সেরা ব্যাটসম্যান ও বোলার নিয়ে যত আলোচনা-বিতর্ক হয়, সেরা ফিল্ডার নিয়ে হয় না ততটা। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে ফিল্ডিং গুরুত্ব পায় না অনেক সময়ই। ধারাবাহিক আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে দেশের ইতিহাসের সেরা ফিল্ডার। বর্তমান-সাবেক ক্রিকেটাররা জানাচ্ছেন তাদের পছন্দ।
আয়োজনের পঞ্চম পর্বে খালেদ মাসুদ জানাচ্ছেন তার পর্যবেক্ষণ।
খালেদ মাসুদ দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটের সঙ্গে আছেন প্রায় তিন দশক ধরে। দেশের ইতিহাসের সেরা উইকেটকিপার মনে করা হয় তাকে, একসময় ছিলেন বিশ্বের সেরা কিপারদের একজন। খেলা ছাড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচ, জাতীয় দলের ম্যানেজারসহ নানা ভূমিকায় ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন। সুদীর্ঘ পথচলায় কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতায় তিনি শোনালেন তার চোখে সেরা ফিল্ডারদের কথা।
স্লিপ:
“আমি এমন একজনের কথা বলব, যার নাম শুনে চমকে উঠতে পারেন অনেকেই। কখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি, দেশের ক্রিকেটে খুব বড় তারকা নয়। কিন্তু আমি যাদের দেখেছি, স্লিপে সেরা ফিল্ডার ফরহাদ হোসেন।”
“রাজশাহী দলে ফরহাদের সঙ্গে অনেক দিন খেলেছি আমি, খেলা ছাড়ার পরও দেখেছি নানা সময়ে। জাতীয় দলে খেলেনি বলে অনেকেই ছেলেটির এই দক্ষতার কথা জানেন না। কিন্তু সত্যি বলি, স্লিপে ফরহাদের মতো ফিল্ডার আমি বাংলাদেশে দেখিনি।”
“কিপার হিসেবে আমি তো দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখেছি। দেখতাম, ফরহাদ স্লিপে খুব স্মুথ। এত সুন্দর করে বল ধরে ফেলে! হয়তো অনেকের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, কিন্তু স্লিপে ফরহাদকে আমার অস্ট্রেলিয়ানদের মতোই মনে হয়েছে। স্লিপ ফিল্ডিং তার কাছে খুব সহজাত। একদম শুরু থেকেই স্লিপে ফিল্ডিং করতে করতেই সে দারুণ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।”
“রাজশাহীতে ভালো স্লিপ ফিল্ডার পাওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। একটি কারণ, উইকেট ও কন্ডিশন। জাতীয় লিগে আগে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে খেলা হতো। হোম ম্যাচগুলি রাজশাহী ও বগুড়ায় খেলা হতো। শীতের সময়, বিশেষ করে সকালের দিকে সবসময় পেসারদের জন্য সহায়তা মিলত। এজন্য স্লিপ ফিল্ডিংয়ের অভ্যাসটা হতো।”
“ফরহাদ অবশ্য শুধু পেস বলে নয়, স্পিনেও ভালো স্লিপ ফিল্ডার। গত ১৫ বছরে ঘরোয়া ক্রিকেট ভালোভাবে অনুসরণ করেছেন, এমন যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই আমার ধারণা ফরহাদের কথা বলবেই।”
৩০ গজ বৃত্তে:
“বৃত্তের ভেতর ভালো ফিল্ডার অনেক পেয়েছি আমরা। তবে সেরা বললে, আমার চোখে অলক কাপালী। সাব্বির রহমানের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং খুব ভালো। তবে গ্রাউন্ড ফিল্ডিং আর ক্যাচিং মিলিয়ে অলক এগিয়ে।”
“গালি-পয়েন্টে দুর্দান্ত ছিল অলক। চোখ, অ্যান্টিসিপেশন, রিফ্লেক্স, সব ভালো ছিল। স্টাম্পেও হিট করত বেশ। ইনজুরির পর ওর থ্রোয়ের জোর কমে গিয়েছিল, এটাকে বলা যায় ওর একমাত্র দুর্বলতা।”
“বৃত্তের ভেতরে রাজিন সালেহ, জাভেদ ওমর বেলিমও খুব ভালো ছিল। ওরা পরিশ্রম করে ভালো হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সহজাত যারা, তাদের প্রতি আমার ভালোলাগা বেশি। অলক ছিল সহজাত।”
“ফিল্ডিং কিন্তু দেখার সৌন্দর্যেরও ব্যাপার। অলক খুব স্টাইলিশ ছিল। দেখতে দারুণ লাগত ওর ফিল্ডিং।”
সীমানায়ন:
“এখানেও শুরুতে আমি একজনের কথা বলব, অবাক হতে পারেন অনেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা সময় দেখেছি, শফিউল ইসলাম অসাধারণ ফিল্ডিং করত। দুর্দান্ত সব ক্যাচ দিয়েছে। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংও ভালো ছিল। কিন্তু পরে আর সেই লেভেলটা ধরে রাখতে পারেনি। আপাতত তাই ওকে বিবেচনায় রাখছি না।”
“সীমানায় সেরা বলব আমি আফিফ হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। দুজনের গতি দুর্দান্ত, মাঠ অনেক কাভার করে। দ্রুত বলের কাছে যায়। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং, ক্যাচিং, সব ভালো।”
“সবচেয়ে যেটা বড় ব্যাপার, ওদের ফিল্ডিংয়ে ‘জান’ আছে। নিজেদের উজার করে দেয়। মাঠে খুব প্রাণবন্ত থাকে। খুবই আগ্রাসী ওরা, বলকে তাড়া করে। ফিল্ডিং উপভোগ করে। থ্রোয়িংও খুব ভালো, হাতে জোর অনেক, নিশানা দুর্দান্ত।”
সব মিলিয়ে সেরা:
“সব মিলিয়ে সেরা শান্ত ও আফিফ। হয়তো বলতে পারেন, ওরা দুজন এখনও খুব বেশি খেলেনি। আমরা বলছি বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরাদের কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারপরও ওরা দুজনই সেরা।”
“আমার যখন শুরু বা খেলেছি যত দিন, তখনও ভালো ফিল্ডার ছিল। আকরাম ভাই স্লিপে ভালো ছিলেন, বুলবুল ভাই (আমিনুল ইসলাম) বা আরও অনেকেই ভালো ছিলেন। তবে সত্যি বলতে, তখন তো ফিল্ডিং এতটা গুরুত্ব পেত না। এখনকার ফিল্ডিংয়ের লেভেলই অন্যরকম।”
“সেদিক থেকেই শান্ত ও আফিফ অনেক এগিয়ে। অলকের কথা বলেছি, আমার খুব প্রিয় ফিল্ডার। কিন্তু বৃত্তের বাইরে অতটা ভালো ছিল না। শান্ত ও আফিফ মাঠের যে কোনো জায়গায়, ম্যাচের যে কোনো সময় দুর্দান্ত। নির্ভর করার মতো। খুবই নিরাপদ। আফিফ এমনকি নিজের বলে ফিল্ডিংয়েও দারুণ। আমি আশা করব, ওরা আরও উন্নতি করবে এবং বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদের মধ্যে জায়গা করে নেবে।”