদ্দেশ্য।
“লোয়ার অর্ডারদের কাছ থেকে টেস্টে রান চাই আমরা। ওরা যেন উইকেটের মূল্য বুঝতে পারে এবং সহজে আউট না হয়। বল দেখে সরে না গিয়ে যেন লড়াই করে। শুধু টিকে থাকাই নয়, ওরা রানও যেন করতে পারে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।”
২০১৫ বিশ্বকাপের আগে বাড়তি বাউন্সের সঙ্গে বাড়তি নিয়ে গ্রানাইটে অনুশীলনের যে ধারা শুরু করেছিলেন সেই সময়ের কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে, সেটি এরপর মোটামুটি নিয়মিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের অনুশীলনে। এ দিন তামিম, মুশফিক, মুমিনুলকে বেশি সময় কাটাতে দেখা গেল গ্রানাইটে। গতিময় শর্ট বল ছেড়ে দেওয়া, ডিফেন্স করা, পুল ও কাট করার অনুশীলন করলেন সবাই।
শর্ট বলে মুমিনুলের সামর্থ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে অনেক। এবার যাতে ভোগান্তি না হয়, সেজন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। গ্রানাইটের অনুশীলনে এ দিন তার সঙ্গী ছিলেন রায়ান কুক। শর্ট বলে মুমিনুলের ডিফেন্স, ছেড়ে দেওয়া, পুল ও কাট নিয়ে অনুশীলন তো হলোই, কুক তাকে শেখালেন কাট শটের মতো করে ‘স্লাইস’ করতেও।
‘স্লাইস’ খেলতে অবশ্য শুরুতে খুব একটা উৎসাহ দেখালেন না মুমিনুল। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বলছিলেন, তার যে ব্যাটিং গ্রিপ, তাতে স্লাইস খেলতে গেলে বল হাওয়ায় ভেসে ফিল্ডারে কাছে যাওয়ার শঙ্কা তীব্র। কুক দেখিয়ে দিলেন, গ্রিপ পরিবর্তন না করেই স্রেফ ডানহাতের পজিশন একটু ওপরের দিকে নিয়ে স্বচ্ছন্দে স্লাইস খেলা যায় ও মাটি কামড়েই শট খেলা যায়। সেটি একটু রপ্ত করে মুমিনুলও দারুণভাবে খেলতে থাকলেন স্লাইস!
সব মিলিয়ে প্রস্তুতি চলছে দারুণভাবে। অপেক্ষা এবার ২২ গজে করে দেখানোর।