ফাইনাল মানেই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের হতাশা

আরেকটি ফাইনাল, হতাশার আরেকটি অধ্যায়। যে পর্যায়ের ক্রিকেটই হোক, ফাইনাল মানেই যেন বাংলাদেশের হৃদয়ভাঙার নিয়তি! জাতীয় দল, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মতো এবার উদীয়মানদের দলও হারল ফাইনাল। একের পর এক ম্যাচে দাপুটে জয়ে ফাইনালে আসা দল খেই হারাল আসল সময়ে। প্রথমবার শিরোপা জিতল পাকিস্তান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2019, 07:08 AM
Updated : 23 Nov 2019, 11:11 AM

ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশকে ৭৭ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাকিস্তান।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার দুইবার জীবন পেয়ে পাকিস্তানের রোহাইল নাজির খেলেন ১১১ বলে ১১৩ রানের ইনিংস। ৫০ ওভারে তার দল তোলে ৩০১ রান। ব্যাটিং লাইন আপে ৬ জন আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটার নিয়ে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ২২৪ রান।

টুর্নামেন্টের আগের তিন আসরে দুইবার রানার্সআপ হওয়ার পর এবার শেষ হাসি হাসতে পারল পাকিস্তান। বাংলাদেশের প্রথম ফাইনাল শেষ হলো তিক্ততায়। মাঠে আসা হাজার পাঁচেক দর্শক মাঠ ছাড়লেন হতাশায়।

টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ হারিয়েছিল হংকং, ভারত ও নেপালকে। সেমি-ফাইনালে উড়িয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তানকে। সব ম্যাচেই জয়ের ধরণ ছিল একই। টস জয়, আগে বোলিং। প্রতিপক্ষকে নাগালের মধ্যে আটকে রেখে রান তাড়ায় অনায়াস জয়। ফাইনালেও সেই পথ পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার মাঝপথেই হয়েছে পথচ্যুত।

টস জিতে আগে বোলিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। শুরুটা খারাপ ছিল না। কিন্তু এরপর বাজে বোলিং-ফিল্ডিং আর পাকিস্তানের দারুণ ব্যাটিংয়ে লক্ষ্যটা দাঁড়ায় অনেক বড়। সেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা।

ফাইনালে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে ফিল্ডিংও। সেঞ্চুরিয়ান রোহাইলকে ২৩ রানে জীবন দিয়েছেন ইয়াসির আলি চৌধুরি রাব্বি। এ দিন ইয়াসির ক্যাচ ছেড়েছেন আরও দুটি। পরে ব্যাটিংয়ে নিজেও জীবন পেয়েছেন শূন্য রানে। কিন্তু পারেননি রোহাইলের মতো কাজে লাগাতে।

ম্যাচের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। নতুন বলে হাসান মাহমুদ ও সুমন খান খারাপ করেননি। ছোট ছোট সুইং আর বাড়তি বাউন্সে দুজন অস্বস্তিতে ফেলেন পাকিস্তানের টপ অর্ডারকে।

সুমন ফিরিয়ে দেন দুই ওপেনারকেই। বাড়তি লাফানো আউট সুইঙ্গারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ওমাইর ইউসুফ। শুরুর অস্বস্তি ঝেরে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন হায়দার আলি। ২৩ বলে ২৬ রান করা ব্যাটসম্যানকে সুমন ফেরান স্লোয়ার বাউন্সারে।

৪১ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন রোহাইল ও ইমরান রফিক। শুরুতে উইকেট আগলে রেখে এক-দুই করে রান বাড়াতে থাকেন দুজন। থিতু হওয়ার পর বাড়ান রানের গতি। তৃতীয় উইকেটে গড়েন ১১৭ রানের জুটি।

৬২ রানে ইমরানের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। মেহেদি হাসানের অফ স্পিনে অনেকটা ছুটে এসে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার।

অথচ এই জুটি জমে ওঠার আগেই ভাঙতে পারত বাংলাদেশ। বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের প্রথম বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন রোহাইল। ধরতে পারেননি ইয়াসির।

রোহাইল আরেকদফায় বেঁচে যান ৭৮ রানে। এবার তানভির নিজের বলে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি নিজেই।

সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে রোহাইল করেছেন সেঞ্চুরি। তার ১২ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংস শেষ হয়েছে হাসানের স্লোয়ারে এলবিডব্লিউ হয়ে।

আউট হওয়ার আগে সৌদ শাকিলের সঙ্গে ৮৫ রানের জুটি গড়েন রোহাইল। শাকিল করেন ৪০ বলে ৪২।

শেষ দিকে ইয়াসির হাতছাড়া করেন দুটি সহজ ক্যাচ। বিশাল দুটি ছক্কায় খুশদিল শাহ করেন ১৬ বলে ২৭, আমাদ বাট ৭ বলে ১৫। শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তান তুলেছে ৯৭ রান।

শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলিং ছিল বেশ বাজে। সুমন একের পর এক লেংথ বল করে গেছেন এবং মার খেয়েছেন। টুর্নামেন্টের সফলতম বোলার এই পেসার ৩ উইকেট নিলেও রান গুনেছেন ৭৫। হাসান চেষ্টা করেছেন একটু বৈচিত্র্যের, সফল খুব একটা হননি। আগের ম্যাচগুলিতে দারুণ কার্যকর বোলিং করলেও সৌম্য সরকার এদিন ১০ ওভারে দিয়েছেন ৭৬ রান।

এই রান তাড়ায় ম্যাচ জিততে প্রয়োজন ছিল সৌম্য ও মোহাম্মদ নাঈম শেখের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু। সেটির ইঙ্গিত ছিল, পূর্ণতা পায়নি।

চোখধাঁধানো এক ফ্লিকে ছক্কা, কাভার ড্রাইভে চার মারার পর সৌম্য আউট হয়েছেন তার মতো করেই। বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ বলে ১৫ রান করে।

অসাধারণ একটি ফ্লিক শটে ছক্কার পর নাঈমও ছুঁড়ে এসেছেন উইকেট। মোহাম্মদ হাসনাইনের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল পুল করতে গিয়ে তুলে দিয়েছেন মিড অনে।

তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও ইয়াসির চেষ্টা করেছেন দলকে লড়াইয়ে রাখতে। তাদের জুটিও খুব বড় হয়নি। ৫১ রানের জুটি শেষ হয়েছে ইয়াসিরের বিদায়ে। শূন্য রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া ব্যাটসম্যান আমাদ বাটের স্লোয়ারে ফিরেছেন ২২ রান করে।

শান্ত ৪৬ রান করে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন আলগা শটে। জাকির হাসান, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনরাও একই পথের পথিক।

এরপর আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান খেলেছেন দারুণ কিছু শট। দর্শকেরা পেয়েছেন বিনোদন। তবে এই দুজনও পারেননি ইনিংস বড় করতে। দল তাই যেতে পারেনি জয়ের কাছে।

থার্ডম্যানে সামিন গুলের অসাধারণ ক্যাচে শেষ হয়েছে আফিফের ৪৯ রানের ইনিংস। ৩ ছক্কায় মেহেদি করেছেন ৪২। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়েছে ৩৯ বল আগেই।

বাংলাদেশের শেষের একমাত্র প্রাপ্তি ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট সৌম্য সরকার। ৬১ গড় ও প্রায় ১০৯ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২৪৪, উইকেট নিয়েছেন ৫টি। তবে ৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একজনের কাছে উদীয়মানদের টুর্নামেন্টের এমন পারফরম্যান্স প্রত্যাশিতই। এটিকে তাই সান্ত্বনা বলার জো নেই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ইমার্জিং : ৫০ ওভারে ৩০১/৬ ( ওমাইর ৪, হায়দার ২৬, রোহাইল ১১৩, ইমরান ৬২, শাকিল ৪২, খুশদিল ২৭, আমাদ ১১*, বদর ০*; হাসান ১০-১-৫২-২, সুমন ১০-০-৭৫-৩, মেহোদি ১০-১-৩৯-১, সৌম্য ১০-০-৭৬-০, তানভির ৮-০-৪৩-০, আফিফ ২-০-১৫-০)।

বাংলাদেশ ইমার্জিং: ৪৩.৩ ওভারে ২২৪ (নাঈম ১৬, সৌম্য ১৫, শান্ত ৪৬, ইয়াসির ২২, আফিফ ৪৯, জাকির ৯, অঙ্কন ৫, মেহেদি ৪২, সুমন ৩, হাসান ৮, তানভির ৫*; সামিন ৫-০-৪৩-১, হাসনাইন ৮.৩-০-৩২-৩, আমাদ ৬-০-২৯-১, উমের ১০-০-৫২-১, খুশদিল ৮-১-৩৯-২, বদর ৬-০-২৭-২)।

ফল: পাকিস্তান ইমার্জিং দল ৭৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহাইল নাজির

ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: সৌম্য সরকার