স্লিপ ক্যাচিংয়ের রাজা হওয়ার গল্প শোনালেন দ্রাবিড়

উপমহাদেশের দেশগুলি খুব ভালো স্লিপ ফিল্ডার উপহার দিতে পেরেছে কমই। অথচ এখান থেকেই নিজেকে দুর্দান্ত এক স্লিপ ফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ক্যাচের রেকর্ড তার, সেই ক্যাচগুলির উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল স্লিপে। কীভাবে এত ভালো স্লিপ ফিল্ডার হয়েছিলেন, দ্রাবিড় শোনালেন সেই গল্প।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2020, 12:21 PM
Updated : 21 June 2020, 01:24 PM

ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্রাবিড় টেস্টে সর্বকালের সেরাদের একজন। টেকনিক-স্কিল-টেম্পারামেন্টে তাকে মনে করা হয় আদর্শ। তবে ব্যাটিংয়ের তুলনায় তার ফিল্ডিং নিয়ে কথা হয় কমই। অথচ ২১০ ক্যাচ নিয়েছেন তিনি, উইকেট-কিপারদের বাইরে এটিই টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ক্যাচের রেকর্ড।

এই দ্রাবিড় বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি ছিলেন কিপার। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭ পর্যায়ে কিপিংই করতেন। কিন্তু কর্নাটকা রাজ্য দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুমুল বলে পরে খুলে রাখতে বাধ্য হন কিপিং গ্লাভস।

তবে স্রেফ ব্যাটসম্যান হয়ে মন ভরছিল না তার। তাই খুঁজতে থাকেন দলে আরও অবদান রাখার উপায়। সেই তাড়না থেকেই জন্ম নেয় ফিল্ডিংয়ে দলে অবদান রাখার ভাবনা। অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসনের সঙ্গে ‘লেসন লার্ন্ট উইথ দা গ্রেটস’ অনুষ্ঠানে দ্রাবিড় ফিরে গেলেন নিজেকে গড়ে তোলার দিনগুলোয়।

“ খেলায় সম্পৃক্ত থাকতে পছন্দ করতাম আমি। বল হাতে দলে অবদান রাখার মতো যথেষ্ট ভালো ছিলাম না, চেষ্টার যদিও কমতি রাখিনি। এরপর ভাবতে শুরু করলাম, ‘কীভাবে দলে ভূমিকা রাখা যায়, কী করা যায়...!’ মানে, ব্যাটসম্যান হিসেবে আর কী ভালো করা যায়... তখনই মাথায় এলো, খুব ভালো ক্যাচ নিতে পারলে, এটা দলে বড় অবদান রাখা হবে। মনে হবে, নিজেকে দলে সম্পৃক্ত রাখতে পারছি, ভূমিকা রাখছি।”

“এটা নিয়ে আমাকে অবশ্যই কাজ করতে হয়েছিল। ক্যাচিং সম্ভবত আমার সহজাত ছিল না। তাই স্লিপ ক্যাচিং অনেক অনুশীলন করতে হয়েছিল। শুরুর দিকে কৌশলগত খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপদেশ পেয়েছিলাম। শরীরের ভর থাকতে হবে পায়ের পাতার ওপর এবং ফিল্ডার হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে ভালো ভারসাম্য। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, খুব ভালো পজিশনে যেন থাকতে পারি।”

১৯৯৬ সালে টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখেন দ্রাবিড়। বছর দুয়েক পর সান্নিধ্য পান অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট বব সিম্পসনের, স্লিপ ক্যাচিংয়ে যিনি কিংবদন্তি। সিম্পসনের পরামর্শে ফিল্ডার হিসেবে নিজেকে আরও শাণিত করেন দ্রাবিড়।

“আমার মনে আছে, ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে ববি সিম্পসন এসে ভারতীয় দলের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছিলেন এবং স্লিপ ক্যাচিং নিয়ে অনেক ড্রিল করিয়েছিলেন। একটি ব্যাপারে তিনি অনেক জোর দিয়েছিলেন, তা হলো, পা অনেক বেশি নুইয়ে দেওয়া, যেন পায়ের পাতার ওপর ভর থাকে। এটিই আমি মনে গেঁথে নেই এবং অনেক অনুশীলন করি।”

নিরলস প্রচেষ্টা, নিবেদন ও বৈচিত্রময় অনুশীলন মিলিয়েই সেরা স্লিপ ফিল্ডারদের একজন হতে পেরেছিলেন বলে জানালেন দ্রাবিড়।

“স্লিপ ক্যাচিংয়ের মূল ব্যাপারই হচ্ছে অনুশীলন...যত বেশি অনুশীলন করা যায় এবং অনুশীলনে যত বৈচিত্র্য আনা যায়। গোঁয়ারের মতো শুধু ক্যাচের পর ক্যাচ নিয়ে লাভ নেই। ভারতের মতো দলে, স্পিনারদের সময় ক্যাচ নেওয়া ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার ক্যাচ সংখ্যার একশটির মতো ছিল দুই স্পিনার অনিল কুম্বলে ও হরভজন সিংয়ের বোলিংয়ে। আর সেগুলোর ৬০টি মতো নিয়েছিলাম ভারতে। কারণ আমরা তখন স্পিন সহায়ক উইকেট বানাতাম।”

টেস্টে ২১০ ক্যাচের ১০৬টিই দ্রাবিড় নিয়েছেন কুম্বলে ও হরভজেনের বোলিংয়ে (কুম্বলের বোলিংয়ে ৫৫, হরভজনের ৫১)। ভারতে ৯৮টি ক্যাচ নিয়েছেন দ্রাবিড়, রেকর্ড এটিও।