বলে লালা ব্যবহার নিয়ে হোল্ডিং-ওয়াকার-ডোনাল্ডদের ভাবনা

বল চকচকে রাখতে লালা বা থুতুর ব্যবহার ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বোলার-ফিল্ডারদের বলে থুতু দিয়ে ট্রাউজার বা জার্সিতে ঘষতে দেখা ক্রিকেটের সবচেয়ে নিয়মিত দৃশ্যের একটি। করোনাভাইরাসের জন্য থমকে যাওয়া ক্রিকেট আবার শুরু হলে, প্রথাগত এই নিয়ম হতে পারে নিষিদ্ধ। তবে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে ভারসাম্য রাখতে বল পলিশ করার প্রয়োজনীয়তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন নীতিনির্ধারকরা। তাই আইসিসি কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারের কথা ভাবছে। সাবেক পেসারদের কেউ খুশি এই সিদ্ধান্তে, কেউ দাঁড়িয়েছেন বিপক্ষে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2020, 02:34 PM
Updated : 27 April 2020, 03:23 PM

মাইকেল হোল্ডিংয়ের অবস্থান বল টেম্পারিং বৈধ করার বিপক্ষে। বলে লালার বদলে কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারের ভাবনা একদমই মানতে পারছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই কিংবদন্তি পেসার।

“আমি পড়েছি যে, আইসিসি কোভিড-১৯ রোগের কারণে বলে লালা ব্যবহার থেকে ক্রিকেটারদের দূরে রাখার কথা ভাবছে এবং বল উজ্জ্বল করতে কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারের অনুমতি দিতে যাচ্ছে, সেটা আবার আম্পায়ারের সামনে। আমি এর পেছনের যুক্তি বুঝতে পারছি না।”

লালা ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন আগেও ছিল সেটা উচ্চকিত হয়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর। কভিড-১৯ মহামারীর জন্য আপাতত মাঠের ক্রিকেট বন্ধ রয়েছে। আবার খেলা শুরু হলে লালা ব্যবহার নিরাপদ হবে কী না এ নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। হোল্ডিং মনে করেন, এই সংশয়ের ধাপ পার হয়ে পুরোপুরি নিরাপদ পরিস্থিতিতেই কেবল ক্রিকেট শুরু করা উচিত। যেখানে বলে লালা ব্যবহারে কোনো বিধি-নিষেধ থাকবে না।

“যদি বলা হয়, সবাই প্রাকৃতিকভাবে নিরাপদ পরিবেশে আছে, একই হোটেলে থাকছে… তাহলে কেন কারো লালা নিয়ে দুর্ভাবনা? এখন যা করা হচ্ছে সে অনুযায়ী ওই ব্যক্তির অবশ্যই কোভিড-১৯ মুক্ত হওয়া উচিত। যদি আইসিসি মনে করে, দুই সপ্তাহ সময় কারো নিজেকে কোভিড মুক্ত প্রমাণ করার নিখুঁত পদ্ধতি নয় সেক্ষেত্রে সবাইকে ওই রকম ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ ফেলার অর্থটা কী? অমন পরিস্থিতিতে কেন ক্রিকেট চাইতে হবে? হয় এটা নিরাপদ, নয়তো নয়। দয়া করে অনুমান করে কিছু করবেন না।”

পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনুস মনে করেন, বলে লালা ও ঘামের ব্যবহার বোলারদের অভ্যাস, যা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।

“ফাস্ট বোলার হিসেবে আমি এটা মানতে পারছি না কারণ এটা (লালা ও ঘামের ব্যবহার) প্রথাগত প্রক্রিয়া। একটি বল সারা দিনই হাত বদল হয়, আপনি দৌড়াচ্ছেন, হাপাচ্ছেন, ঘাম ঝরছে এবং লালা ব্যবহার করছেন, এটা পরিকল্পনা ছাড়াই হয়ে যায়। এটা একটা অভ্যাস এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।”

“আমি জানি না কীভাবে এই আলোচনা এসেছে। কিন্তু আমার মনে হয়, যারা চায় খেলাটি হোক তারা ঘরবন্দি থেকে হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা এনিয়ে খুব বেশি ভাবছে। লালার বদলে কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারের নতুন চিন্তাটি সমাধান কী না এ নিয়ে আমি সন্দিহান। বল শাইনিংয়ে পূর্ব নির্ধারিত বস্তু ব্যবহারে বোলারকে বাধ্য করা যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে বাস্তবিকভাবে ঘাম অথবা লালা ব্যবহার থেকে বোলারকে দূরে রাখা সম্ভব নয়।”

অ্যালান ডনাল্ড অবশ্য আইসিসির ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারে আগে থেকেই পক্ষে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার।

“বল টেম্পারিংয়ের বৈধ করা নিয়ে আমি একমত। ২০০০ সালের দিকে আমি একটি প্রতিবেদনে এই কথা বলেছিলাম। যাই হোক এটা হচ্ছে। আমরা দেখি ছেলেরা মাটিতে বল ছুঁড়ে মারছে এবং আম্পায়াররা বলছে উপরে নিক্ষেপ করতে এবং এটা খুব স্পষ্ট যে তারা কী করছে। এটা কাজে দিবে যদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ হয়।”

“আমি অবাক হয়েছি, যখন শুনলাম এটা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আমি শুনতে আগ্রহী নামি-দামি ব্যাটসম্যানরা এ নিয়ে কি বলে। কারণ আমি নিশ্চিত তাদেরও কিছু বলার থাকবে।”

ভারতের সাবেক পেসার আশীষ নেহরার অবস্থান কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারের বিরুদ্ধে। তার মতে, স্রেফ একপাশ চকচকে রাখলেই তো রিভার্স সুইং করানো যাবে না। আরেকপাশ ভারীও করতে হবে। লাল ও ঘামের ব্যবহার ছাড়া সেটা কীভাবে সম্ভব, প্রশ্ন তার।

“বল টেম্পারিং কী? নখ, বোতলের ছিপি, জুতার স্পাইক অথবা অন্য কিছু দিয়ে যখন বলের একপাশ ঘষা হয়। এটা বল রিভার্স হতে সাহায্য করে না। ব্যবহার করতে হয় লালা, ঘাম…যা শুধু বলের এক পাশ চকচকে করে না, অন্য পাশ ভারীও করে। এভাবেই প্রথাগত রিভার্স সুইং পাওয়া যায়।”

আম্পায়ারের তত্ত্বাবধানে বল চকচকে রাখার কাজ কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে নেহরার।

“বল চকচকে করতে কতবার আমি আম্পায়ারের কাছে কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারের অনুমতি চাইতে পারব? লালা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ডেলিভারির সময়ই বল ঘষতে পারি। বল শাইন করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। মাঝেমধ্যে একপাশ পুরোপুরি চকচকে করতে হয় না, বিশেষ করে যদি বল সিমের ওপর ফেলা যায়। মাঝে মধ্যে বল বাউন্ডারিতে কিংবা গ্যালারিতে গিয়ে কিছুটা নষ্ট হয়, তখন অন্যভাবে শাইন করতে হয়।”

ভারতের হয়ে ১৭ টেস্ট, ১২০ ওয়ানডে ও ২৭ টি-টোয়েন্টি খেলা নেহরার মতে, একেক বলকে মেইনটেইন করতে হয় একেকভাবে। মাঝে মধ্যে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে বল শাইনিংয়ের পদ্ধতি।

“নতুন বল শাইন করতে হয়ে অন্যভাবে। যখন বল পুরাতন হয়ে যায় তখনই রিভার্স হয়। মাঝেমধ্যে অনেক ঘাম ব্যবহার করতে হয়। যখন বল রিভার্স করে না, তখন ব্যবহার করা হয় লালা। বল যখন নতুন, দাগ পড়া জায়গায় হালকা থুতু ব্যবহার করে শাইন করতে হয়। আমি বলতে চাচ্ছি, বল শাইন করার অনেক উপায় আছে। তাই তদারকির মাধ্যমে বল শাইন করতে কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারের বৈধতা হুট করে বল সুইংয়ে সাহায্য করবে না।”

এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পথও বাতলে দিয়েছেন নেহরা।

“প্রতি দলকে নির্দিষ্ট একজন বাছাই করার অনুমতি দেওয়া যায়, বিশেষ করে যে কিনা লালা ব্যবহারের দায়িত্বে থাকবে, যখন বল শাইনিংয়ের প্রয়োজন হবে। এটাই উৎকৃষ্ট বিকল্প পদ্ধতি কারণ এভাবেই বল শাইনিংয়ের প্রথাগত কাজটা চালিয়ে যাওয়া যাবে।”

পাকিস্তানের সাবেক পেসার আজহার মাহমুদের কৃত্রিম বস্তু ব্যবহারে কোনো আপত্তি নেই। তিনি শুধু এর কার্যপ্রণালী দেখতে আগ্রহী।

“এই ধরনের পদক্ষেপে আমার আপত্তি নেই, যদিও আমি বেশি আগ্রহী, তারা কীভাবে এটাকে পর্যবেক্ষণ করবে এবং কী বস্তু ব্যবহার করবে তা দেখতে। আমার মনে হয় বলের কারিগররা এখানে বড় ভূমিকা রাখবে, যেহেতু তারা জানবে কী ধরনের বস্তু বলে ব্যবহার করলে চামড়ার জন্য ভালো হবে। এমন হতে পারে বল শাইন করতে বোলাররা ছোট বোতল ব্যবহার করবে, হ্যান্ড স্যানেটাইজারের মত।”