কদিন আগেও এটি ছিল সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ। তামিম ইকবালের একজন সঙ্গী খুঁজে পেতে হাপিত্যেশ করছিল দল। জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষে সেটিই রূপ নিয়েছে মধুর সমস্যায়। এতদিন ছিল না একজনও, এখন সম্ভাব্য বিকল্প অন্তত তিনজন!
দীর্ঘ সুড়ঙ্গ পেরিয়ে আলোর রেখা হয়ে এসেছিল শুরুতে লিটনের ব্যাট। এনামুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি এ বছর। লিটনের ব্যাটও কিছুদিন ছিল হতাশার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এশিয়া কাপের ফাইনালে চোখধাঁধানো সেঞ্চুরিতে আশার রোশনাই ছড়ান লিটন। অবশেষে কি তামিম পেতে যাচ্ছেন যোগ্য একজন সঙ্গী?
প্রশ্নের উত্তর আরও জটিল করেছে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। শুধু লিটনই নন, যোগ হয়েছেন আরও দুজন। এশিয়া কাপের মাঝপথেই ওয়ানডে দলে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ইমরুলের। ফিরেই ভ্রমণক্লান্তি ও পারিপার্শ্বিকতার চ্যালেঞ্জ জয় করে ছয় নম্বরে নেমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত ইনিংস। তবে সেই পজিশন তো ছিল সাময়িক। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ফিরে পেলেন পছন্দের জায়গা। ক্যারিয়ার সেরা ধারাবাহিকতায় জানিয়ে দিলেন বার্তা।
এশিয়া কাপের সেঞ্চুরির সঙ্গে আরও দু-একটি যোগ করার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন লিটন। তবে মাঝের ম্যাচে ৭৭ বলে ৮৩ রানের নান্দনিক ইনিংস বিবেচনায় রেখেছে তাকেও। লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সৌম্য সরকার।
তৃতীয় ওয়ানডের আগে আচমকাই স্কোয়াডে নেওয়া হয় তাকে। জায়গা পান একাদশেও। ফেরার ম্যাচে সৌম্য ফিরে পান রুদ্র রূপ। ৯২ বলে ১১৭ রানের ইনিংসে ফিরিয়ে আনেন সেই হারিয়ে যাওয়া রোমাঞ্চ। যদিও ব্যাট করেছেন এই ম্যাচে তিনে, তবে প্রথম বলে লিটন আউট হওয়ায় এক রকম ওপেনই করতে হয়েছে তাকে। তার মূল জায়গা ওপেনিংই। তার ক্ষেত্রে পজিশনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস। শেষ ম্যাচটিতে যা ধরা দিয়েছে পূর্ণ রূপে। এমন বিস্ফোরক খেললে সৌম্য সবচেয়ে কার্যকর হতে পারেন তো ওপেনিংয়েই।
তবে এই মধুর যন্ত্রণা আবার সত্যিকারের মাথাব্যথা হয়েও কিন্তু ফিরতে পারে খুব কম সময়েই। বাংলাদেশের পরের সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, যাদের বোলিং আক্রমণ জিম্বাবুয়ের চেয়ে অনেক ধারাল। তার পরের সিরিজ নিউ জিল্যান্ডে। কন্ডিশন ও বোলিং আক্রমণের ধার মিলিয়ে কতটা কঠিন হবে, সেটি নতুন করে বলার আছে সামান্যই।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে ইমরুল-সৌম্যদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই অবশ্যই। বড় ইনিংস খেলা, ধারাবাহিক রান করার অভ্যাসটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব জরুরি। আত্মবিশ্বাস ও সামর্থ্যের সীমানাও বাড়ে এসবে। পাশাপাশি এটিও সত্যি, এই জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণ ছিল একদমই নখদন্তহীন। কেবল কাইল জার্ভিসই একটু মানসম্পন্ন, বাকিদের এখানকার কন্ডিশনে চলনসই বলাও যায় না।
প্রায় প্রতি ওভারেই একটি-দুটি করে বাজে বল দিয়েছে জিম্বাবুয়ের বোলাররা। সেভাবে চাপেই ফেলতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ছিল না ভালো কোনো স্পিনার। চট্টগ্রামের দুই ম্যাচে তাদের কাজ আরও কঠিন হয়েছে পরে বোলিং করতে হওয়ায়। ভারী শিশিরে বল গ্রিপ করাই ছিল মুশকিল। সবকিছুই পক্ষে গেছে বাংলাদেশের। এই সিরিজের স্বস্তি তাই উচ্ছ্বাসে রূপ নিলে হতে পারে বড় বিপদ!
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতেই কয়েক মাস আগে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এখানকার কন্ডিশনে আদর্শ বোলিং আক্রমণ নেই তাদেরও। এরপরও কেমার রোচ, আলজারি জোসেফের মতো গতিময়, জেসন হোল্ডারের মতো স্কিলফুল পেসার আছে তাদের। আছে অ্যাশলি নার্স, দেবেন্দ্র বিশুর মতো কার্যকর স্পিনার। জিম্বাবুয়ের চেয়ে ঢের ভালো বোলিং আক্রমণ।
আরও বড় পরীক্ষা অপেক্ষায় নিউ জিল্যান্ডে। নতুন বল যেখানে ছোবল দেয় নিত্যই। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিরা প্রস্তুত থাকবেন ফণা তুলতে। আপাতত সামনের সব সিরিজই একরকম বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে খেলা, বিভিন্ন মাঠের ভিন্ন সব উইকেটের চ্যালেঞ্জ, সেটিতে অনেকটা স্বাদ পাওয়া যাবে ইংল্যান্ডের। সেই সফর শেষে বিশ্বকাপ দলের সম্ভাব্য একটি চিত্রও হয়তো আঁকা যাবে।
এই দুই সিরিজের পরীক্ষায় উতরাতে হবে ইমরুল-সৌম্য-লিটনকে। ওপেনিংয়ে তামিম ফিরবেন। তিন নম্বরে যে সাফল্য পেয়েছেন, তাতে সাকিব আল হাসানের পজিশন বদলের কারণ নেই। ফিরবেন তিনিও। টপ অর্ডারে তাই কার্যত একটি পজিশনের জন্য লড়াই হবে তিনজনের।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে লড়াই উন্মুক্ত করে দিয়েছে, বন্ধ নয়। এই সিরিজ একটি শুরু মাত্র, কেবলই ইঙ্গিত। সিদ্ধান্তের শেষ নয়। লড়াইটা এখন অনেকটা ‘সারভাইবাল অব দা ফিটেস্ট।’ ক্যারিবিয়ান আর কিউই পরীক্ষায় যিনি টিকবেন, বিশ্বকাপের ভার বইতে তিনিই থাকবেন।