পা হারালেও মনোবল হারাননি আফগান কোচ

পায়ের সংক্রমণ হয়ে উঠছিল প্রাণঘাতী। তাই বাঁ হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে পা। তবে মস্তিষ্ক তো আর কাটা পড়েনি! আফগানিস্তানের ডিরেক্টর অব ক্রিকেট অ্যান্ডি মোলস আত্মবিশ্বাসী, পা হারালেও থমকে যাবে না কোচ হিসেবে তার পথচলা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2020, 03:58 PM
Updated : 13 June 2020, 03:58 PM

গত এপ্রিলে কেপ টাউনে কেটে ফেলতে হয়েছে ৫৯ বছর বয়সী সাবেক এই ইংলিশ ক্রিকেটারের এক পায়ের অংশ। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে মোলস বলেছেন, মানসিকভাবে তিনি যথেষ্টই চাঙা আছেন।

“নিজের করণীয় নিয়ে কোনো সংশয়ই আমার নেই। আমি হাঁটুর নিচ থেকে আমার পা হারিয়েছি, কিন্তু মস্তিষ্ক হারাইনি। ক্রিকেট জ্ঞান হারিয়ে ফেলিনি। আমার ক্রিকেটীয় কার্যক্রমের কথা বললে, আমি এটিকে কোনো প্রতিবন্ধকতা হিসেবেই দেখছি না।”

মোলসের পায়ের সমস্যার শুরু আরও কয়েক মাস আগে। আফগানিস্তান দল তখন বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আবু ধাবিতে। মোলস তখন ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্বে।

৪৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৫ কিলোমিটার হাঁটার পর পায়ে প্রচণ্ড জ্বালা অনুভব করছিলেন। দেখলেন, পায়ের পাতা পুড়ে গেছে। সেখান থেকে পরে সংক্রমণ। গত সেপ্টেম্বরে যখন বাংলাদেশ সফরে এসেছিল আফগানিস্তান, মোলস হাঁটছিলেন ক্রাচে ভর দিয়ে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় এক পর্যায়ে বাংলাদেশেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কিছুদিন।

পরে মোলস ভেবেছিলেন, পা ঠিক হয়ে গেছে। কিছুদিন স্বাভাবিকও ছিলেন। গত মার্চে ভারতে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের সময়ে আবার ফিরে আসে সমস্যা। চিকিৎসার জন্য উড়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকায়। শুরুতে তার পায়ের পাতা প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু সমস্যা যায় না তাতেও, সংক্রমণ যে ছড়িয়ে পড়েছে!

এরপর এপ্রিলের শুরুর দিকে ডাক্তারদের কাছ থেকে পান সেই দুঃসংবাদ। পা কেটে না ফেললে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে আরও, জীবন নিয়েই থাকবে শঙ্কা। আধঘণ্টা ভেবে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেন মোলস।

“শল্যবিদ আমাকে চার-পাঁচ দিন ধরেই বলছিলেন, সংক্রমণ যেভাবে ছড়াচ্ছে, তার ভালো লাগছে না। হয়তো পা কেটে ফেলতে হতে পারে। ৪ এপ্রিল সকালে তিনি জানালেন, কেটে না ফেললে এটি পুরো পায়ে ছড়িয়ে যাবে এবং ক্রমে আমার জীবন হুমকিতে পড়বে।”

“সিদ্ধান্তটি যতটা কঠিন মনে হচ্ছে, আসলে তা খুব সাধারণই ছিল। আমি তাকে (শল্যবিদ) বলেছিলাম, ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স কিভাবে খেলতে হয়, এটা নিশ্চয়ই আপনার কাছ থেকে আমি জানতে চাইব না। কাজেই শল্যবিদ হিসেবে আপনার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলব না।’ সে ঘর থেকে বের হওয়ার পর নিজেকে নিয়ে খুব খারাপ লাগছিল আমার, ঠোঁট উল্টো আাসছিল। পরে সামলে নিয়েছি। অবশ্যই এভাবে এটি কঠিন, অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে যারা আমাকে চেনেন, তারা জানেন যে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি।”

আপাতত মোলস চেষ্টা করছেন কৃত্রিম পায়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে। অস্ত্রোপচার করানোর পরপরই তিনি আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন, ডিরেক্টর অব ক্রিকেট ও প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে চান। তার বিশ্বাস, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোচ হিসেবে তাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

“পুরোপুরিভাবে হাঁটাচলা শুরু করতে মাসখানেক লাগবে আর। এই সময়ের মধ্যে তো এমনিতেও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। কোচিং ক্যারিয়ার চালিয়ে যেতে তাই সমস্যা হবে না। সত্যি বলতে, এটি কাটিয়ে উঠতে পারলে বরং কোচ হিসেবে আমি আরও ভালো হয়ে উঠব, প্রমাণ হবে যে প্রতিবন্ধকতা জয় করতে পারি। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে ক্রিকেটারদের অবস্থা কেমন হয়, সেটি বুঝতে পারব।”

“আপাতত আমি নতুন পায়ে (কৃত্রিম) অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। সবকিছু ভালোই চলছে। হালকা ব্যথা আছে, তবে বড় কোনো সমস্যা নেই। আফগানিস্তানের ডিরেক্টর অব ক্রিকেট হিসেবে অনলাইনে কাজ করে যাচ্ছি।”

আফগানিস্তান দল অবশ্য করোনাভাইরাস বিরতি শেষে অনুশীলন শুরু করেছে। মোলস জানালেন, মানসিকভাবে তিনি শক্ত আছেন ও সুযোগ হলেই দলের সঙ্গে যোগ দেবেন।

খেলোয়াড়ি জীবনে ২৩০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মোলস, রান করেছেন ১৫ হাজারের বেশি। ইংলিশ কাউন্টি ওয়ারউইকশায়ারেই করেছেন ১৩ হাজারের বেশি রান। পরে খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে। থিতুও হয়েছেন সেখানেই।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার কোচিংয়ের শুরু ২০০৩ সালে কেনিয়ার কোচ হিসেবে। এরপর ছিলেন স্কটল্যান্ডের কোচ। নিউ জিল্যান্ডে ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করিয়ে পরে জাতীয় দলে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্যাটিং কোচ ও প্রধান কোচ হিসেবে। ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে যোগ দেন ব্যাটিং কোচ হিসেবে। নানা সময়ে প্রধান কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন। গত জুনে বাড়তি দায়িত্ব নেন নির্বাচকের। গত অক্টোবর থেকে আছেন ডিরেক্টর অব ক্রিকেট হিসেবে।