প্রাথমিক পর্বে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ছিল অপ্রতিরোধ্য, এই দুই দলের লড়াইয়ে তাদের জয় ছিল দুটিতেই। প্রথম কোয়ালিফায়ারে সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সেই চট্টগ্রামকেই পাত্তা না দিয়ে জেমকন খুলনার জয় ৪৭ রানে।
জহুরুলের ৫১ বলে ৮০ রানের ইনিংস আর অন্যদের কয়েকটি ক্যামিওতে ২০ ওভারে খুলনা তোলে ২১০ রান। চট্টগ্রাম অলআউট ১৬৩ রানে।
চট্টগ্রামের বিপজ্জনক দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাসকে ফেরানোর পর মাশরাফি ভাঙেন প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় জুটি। পরে শেষ দিকে তুলে নেন আরও দুই উইকেট। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা আর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের মিশেলে তার প্রাপ্তি ৩৫ রানে ৫ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে তার আগের সেরা ছিল ১১ রানে ৪ উইকেট।
টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাটিং নিয়ে ভুগতে থাকা খুলনা এ দিন ধরা দেয় অন্য রূপে। জহুরুল স্পর্শ করেন তার আগের সেরা স্কোরকে। সঙ্গে কার্যকর ইনিংস খেলেন ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার ইনিংসের শুরুর দুই ওভারে স্কোরবোর্ড ছিল শান্ত। তৃতীয় ওভারে নাহিদুল ইসলামকে পরপর দুই বলে ছক্কা-চারে জহুরুলের ছুটে চলা শুরু। এরপর যেন আর থামাথামি নেই। পরের ওভারে শরিফুল ইসলামকে মারেন ছক্কা-চার।
বলতে গেলে একাই দলকে এগিয়ে নেন জহুরুল। তার সঙ্গী জাকির হাসান ছিলেন একরকম ঘুমিয়ে। ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটিতে জাকিরের অবদান কেবল ২২ বলে ১৬!
উইকেটে গিয়ে প্রথম চার বলের মধ্যেই দুটি চার, একটি ছক্কা মারেন ইমরুল। জহুরুল ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৩ বলে। এরপর পেয়ে বসেন সঞ্জিত সাহাকে। তরুণ অফ স্পিনারকে টানা তিন বলে মারেন দুই ছক্কা, এক চার।
মাত্র ৪ ওভারেই ৪৮ রান যোগ করেন এই দুজন। ১২ বলে ২৫ করে মুস্তাফিজের বলে সীমানায় ধরা পড়েন ইমরুল।
পরের ওভারে থামেন জহুরুলও। ৫ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংস শেষ হয় মোসাদ্দেক হোসেনকে স্কুপ খেলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে।
খুলনার রান রথ তবু ছুটতে থাকে। সময়ের দাবি মিটিয়ে মাহমুদউল্লাহ খেলেন ৯ বলে ৩০ রানের ছোট্ট বিধ্বংসী ইনিংস। এর মধ্যে শরিফুলের বলে ছিল টানা তিনটি দুর্দান্ত ছক্কা।
ব্যাট হাতে ছন্দ ফিরে পাওয়ার আভাস দিয়ে সাকিবের সংগ্রহ দুটি করে চার ও ছক্কায় ১৫ বলে ২৮। এবারের আসরে ৯ ইনিংসে প্রথমবার ১৫ ছাড়ালেন তিনি।
আরিফুলের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১৫। শেষ ওভারে মুস্তাফিজ দুটি বিমার দিয়ে বোলিং থেকে সরে যাওয়ার পর সৌম্যকে পেয়ে ছক্কা মারেন মাশরাফি।
মাশরাফি এরপর বল হাতে সৌম্যকে ফেরান খালি হাতে। ওই বাঁহাতির জন্য মিড উইকেট সীমানায় একজন ফিল্ডার রাখেন মাশরাফি। সৌম্য তুলে দেন সেই ফিল্ডারের হাতেই।
সৌম্যর বিদায়ের আগে মাশরাফিকে চার ও ছক্কায় রান তাড়া শুরু করেছিলেন লিটন। চার-ছক্কা মারেন তিনি আল আমিন হোসেনকেও। মাশরাফি নিজের দ্বিতীয় ওভারে থামান দারুণ ফর্মে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে। স্লোয়ার লেংথ বলটিতে বিভ্রান্ত হয়ে লিটন বোল্ড হন আগেই ব্যাট চালিয়ে (১৩ বলে ২৪)।
খুলনার মাথাব্যথা হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙতে আবার মাশরাফিকে ফেরান অধিনায়ক। তার হাতেই শেষ হয় ৪৭ বলে ৭৩ রানের এই জুটি। ২৭ বলে ৩১ করে কাভারে ধরা পড়েন মাহমুদুল।
মিঠুন আসরে নিজের প্রথম ফিফটিতে পা রাখেন ৩০ বলে। এরপর আর টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। আরিফুল হকের স্লোয়ারে থামে তার ৩ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংস।
এরপর কেবল ম্যাচ শেষের অপেক্ষা। মোসাদ্দেক হোসেন, সৈকত আলিরা পারেননি ঝড় তুলতে। নিজের শেষ ওভারে শামসুর রহমানকে ফেরান মাশরাফি। জাকির হাসানের চোটে বদলি হিসেবে কিপিং করতে নামা এনামুল হক নেন দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচ।
কোটার শেষ বলে মুস্তাফিজকে আউট করে মাশরাফি পান প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ। আসরে নিজের তৃতীয় ম্যাচে পেয়ে যান ম্যাচ সেরার সম্মানও।
৮ ম্যাচে ৭ জয় নিয়ে কোয়ালিফায়ারে আসা চট্টগ্রাম এখন ফাইনালে ওঠার আরেকটি সুযোগ পাবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় সেই লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ এলিমিনেটর ম্যাচে জয়ী বেক্সিমকো ঢাকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জেমকন খুলনা: ২০ ওভারে ২১০/৭ (জহুরুল ৮০, জাকির ১৬, ইমরুল ২৫, সাকিব ২৮, মাহমুদউল্লাহ ৩০, আরিফুল ১৫, শুভাগত ০*, শামীম ১, মাশরাফি ৬* ; নাহিদুল ২-০-২১-০, শরিফুল ৪-০-৪৭-০, সঞ্জিত ৪-০-৫০-১, মুস্তাফিজ ৩.৪-০-৩১-২, সৌম্য ২.২-০-৩১-০, মোসাদ্দেক ৪-০-২৭-১)।
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ১৯.৪ ওভারে ১৬৩ (লিটন ২৪, সৌম্য ০, মাহমুদুল ৩১, মিঠুন ৫৩, মোসাদ্দেক ১৭, শামসুর ১৮, সৈকত ৫, নাহিদুল ৪, মুস্তাফিজ ০, সঞ্জিত ২*, শরিফুল ০; মাশরাফি ৪-০-৩৫-৫, আল আমিন ৪-০-৩২-০, সাকিব ৪-০-৩২-১, হাসান ৪-০-৩৫-২, আরিফুল ৩.৪-০-২৬-২)।
ফল: জেমকন খুলনা ৪৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাশরাফি বিন মুর্তজা।