সৌরভ-পন্টিংদের ছাড়িয়ে, টেন্ডুলকারের পাশে কোহলি

১২ বছর! হ্যাঁ, একজনের ব্যাটে এক বছরে হাজার রান দেখতে ওয়ানডে ক্রিকেটকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে এক যুগ। ১৯৮৩ সালে ডেভিড গাওয়ার গড়েছিলেন সেই ইতিহাস। সময়ের পরিক্রমায় এই মাইলফলক এখন হয়ে উঠেছে নিয়মিত দৃশ্য। এই ২০১৯ সালেই ওয়ানডেতে হাজার রান করেছেন ৬ জন। তাদের মধ্যে একটি নাম ছিল অবধারিতই, বিরাট কোহলি। ওয়ানডে ক্রিকেটের অনেক রেকর্ড গুঁড়িয়ে এগিয়ে চলা ব্যাটসম্যান এই বছরের হাজার রানে ছুঁয়েছেন আরেকটি রেকর্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2019, 01:44 PM
Updated : 25 Dec 2019, 02:33 PM

এ বছর ২৫ ইনিংসে ১ হাজার ৩৭৭ রান করেছেন কোহলি। এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজার ওয়ানডে রান ছুঁলেন তিনি এই নিয়ে ৭ বার। ছাড়িয়ে গেলেন সৌরভ গাঙ্গুলি, রিকি পন্টিং ও কুমার সাঙ্গাকারাকে। জায়গা করে নিলেন শচিন টেন্ডুলকারের পাশে।

সৌরভ, পন্টিং ও সাঙ্গাকারা এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন ৬ বার। ৭ দফায় বছরে হাজার রানের স্বাদ পেয়ে বিশ্বরেকর্ড এখন যৌথভাবে কোহলি ও টেন্ডুলকারের।

টেন্ডুলকার প্রথমবার এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন ১৯৯৪ সালে। সেটি ছিল তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যাওয়ার বছর। মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে উঠে এসেছিলেন, সেঞ্চুরির দীর্ঘ অপেক্ষা ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেও সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়টির শুরু সেই বছর থেকে।

এরপর ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে হাজার রান স্পর্শ করেছেন টেন্ডুলকার।

কোহলির কীর্তি একদিক থেকে অবিশ্বাস্য। ৭ দফায় হাজার রান ছুঁয়েছেন তিনি গত ৯ বছরের মধ্যেই! কিন্তু তার ব্যাটে রানের জোয়ার এতটাই নিয়মিত হয়ে উঠেছে যে, অভাবনীয় এই ধারাবাহিকতাই হয়ে উঠেছে যেন খুব স্বাভাবিক। বরং মাঝে ২ বছর হাজার রান কেন করতে পারেননি, সেটিই হতে পারে প্রশ্ন!

২০১১ থেকে ২০১৪, টানা ৪ বছর কোহলি পেরিয়েছেন এই মাইলফলক। ২০১৭ থেকে এই বছর পর্যন্ত আবার টানা ৩ বার। মাঝে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পারেননি। সত্যিকার অর্থে তার গড়পড়তা বছর গেছে ২০১৫। ২০ ইনিংসে ৬২৩ রান করেছিলেন ৩৬.৬৪ গড়ে। অভিষেক বছরের পর ওই একবারই তার বাৎসরিক গড় নেমেছিল ৪৭-এর নিচে।

২০১৬ সালে তিনি হাজার ছুঁতে পারেননি স্রেফ ম্যাচ বেশি খেলেননি বলেই। ১০ ওয়ানডে খেলেই সেবার ৭৩৯ করেছিলেন ৯২.৩৭ গড়ে!

সময়ের যা বাস্তবতা, তাতে আগামী বছরই কোহলি যদি টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে না যান, তাহলে সেটিই হবে বিস্ময়। রেকর্ডটি শুধু নিজের করে নেওয়াই নয়, এমন উচ্চতায় রেখে যেতে পারেন তিনি, যেটি হতে পারে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ছবি: বিসিসিআই

এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজার রান ৪ বার ছুঁয়েছেন সনাৎ জয়াসুরিয়া, মাহেলা জয়াবর্ধনে, তিলকরত্নে দিলশান, মোহাম্মদ ইউসুফ ও রোহিত শর্মা। কোহলির মতো রোহিতও এবার নিয়ে টানা তিন বছর দেখা পেলেন এই মাইলফলকের।

তিন বার করে এক বছরের হাজার রান করেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রাহুল দ্রাবিড়।

দুই বার করে যারা করেছেন, সেই তালিকা বেশ লম্বা। সেখানে আছেন মার্ক ওয়াহ, আমির সোহেল, হাশিম আমলা, মারভান আতাপাত্তু, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, অরবিন্দ ডি সিলভা, ক্রিস গেইল, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, ডেসমন্ড হেইন্স, ইজাজ আহমেদ, ইনজামাম-উল-হক, অজয় জাদেজা, জ্যাক ক্যালিস, গ্যারি কারস্টেন, মোহাম্মদ হাফিজ, বিরেন্দর শেবাগ, উপুল থারাঙ্গা ও শেন ওয়াটসন।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যাটসম্যান এক বছরে হাজার রান করেছেন ২০০৭ সালে। সেবার ১২ জন ব্যাটসম্যান পেয়েছিলেন এই স্বাদ- ইয়ান বেল, পল কলিংউড, এবি ডি ভিলিয়ার্স, মহেন্দ্র সিং ধোনি, সৌরভ গাঙ্গুলি, ম্যাথু হেইডেন, মাহেলা জয়াবর্ধনে, মোহাম্মদ ইউসুফ, রিকি পন্টিং, গ্রায়েম স্মিথ, শচিন টেন্ডুলকার ও যুবরাজ সিং।

২০০২ সালে ১০ জন ব্যাটসম্যানের ধরা দিয়েছিল এই অর্জন, ২০১৩ সালে ৯ জন। গত শতাব্দীতে সবচেয়ে বেশি ছিল ১৯৯৬ সালে, ৮ জন।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক বছরে হাজার রানের স্বাদ একবারই পেয়েছিলেন একজন। ২০০৬ সালে ২৮ ইনিংসে ১ হাজার ৩৩ রান করেছিলেন শাহরিয়ার নাফিস,। গড় ছিল ৪২.৩২।

বছরে ৯০০ রানও নেই আর কারও। শাহরিয়ারের পর হাজারের সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে পেরেছেন ইমরুল কায়েস। ২০১০ সালে ২৭ ইনিংসে ৮৬৭ রান করেছিলেন তিনি ৩২.১১ গড়ে। ২০০৮ সালে তামিম ইকবাল ৮০৭ রান করেছিলেন ৩১.০৩ গড়ে। ২০১০ সালে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে এসেছিল ৩২.৭৯ গড়ে ৭৮৭ রান।