দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের হতশ্রী ব্যাটিং

প্রথম ইনিংস যদি হয় দু:স্বপ্নের, দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরে এলো যেন সেই একই বিভীষিকা। আগের ইনিংসের ক্যারিবিয়ান নায়ক কেমার রোচ আর বোলিংই করতে পারলেন না হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে। কিন্তু এবার বাংলাদেশের ব্যাটিং ধসিয়ে দিলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2018, 04:24 PM
Updated : 5 July 2018, 10:08 PM

প্রথম ইনিংসের ৪৩ রানের মতো চরম বিব্রতকর কিছু হয়নি। তবে যেটা হয়েছে, সেটিও হতাশায় মুখ লুকানোর মতোই। এবার ঠিক ৪৩ রানেই নেই ইনিংসের অর্ধেক। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৬২ রান তুলে অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।

এবার অন্তত দলীয় ফিফটি হয়েছে, চাইলে এটিকে স্বস্তি ধরে নেওয়া যায়। তবে দলীয় সেঞ্চুরিকে মনে হচ্ছে যোজন যোজন দূর।

২ উইকেটে ২০১ রান নিয়ে বৃহস্পতিবার দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে তুলেছে ৪০৬ রান। এক পর্যায়ে ২ উইকেটেই তাদের রান ছিল আড়াইশর কাছে। সেখান থেকে বাংলাদেশের বোলারদের ঘুরে দাঁড়ানো ছিল তাই দারুণ।

কিন্তু সেই সাফল্য ব্যাটসম্যানদের উজ্জীবিত করতে পারল সামান্যই। উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই সবার ড্রেসিং রুমে ফেরার তাড়া!

ইনিংস পরাজয় এড়ানো তো এখন কল্পনার সীমানায়ও নেই। বরং ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটু আগে ব্যাটিং ছেড়ে দিলে হয়ত দুই দিনেই শেষ হয়ে যেত ম্যাচ!

প্রথম ইনিংসে ধ্বংসজজ্ঞে রোচের মূল সহযোগী ছিলেন মিগেল কামিন্স, এবার গ্যাব্রিয়েলের সঙ্গে জেসন হোল্ডার। নতুন বলে দুজন মিলে দুই প্রান্ত থেকে টানা ১৫ ওভার করে প্রায় গুঁড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশকে।

প্রথম ইনিংসের মতোই দলের সফলতম ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে শুরু। গতিময় লাফানো বল সামনের পায়ে ডিফেন্স খেলে গালিতে ক্যাচ দিলেন তামিম ইকবাল।

ওই ওভারেই তার ব্যাট থেকে এসেছিল দুটি চার। দ্বিতীয় চারে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেছেন ৪ হাজার রান। কিন্তু বড় কিছু দিয়ে মাইলফলক উদযাপনের উপলক্ষ্য নিজেকে দিতে পারলেন না তামিম।

এক বল পরই বোল্ড মুমিনুল হক। স্কিড করা বল নিচু হলে খেলা কঠিন। কিন্তু জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে নিজের পতন ডেকে এনেছেন মুমিনুল নিজেই।

এরপর লিটন দাস ফিরেছেন হোল্ডারের দারুণ আউট সুইঙ্গারে। মুশফিকুর রহিম গ্যাব্রিয়েলের ইনসুইঙ্গারে।

ঠিক আগেই একটি শর্ট বল হয়ত নাড়িয়ে দিয়ছিল মুশফিককে। এরপর ইনসুইঙ্গারে বোল্ড হলেন নার্ভাস ভঙ্গিতে, ব্যাট-প্যাডের মাঝে বিশাল ফাঁক রেখে। টেকনিকে সেরা বলে বিবেচিত ব্যাটসম্যানের এই শটই বলে দেয় বাংলাদেশের ব্যাটিং দৈন্য কতটা।

এমন বিপর্যয়েও ঝুঁকিপূর্ণ কিছু শট খেলে সাকিব ১২ রানে ধরা পড়েছেন স্লিপে। মিরাজের কাছে কিছু চাওয়া হয়ত ছিল বাড়াবাড়ি।

দিনশেষে স্কোরটা হতে পারত আরও বাজে। দিনের শেষ ওভারে দৃষ্টিকটু এক শটে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে বেঁচে যান কামিন্স নো বল করায়। কোনোরকমে পার হয় দ্বিতীয় দিন।

অথচ ব্যাটিংয়ে নামার আগ পর্যন্ত দিনটি খারাপ ছিল না বাংলাদেশের। বোলাররা রেখেছেন লড়াইয়ের ছাপ।

প্রথম সেশনে যদিও মিলেছিল কেবল নাইটওয়াচম্যান দেবেন্দ্র বিশুর উইকেট। কিন্তু স্পিনারদের সৌজন্যে দ্বিতীয় সেশন ছিল বাংলাদেশের। উইকেট পড়েছিল সেই সেশনে চারটি।

যার মধ্যে ছিল সেঞ্চুরিয়ান ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের উইকেটও। ৮৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা ব্র্যাথওয়েট সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি করে লাঞ্চে যান ১২১ রান নিয়ে। লাঞ্চের পর চতুর্থ বলেই তাকে ফেরান সাকিব। 

ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা সময়টুকু এসেছে এরপরই। রোস্টন চেইসকে বেশ কয়েকবার ভুগিয়ে আউট করেছেন মিরাজ। শ্রীলঙ্কা সিরিজে দুর্দান্ত পারফর্ম করা শেন ডাওরিচকে টিকতে দেননি সাকিব। তার ব্যাট থেকে বুট হয়ে আসা বল সিলি পয়েন্টে দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচ নিয়েছেন লিটন।

লাঞ্চের পর ৯ ওভারে ১৯ রানে বাংলাদেশ তুলে নেয় ৩ উইকেট।

শেই হোপকে নিয়ে সেই অস্থির সময় পার করে দেন জেসন হোল্ডার। সপ্তম উইকেটে দুজনে গড়েন ৫০ রানের জুটি। স্পিনারদের পাল্টা আক্রমণে দুটি করে চার ও ছক্কায় হোল্ডার করেন ৩৩।

ক্যারিবিয়ান অধিনায়ককে ফিরিয়ে মিরাজ ছুঁয়েছেন ৫০ টেস্ট উইকেট। বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ৫০ উইকেটের রেকর্ডে স্পর্শ করেছেন মোহাম্মদ রফিককে (১৩ টেস্টে)।

বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও বাংলাদেশকে ভুগিয়ে কেমার রোচ করেন ৩৩ রান। এক প্রান্ত আগলে রাখা হোপ করেন ৬৭। অষ্টম জুটিতে এই দুজন যোগ করেন ৫৬ রান।

তবে চা বিরতির পর আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্রুতই শেষ তিন উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। শেষ দুটিসহ ৩ উইকেট নিয়ে অভিষেকে বাংলাদেশের সফলতম বোলার আবু জায়েদ চৌধরী। তিন উইকেট নেন মিরাজও।

কিন্তু দিন শেষে বোলারদের সেই সামান্য সাফল্যটুকু চাপা পড়েছে ব্যাটসম্যানদের আরেকটি বড় ব্যর্থতার ভারে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৩

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৩৭.৩ ওভারে ৪০৬ (আগের দিন ২০১/২) (ব্র্যাথওয়েট ১২১, বিশু ১৯, হোপ ৬৭, চেইস ২, ডাওরিচ ৪, হোল্ডার ৩৩, রোচ ৩৩, কামিন্স ১*, গ্যাব্রিয়েল ৫; আবু জায়েদ ৩/৮৪, রুবেল ০/৪৪, কামরুল ১/৬৯, সাকিব ২/৭১, মিরাজ ৩/১০১, মাহমুদউল্লাহ ১/১৮, মুমিনুল ০/৮)।

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৮ ওভারে ৬২/৬ (তামিম ১৩, লিটন ২, মুমিনুল ০, মুশফিক ৮, সাকিব ১২, মাহমুদউল্লাহ ১৫*, মিরাজ ২, সোহান ৭*; গ্যাব্রিয়েল ৪/৩৬, হোল্ডার ২/১৫, কামিন্স ০/১০)।