বিদায়ী ম্যাচের পর নিজের দল থেকে একটি স্মারক উপহার পেয়েছেন মাসাকাদজা। তার ক্যারিয়ারের ফ্রেমে বাঁধানো কিছু মুহূর্ত। নিচে লেখা ‘থ্যাংকস মুধারা হ্যামি।’ জিম্বাবুয়ের আঞ্চলিক একটি ভাষায় মুধারা মানে সম্মানিত, পরিণত কোনো ব্যক্তি। মজার ব্যাপার হলো, মাসাকাদজা ‘মুধারা’ নাম পেয়ে গিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের শুরুতেই, সেই ১৭ বছর বয়সে।
সেই যুগে অ্যান্ডি ও গ্রান্ট ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিকদের কাছেও মাসাকাদজা ছিলেন ‘মুধারা।’ সিনিয়রদের কাছে তখনই তাকে মনে হতো পরিণত। ক্রমে মাসাকাদজা নিজেই হয়ে উঠেছেন সিনিয়র। অল্প বয়সেই অমন নাম পেয়ে যাওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি মজা করে বললেন, “অন্তত মুধারা হয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারছি!”
শেষ ম্যাচে খেলেছেন ওই নামের মতোই। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। তার ৪২ বলে ৭১ রানের ইনিংস জিতিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। আফগানদের বিপক্ষে ৯ বারের দেখায় যেটি তাদের প্রথম জয়!
ক্যারিয়ার এভাবে শেষ করতে পারায় তার চোখেমুখে ছিল তৃপ্তির ছায়া। উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল কণ্ঠেও।
ব্যাট হাতে ঝড় তোলার আগে ছিল আবেগের ঝড়। ইনিংস শুরু করতে মাঠে নামার সময় ‘গার্ড অব অনার’ পেয়েছেন দুই দলের কাছ থেকে। এই ভালোবাসা ও সম্মান ছুঁয়ে গেছে তার হৃদয়।
“ছেলেরা আমাকে যে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়েছে, সেটির মাঝ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছিল বিশেষ অনুভূতি। আমি ভেবেছিলাম, ম্যাচ শেষে কিছু করা হতে পারে। আবেগ অনেকটাই স্পর্শ করেছিল। পরে মাঠ ছাড়ার সময় আমি বেশ খুশি ছিলাম, কারণ দলকে ভালো অবস্থানে নিতে যা করার প্রয়োজন ছিল, তার অনেকটাই করতে পেরেছি। আজকের পারফরম্যান্সে আমি তৃপ্ত।”
আউট হয়ে যখন উইকেট ছাড়ছেন, শেষবারের মতো ছেড়ে যাচ্ছেন মাঠ, চোখের কোনায় কি চিকচিক করেনি অশ্রু? মাসাকাদজা হেসে উঠলেন শব্দ করে। শোনালেন আবেগের নানা গল্প।
“নাহ, মাঠ ছাড়ার সময় ছিল না। তবে সকালে খানিকটা পড়েছে চোখের পানি, দলের সবার সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম। যেদিন অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেদিনও অশ্রু সামলাতে পারিনি। আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল।”
“এমনিতে আবেগে খুব একটা কাবু হই না আমি। তবে অবসরটা একটু আবেগপ্রবণ করেছে বটে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে দলকে নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় অনেক কষ্টে মনে হয় তিনটি বাক্য শেষ করতে পেরেছিলাম… আমার জন্য অনেক আবেগময় সময়।”
শেষবেলায় অশ্রু ছিল না, শেষ সংবাদ সম্মেলনে ছিল হাসির ফোয়ারা। নানা প্রসঙ্গেই হাসলেন অনেকবার। মজা করলেন। ক্যারিয়ারে পেছন ফিরে তাকিয়ে, নানা কথায় আবগপ্রবণ হয়েছেন বটে খানিকটা। তবে মুখে হাসি আর কথায় সন্তুষ্টিই চোখে পড়েছে বেশি।
অনেক উত্থান-পতনের ক্যারিয়ার শেষে এই যে হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারা, এটিই বা কজন ক্রিকেটার পায়! মাসাকাদজা অন্তত এই তৃপ্তি নিয়ে শেষ করতে পারলেন।