ধারাবাহিক আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ফিল্ডার। দেশের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা জানাচ্ছেন তাদের ভাবনা। তিনটি ক্যাটাগরিতে আলাদাভাবে সেরার পাশাপাশি বাছাই করা হচ্ছে সার্বিকভাবে সেরা। আয়োজনের নবম পর্বে রুবেল জানালেন তার ভাবনা।
বাংলাদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন রুবেল। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বয়স পেরিয়ে গেছে ১১ বছর। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন আরও বেশি সময় ধরে। দীর্ঘ এই পথচলায় ফিল্ডিংয়ে যাদেরকে সেরা মনে করেন, তাদের কথা তুলে ধরলেন অভিজ্ঞ এই পেসার।
স্লিপে:
“স্লিপে তো নানা সময় বিভিন্ন জনকে দাঁড়াতে দেখেছি। ইমরুল কায়েস দাঁড়িয়েছে অনেকদিন, এখন সৌম্য সরকার দাঁড়ায়। রিয়াদ ভাইও (মাহমুদউল্লাহ) দাঁড়ান, বিশেষ করে স্পিনে। যেহেতু কখনোই আমরা খুব ভালো স্লিপ ফিল্ডার পাইনি, নিয়মিত লম্বা সময় স্লিপে দাঁড়িয়েছে কমজনই। মাশরাফি ভাইও টুকটাক দাঁড়িয়েছেন।”
“এমনকি, ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আমিও স্লিপে ফিল্ডিং করেছি। একটা ক্যাচ এসেছিল আমার দিকে, কিন্তু কিপার সোহান (নুরুল হাসান) ডাইভ দিয়ে ধরতে গিয়েছিল। ওর প্রচেষ্টা ভালো ছিল, কিন্তু পারেনি।”
“যাদের আমি দেখেছি, সেরা অবশ্যই ইমরোজ ভাই (জুনায়েদ সিদ্দিক)। আমি জাতীয় দলে ঢোকার পর স্লিপে উনাকে পেয়েছি। যতদিন ছিলেন দলে, স্লিপে নিয়মিত ছিলেন। পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক দেখেছি।”
“স্লিপে ইমরোজ ভাই অনেক ন্যাচারাল। খুব কমই তাকে ক্যাচ মিস করতে দেখেছি। অনেক ভাবলে হয়তো পাওয়া যেতে পারে দু-একটা মিস। স্লিপে তার পজিশন সেন্স, রিফ্লেক্স, ফোকাস, সবই ভালো। হাত সফট, বল আটকে যায় সুন্দরভাবে। নিঃসন্দেহে তিনিই সেরা স্লিপে।”
৩০ গজ বৃত্তে:
“এক নিঃশ্বাসেই অনেকের কথা বলে যেতে পারি, যারা সবাই খুব ভালো। সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, আফিফ হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাসির হোসেন…আরও অনেকে। সবাই বৃত্তের ভেতর দারুণ।”
“সবার মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া কঠিন। শান্ত ও আফিফকে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে রাখব। এই দুজনের মধ্যেও যদি একজনকে এগিয়ে রাখতে হয়, হয়তো ফটোফিনিশিংয়ে এগিয়ে থাকবে শান্ত।”
সীমানায়:
“সাব্বিরের কথা আগেই বললাম, বাউন্ডারিতে খুব ভালো। অনেক গ্রাউন্ড কাভার করতে পারে ও বলের কাছে দ্রুত যেতে পারে। আফিফ এখন দারুণ। অবিশ্বাস্য গতি ওর, বল তাড়া করে গুলির বেগে। ক্যাচিং হ্যান্ড ভালো। সৌম্যর কথাও বলতে হবে আলাদা করে।”
“তামিম ইকবাল ভাই দুর্দান্ত। উনার ক্যাচিং অসাধারণ, থ্রোয়িংও ভালো। হয়তো সাব্বির বা আফিফের মতো তিনি অতটা গতিময় নন, তবে ক্যাচিংয়ে তিনি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। রিয়াদ ভাইয়ের ক্যাচিংও খুব ভালো, তবে থ্রোয়িংয়ে একটু ঘাটতি আছে।”
“বাউন্ডারিতে কোনো একজনকে কোনোভাবেই বেছে নিতে পারব না। তামিম ভাই ও আফিফ এখানে যৌথভাবে সেরা। ক্যাচিংয়ে তামিম ভাই একটু ভালো, আফিফ এগিয়ে গতি ও ক্ষিপ্রতায়। সব মিলিয়ে দুজন একদমই সমানে সমান।”
সব মিলিয়ে সেরা:
“সব মিলিয়ে সেরা বলতে গেলে অলরাউন্ড ফিল্ডারদের কথাই বলতে হবে। সব পজিশনে যারা ভালো। মাশরাফি ভাই দারুণ ছিলেন প্রায় সবসময়ই। ইনজুরির কারণে উনার গতি কমে গেছে, তবে ক্যাচিং বরাবরই ভালো। থ্রোয়িং তো আরও ভালো, প্রচণ্ড জোর। রিয়াদ ভাই ভালো অলরাউন্ড ফিল্ডার।”
“সাকিব ভাই একসময় অনেক গতিময় ছিলেন। এখন একটু মন্থর হয়ে গেছেন, খুবই স্বাভাবিক। তারপরও খুব নিরাপদ ফিল্ডার সব জায়গায়। নাসির হোসেন একসময় দুর্দান্ত ছিল। পরে কাঁধের আর হাঁটুর ইনজুরি ওকে পিছিয়ে দিয়েছে। এখনও ভুগছে এসব নিয়ে।”
“এই দুজনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া ভীষণ কঠিন। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর আপাতত এগিয়ে রাখছি শান্তকে। স্লিপ থেকে শুরু করে বাউন্ডারি, সব পজিশনে দক্ষ সে। ওর ফিটনেস দুর্দান্ত, রিফ্লেক্স-অ্যান্টিসিপেশন-গতি, সব ভালো। যে কোনো পজিশনেই বলের কাছে যেতে পারে দ্রুত।”
“থ্রোয়িংয়ে শান্ত অবশ্যই সবার চেয়ে এগিয়ে। থ্রোয়িংয়ের কিছু মূল ব্যাপার আছে। ওর পিক আপ একদম পরিষ্কার, থ্রোয়ে জোর প্রচণ্ড, নিশানা নিখুঁত।”
“এরপর মাঠে চনমনে থাকা ও প্রাণবন্ত, কথা বলা, এসবও আছে। ওর আত্মবিশ্বাসও প্রচণ্ড। আদর্শ ফিল্ডারের জন্য আর কী লাগে! ফিল্ডিংয়ে শান্ত একটা ফুল প্যাকেজ।”
“তবে ওর সামনে এখনও অনেক সময় পড়ে আছে। আফিফেরও। অনেককেই দেখেছি, কিছুদিন ভালো ফিল্ডিং করে। পরে ইনজুরি ও অন্যান্য কারণে ধার হারায়। আশা করি, শান্ত ও আফিফ হারাবে না, বরং আরও উচ্চতায় তুলে নেবে নিজেদের।”