নতুন আশার ঝিলিক বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ

দুনিয়ায় কোভিড না এলে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের জন্মই হয়তো হতো না। মহামারীর মধ্যে বিপিএল আয়োজনের সুযোগ নেই, কিন্তু ক্রিকেট কার্যক্রম স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। সেই তাগিদ থেকেই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টির আবির্ভাব। এই টুর্নামেন্ট এতটাই সফল ও সম্ভাবনার এত দুয়ার খুলে দিয়েছে যে, আপৎকালীন এই টুর্নামেন্টকে এখন স্থায়ী রূপ দেওয়ার ডাক উঠছে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2020, 04:19 AM
Updated : 19 Dec 2020, 04:19 AM

বিপিএল ছাড়াও শুধু দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রয়োজনীয়তা দেশের ক্রিকেটে অনুভব হচ্ছে অনেক দিন থেকেই। বিপিএলে একাদশে বিদেশি ক্রিকেটার থাকেন চার জন করে, এমনকি পাঁচ জনও ছিল। সঙ্গে দেশের প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটাররা তো আছেনই। উঠতি ও আড়ালে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য বিপিএলে খেলা কিংবা খেললেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ও নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ সামান্য। এই সংস্করণের উপযোগী ক্রিকেটার বের করে আনতে, নিজেদের ঝালাই করতে, সর্বোপরি ২০ ওভারের ক্রিকেটে এগিয়ে যেতে আরেকটি নিয়মিত টুর্নামেন্টের বিকল্প তাই নেই।

ভারতে যেমন আইপিএল ছাড়াও রাজ্য দলগুলিকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আছে সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি। এছাড়াও কর্নাটক প্রিমিয়ার লিগ, তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের মতো টুর্নামেন্ট থেকেও উঠে আসে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার।

তরুণ শরিফুল ইসলাম দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন গোটা টুর্নামেন্টে।

বাংলাদেশে গত বছর অবশ্য ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টি হয়েছিল। তবে সেটি ছিল ছোট্ট পরিসরে। এবার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ পরিপূর্ণভাবেই ফুটিয়ে তুলল এমন একটি টুর্নামেন্টের উপযোগীতা। টুর্নামেন্টটি কেমন হওয়া উচিত, সেটির একটি রূপরেখাও মিলে গেল কোভিড পরিস্থিতির আসর থেকেই।

জাতীয় নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনালেন এই আসর নিয়ে তার মুগ্ধতার কথা।

“ টুর্নামেন্টে তিনটা সেঞ্চুরি হয়েছে, তিনটাই তরুণ তিন ব্যাটসম্যানের। শুরুতে এই কথা বললাম, এতেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই টুর্নামেন্ট নিয়ে আমার মূল তৃপ্তির জায়গা কোথায়! তরুণদের কয়েকজন দারুণ খেলেছে এখানে। কয়েকজন ব্যাটসম্যান ভালো করেছে, যাদেরকে টি-টোয়েন্টির উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়। জাতীয় দলের বাইরের অনেক বোলার ভালো করেছে। এসব দারুণ ব্যাপার।”

“ আমি মনে করি, এই টুর্নামেন্ট নিয়মিত হলে খুব ভালো হয়। বিপিএলের আগে এরকম একটি টুর্নামেন্ট শুধু দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে হওয়া উচিত। অনেক ক্রিকেটার তাহলে নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবে।”

বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান ও এই আসরে বেক্সিমকো ঢাকা দলের কোচ খালেদ মাহমুদেরও চাওয়া, এই আসরকে নিয়মিত করা হোক ঘরোয়া ক্রিকেটে।

দেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন তরুণ পারভেজ হোসেন ইমন।

“ আমি মনে করি, এই টুর্নামেন্টের যেটা উদ্দেশ্য ছিল, সেটা ভালোভাবেই পুরণ হয়েছে। প্রত্যেকটা ম্যাচ বেশ উত্তজনাপূর্ণ হয়েছে। এমন অনেক ছেলে পারফর্ম করছে, যাদেরকে আমরা প্রত্যাশা করিনি। এখানে আমাদের ছেলেরা খেলার সুযোগ পেয়েছে নিয়মিত, জায়গা মতো ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে।”

“ ভবিষ্যতে এই টুর্নামেন্ট যদি আমরা চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় আগামী কয়েক বছরে আমরা বেশ কিছু তরুণ ক্রিকেটার পেয়ে যাব, যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলবে  ও আমাদের ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করবে।”

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান নিজেও দারুণ উচ্ছ্বসিত এই টুর্নামেন্টের সাফল্যে। এই আসরকে নিয়মিত করার ইচ্ছা তাদের আছে বলে তিনি জানালেন ফাইনালের দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে।

“ আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বিপিএলের চেয়ে এই টুর্নামেন্টটা অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। এটার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, এতজন স্থানীয় ক্রিকেটারের সুযোগ পাওয়া এবং এতগুলো ছেলেকে দেখার সুযোগ অন্যান্য বছর আমাদের হয় না।”

“ বোর্ডে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি যে, প্রতি বছরই আমরা এটা রাখতে চাই। এটা নির্ভর করছে অনেক কিছুর ওপর। এফটিপি, আমাদের আইসিসি ইভেন্ট, সব কিছু মিলিয়ে সুযোগ যদি থাকে ,তাহলে এটাকে প্রাধান্য দেব। প্রতি বছরই হোক, এটাই আমাদের ইচ্ছা।”