খুলনা থেকে আবু ধাবি, ইমরুলের বিস্ময় যাত্রা

দুই দিন আগেও ছিলেন তিনি খুলনায়। খেলছিলেন বিসিবি লাল বনাম সবুজের চার দিনের ম্যাচে। দুবাই থেকে জরুরি তলব পেয়ে চমকে গিয়েছিলেন। সেই রাতেই ঢাকায় ফিরে পরদিন সন্ধ্যায় চেপে বসলেন বিমানে। ম্যাচের আগের রাতে যখন টিম হোটেলে এলেন, দুবাইয়ে তখন প্রায় মাঝরাত। সকালে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার বাস ভ্রমণ করে আবু ধাবিতে। বিস্ময়ের ঘোরে থাকা ইমরুল কায়েস পরে নিজেই মহাবিস্ময় উপহার দিলেন শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামের ২২ গজে!

আবু ধাবি থেকে আরফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2018, 05:52 PM
Updated : 23 Sept 2018, 09:11 PM

তার দলে ডাক পাওয়ার প্রক্রিয়া জন্ম দিয়েছিল প্রশ্নের। খুলনা থেকে ঢাকা হয়ে, দুবাই থেকে আবু ধাবির ভ্রমণ ক্লান্তি ছিল সঙ্গী। প্রতিকূলতার শেষ নয় এখানেই। একাদশে জায়গা পেলেন তো বটেই, ব্যাটিং অর্ডারে জায়গা পেলেন অচেনা পজিশনে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ব্যাট করলেন তিন নম্বরের নিচে। প্রচণ্ড গরমে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার তো ছিলই। এমন বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতরেই ইমরুল উদ্ধার করলেন দলকে। খেললেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস।

দল থেকে অফিসিয়াল ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি, তবে ব্যাটিং অর্ডার দেখে ইঙ্গিত মিলছে, হয়তো রশিদ খানকে সামলাতেই ইমরুলকে ছয়ে খেলানো। বাঁহাতিদের বিপক্ষে বোলিংয়ে তুলনামূলক একটু অস্বস্তি থাকে রশিদের। ইমরুল যথেষ্টই অভিজ্ঞ। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নেটে রশিদকে খেলেছেন অনেক। সব মিলিয়েই বিবেচনা করা হতে পারে এই পজিশন। ইমরুলকে উড়িয়ে আনার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ, তার ব্যাটিং পজিশন জাগিয়েছে কৌতুহল। কিন্তু দুটি ফাটকাই কাজে লেগে গেছে দারুণভাবে। কাজে লাগিয়েছেন ইমরুল।

আত্মঘাতী রান আউটে সাকিব আল হাসান আউট হওয়ার পর গিয়েছিলেন উইকেটে। দলের রান তখন ৪ উইকেটে ৮১। খানিক পর তার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতেই রান আউট বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম। ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে দল। সেখান থেকেই দলকে স্বস্তির ঠিকানায় নিয়ে গেলেন ইমরুল, সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ।

ইমরুলের দায়িত্ব ছিল উইকেট আগলে রাখা। রানের চাকা সচল ছিল মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। সময়ে সাবলীল হয়ে উঠলেন ইমরুলও। ২১তম ওভারে যে জুটির শুরু, মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে সেই জুটি ভাঙল ৪৭তম ওভারে। দুজনের জুটি ততক্ষণে পা রেখেছে রেকর্ড উচ্চতায়। ড্রেসিং রুমে ফিরে এসেছে প্রাণের পরশ।

১২৮ রানের জুটি গড়েছেন দুজন, যা ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড। দুজনে পেছনে ফেলেছেন ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আল শাহরিয়ার ও খালেদ মাসুদের ১২৩ রানের জুটি। বিব্রতকর অবস্থা থেকে দলকে আড়াইশর পথে এগিয়ে নিয়েছে ইমরুল ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাট।

আগেও অনেক বার দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা মাহমুদউল্লাহ এবার খেলেছেন ৮১ বলে ৭৪ রানের মহামূল্য ইনিংস। ইমরুল টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। শেষ বলের বাউন্ডারিতে মাঠ ছেড়েছেন ৮৯ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থেকে।

প্রায় ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশ দল থেকে কতবার বাদ পড়লেন আর ফিরলেন, হিসাব কষতে গেলে ইমরুল নিজেও হয়ত খেই হারিয়ে ফেলবেন। তবে এবারের ফেরা ভুলবেন না নিশ্চিত!

মজার ব্যাপার হলো, ১১ মাস পর ফিরলেও তার সবশেষ তিন ওয়ানডেতে কিন্তু এটি দ্বিতীয় ফিফটি! এবারের আগে সবশেষ ম্যাচটির আগের ম্যাচেই ফিফটি করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপরও বাদ পড়েছিলেন। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী খুঁজে দল হয়রান হলেও ডাক পড়ছিল না তার। অফিসিয়ালি অনেক কিছু বলা হলেও, দল সূত্রে নানা সময়ে জানা গেছে, তার শরীরী ভাষায় খুব সন্তুষ্ট নয় টিম ম্যানেজমেন্ট।

এবার তামিমের চোট ও অন্যদের ব্যর্থতায় আবার ফিরতে হলো তার দুয়ারে। যদিও ওপেন করেননি, তবে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেও বুঝিয়েছেন নিজের উপযোগিতা। এই ইনিংসের পর তাকে নিয়ে দলের আর অভিযোগ থাকার কথা নয়। তিনিও হয়ত পাবেন নতুন বিশ্বাস। আগামী মাসেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পূর্ণ করবেন ১০ বছর। এমন ইনিংসের পর এখন যদি নতুন উদ্যমে ছুটে নিজেকে থিতু করতে পারেন দলে!