প্রথম দুই সেশনে দাপট দেখানো বাংলাদেশ ভেঙে পড়েছিল শেষ সেশনে। কিন্তু দলকে গুঁড়িয়ে যেতে দেননি তাইজুল ও নাঈম। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ৩১৫।
স্কোরকার্ড দেখে প্রথম দিনে কোনো এক দলকে এগিয়ে রাখা কঠিন। তবে শেষের স্বস্তি নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের। সপ্তম উইকেট যখন পড়েছিল, দিনের খেলার তখনও ঘণ্টা দুয়েক বাকি। তিনশ কোন সুদূরের পথ! অথচ বাংলাদেশ ঠিকই কাটিয়ে দিয়েছেন দিন, পেরিয়ে গেছে তিনশ।
এই জুটির আগে দিনজুড়ে দেখা গেছে টেস্ট ক্রিকেটের নানা রঙ। সংশয় কাটিয়ে টস করতে নামেন সাকিব আল হাসান। এক পেসার আর চার স্পিনারের বাংলাদেশ পায় আগে ব্যাটিংয়ের কাঙ্ক্ষিত সুযোগ। কিন্তু শুরুটা হলো হতাশায় মাখা। দলে ফেরা সৌম্য সরকার ফিরলেন ম্যাচের প্রথম ওভারেই।
বিপদ আরও বাড়তে পারত, যদি কেমার রোচের বলে ৩ রানে ইমরুল কায়েসের সহজ ক্যাচ দ্বিতীয় স্লিপে না ফেলতেন রোস্টন চেইস। উইকেট প্রত্যাশিতভাবেই মন্থর, প্রথম ঘণ্টায়ই বেশ কয়েকবার বল কিপারের গ্লাভসে গিয়েছে দুই ড্রপে। রোচ ও গ্যাব্রিয়েলের গতি এরপরও ভুগিয়েছে ইমরুলকে।
ইমরুল রক্ষা পেয়েছেন আরও একবার, জোমেল ওয়ারিক্যানের প্রথম ওভারেই স্লগ করে ক্যাচ দিয়েছিলেন মিড উইকেটে। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বাঁহাতি স্পিনার করেছিলেন নো বল।
টিকে যান ইমরুল, ছুটতে থাকেন মুমিনুল। লাঞ্চের আগেই দল পেয়ে যায় শতরান। ইমরুলের ব্যাট থেকে যখন মনে হচ্ছিল সরে গেছে বিপদের ছায়া, তখন নিজেই ডেকে আনলেন পতন। ওয়ারিক্যানের নির্বিষ এক বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিলেন ৪৪ রানে। ১০৫ রানের জুটি ভাঙতেই এল লাঞ্চের ঘোষণা।
তৃতীয় উইকেটে মুমিনুলের সঙ্গে মিঠুনের জুটি জাগিয়েছিল বড় কিছুর সম্ভাবনা। দিনের সম্ভবত সবচেয়ে বাজে শটে সেই সম্ভাবনা শেষ করেছেন মিঠুন। লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশুকে তেঁড়েফুড়ে মারতে গিয়ে আউট ২০ রানে।
বাংলাদেশ খেলার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নেয় পরের জুটিতে। মাত্র চার সেশনের অনুশীলনে টেস্টে নামা সাকিবের ব্যাটিংয়ে একটুও দেখা গেল না মরচে। ৬৭ রানে জীবন পেয়ে মুমিনুল আরও অপ্রতিরোধ্য। ৯২ থেকে বিশুকে ছক্কায় ৯৮। সেখান থেকে চেইসকে বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি।
এই জুটি যখন জমাট, ছোবল দিলেন গ্যাব্রিয়েল। প্রথম ১১ ওভারে ওভারপ্রতি প্রায় চার রান করে দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। সেই বোলার ৩ ওভারে কাঁপিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে।
১২০ রানে মুমিনুলকে ফিরিয়ে শুরু। দুই বল পরই ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ মুশফিকুর রহিম। ভেতরে ঢোকা বলেই গতিতে হার মেনে বোল্ড মাহমুদউল্লাহ। তার পরের ওভারে লেংথ বল স্টাম্পে টেনে আনলেন ৩৪ রান করা সাকিব। ৩ উইকেটে ২২২ রানের দারুণ অবস্থান থেকে ২৩৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে টালমাটাল বাংলাদেশ!
রোচ-গ্যাব্রিয়েলদের গতির সামনে একটুও ভড়কে যাননি ১৭ বছর বয়সী নাঈম। ব্যাট করেছেন ক্রিজের বেশ বাইরে দাঁড়িয়ে, প্রমাণ রেখেছেন দারুণ টেম্পারামেন্ট ও আঁটসাঁট রক্ষণের। তাইজুলের চোখধাঁধানো কিছু শট তার ব্যাটিং সামর্থ্য চিনিয়েছে নতুন করে।
দুই ওভার আগে দিনের খেলা শেষ হলো আলোকস্বল্পতায়। কিন্তু নবম উইকেটে ৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তখন আলোকিত বাংলাদেশের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৮ ওভারে ৩১৫/৮ (ইমরুল ৪৪, সৌম্য ০, মুমিনুল ১২০, মিঠুন ২০, সাকিব ৩৪, মুশফিক ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩, মিরাজ ২২, নাঈম ২৪*, তাইজুল ৩২*; রোচ ১৫-২-৫৫-১, গ্যাব্রিয়েল ১৮-২-৬৯-৪, চেইস ১১-০-৪২-০, ওয়ারিক্যান ২১-৬-৬২-২, বিশু ১৫-০-৬০-১, ব্র্যাথওয়েট ৮-১-১৯-০)।