একশ ও চারশর সামনে রোমাঞ্চিত লায়ন

শেষ মুহূর্তে চোট-টোট বাধা হয়ে না দাঁড়ালে একটি অর্জন নিশ্চিতভাবেই হয়ে যাচ্ছে ন্যাথান লায়নের। প্রবল সম্ভাবনা আছে আরেকটির। ভারতের বিপক্ষে ব্রিজবেন টেস্ট হতে যাচ্ছে লায়নের শততম টেস্ট। এই টেস্টে চার উইকেট পেলে তার নাম লেখা হয়ে যাবে চারশ উইকেট শিকারিদের অভিজাত তালিকায়। মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত এই অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2021, 07:53 AM
Updated : 13 Jan 2021, 07:53 AM

চলতি সিরিজে এখনও সেরাটা দেখা যায়নি লায়নের। বোলিং অবশ্য খারাপ করছেন না মোটেও। তবে উইকেট প্রাপ্তির দিক থেকে সফল হননি খুব একটা। ৩ টেস্টে তার শিকার ৬ উইকেট। এখন তার সামনে এক ম্যাচে দুই মাইলফলক অর্জনের হাতছানি।

শেন ওয়ার্নের অবসরের পর কয়েক বছর ধরে নির্ভরযোগ্য একজন স্পিনারের খোঁজে যখন হাপিত্যেশ করে ফিরছিল অস্ট্রেলিয়া, তখন এক পর্যায়ে দৃশপটে আবির্ভাব লায়নের। ন্যাথান হরিজ, বিউ ক্যাসন, জেসন ক্রেইজা, ব্রাইস ম্যাকগেইন, মাইকেল বিয়ার, ক্যামেরন হোয়াইট, জেভিয়ার ডোহার্টিরা ব্যর্থ হলেও লায়ন ক্রমে অর্জন করে নেন আস্থা। প্রথাগত অফ স্পিনের নান্দনিক প্রদর্শনীতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ম্যাচ জেতানো বোলার হিসেবে।

সাফল্যের সেই পথচলায়ই এখন তিনি দারুণ দুটি মাইলফলকের সামনে। তার আগে ১০০ টেস্ট খেলার স্বাদ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১২ জন। টেস্ট ইতিহাসে ৪০০ উইকেট আছে সব মিলিয়ে কেবল ১৫ জন বোলারের। অফ স্পিনে এই কীর্তি আছে কেবল মুত্তিয়া মুরালিধরন ও হরভজন সিংয়ের। অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনারদের মধ্যে তিনিই হবেন প্রথম!

মাইলফলক টেস্টের আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে লায়ন বললেন, গ্রেটদের উচ্চতায় নিজেকে দেখতে নিজেরই অবিশ্বাস্য লাগছে তার।

“ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যে ১২ জন ১০০ টেস্ট খেলেছে, তারা সবাই কিংবদন্তি। অস্ট্রেলিয়ার হয়েই শুধু নয়, অন্য দেশের যারাও খেলেছেন…তাদের পাশে নিজেকে দেখে প্রতিটি দিনই নিজের গায়ে চিমটি কাটতে হবে আমার।”

“এটা সত্যি অসাধারণ। আগে আমি চেষ্টা করেছি খুব বেশি সামনে না তাকাতে। তবে এটা নিয়ে আমি বেশ রোমাঞ্চিত…অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১০০ টেস্ট খেলতে পারা দারুণ সম্মানের।”

২০১০ সালেও লায়ন ছিলেন অ্যাডিলেইড ওভালের মাঠকর্মী। সেখানেই তার বোলিং নজর কাড়ে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন ব্যারির। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে লায়নের অভিষেক হয়ে যায় বিগ ব্যাশে। পরের মাসেই অভিষেক শেফিল্ড শিল্ডে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচে নেন দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট।

নাটকীয় উন্নতির পথ ধরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই পেয়ে যান টেস্ট ক্যাপ। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম বলেই দারুণ গ্রিপ, টার্ন ও বাউন্সে শিকার করেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার উইকেট। প্রথম ইনিংসে নেন ৫ উইকেট। এরপর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়েছে সামান্যই।

দারুণ শুরুর পরে কিছুদিন তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বটে। ২০১৩ সালে দল থেকে বাদ পড়েন দুই দফায়। তবে সময়ের সঙ্গে ধারাল ও পোক্ত হয়ে তিনি গড়ে তোলেন আপন পরিচয়। চতুর্থ ইনিংসে তার ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য প্রশ্নবিদ্ধ ছিল একসময়। সেই প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন পরে দারুণ পারফরম্যান্সে।

২০১৩ সালের অগাস্ট থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি টেস্ট তিনি খেলেছেন। ব্রিজবেন টেস্ট হবে তার টানা ৭৮তম টেস্ট। মাইক হাসির অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ার বিজয় সঙ্গীত গাওয়ার ভার পড়েছে লায়নের ওপরই। এবার তিনি নতুন উচ্চতায় পা রাখার পথে।

বয়স এখন ৩৩, স্পিনারদের জন্য খুব বেশি নয়। বরং এখনই সেরা সময় আসে অনেক স্পিনারের। লায়নও জানিয়ে দিলেন সেই বার্তা।

“ আমার শেষ এখনও বহুদূরে। যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত আমি। মাঠে নামতে চাই, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলতে চাই… অনেক অনেক টেস্ট ম্যাচ জিততে চাই। অনেক কিছু শিখেছি এত বছর ধরে, আত্মবিশ্বাসও এখন অনেক।”

ব্রিজবেনে শুক্রবার থেকে শুরু লায়নের শততম টেস্ট।