ক্যারিবিয়ান পেসের সামনে বাংলাদেশের পরীক্ষা

উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। সুঠাম শরীর। বোলিংয়ের গতি ঘণ্টায় গড়ে দেড়শ কিলোমিটারে আশেপাশে। গতি আর বাউন্স মিলিয়ে মাঠে ভীতি জাগানিয়া উপস্থিতি। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ক্রমেই হয়ে উঠছেন যেন ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক। সঙ্গে আছেন জেসন হোল্ডার, কেমার রোচ আর মিগুয়েল কামিন্স। জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারি। বাংলাদেশের অপেক্ষায় কঠিন চ্যালেঞ্জ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2018, 04:51 AM
Updated : 4 July 2018, 04:51 AM

ক্ষুরধার সেই পেস আক্রমণ সামলানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের ক্যারিবিয়ান অভিযান। অ্যান্টিগা টেস্ট দিয়ে বুধবার শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়।

এমনিতে এই মাঠের উইকেট বেশিরভাগ সময় কথা বলেছে ব্যাটসম্যানদের হয়ে। ক্যারিবিয়ানের অন্য বেশিরভাগ মাঠের উইকেটও এক সময়কার গতিময় ও বাউন্সি চরিত্র। কিন্তু সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজে তিনটি টেস্টেই উইকেট ছিল প্রাণবন্ত। পেসাররা পেয়েছে গতি ও বাউন্স। বাংলাদেশের বিপক্ষেও একই কৌশল নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

উইকেট যদি ব্যাটিং সহায়কও হয়, তবু এই পেস আক্রমণ সামলানো হবে বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে গ্যাব্রিয়েলকে। ৩০ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার একসময় অনেকটাই ছিলেন এলোমেলো। গত দেড় বছরে সেই তিনিই হয়ে উঠেছেন ধারাবাহিক ও কার্যকর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে নিয়েছেন ২০ উইকেট। এক সেন্ট লুসিয়া টেস্টেই নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট।

পেস সামলানোর প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা বাংলাদেশ করেছে যথেষ্টই। দেশে অনুশীলন ক্যাম্পে গ্রানাইটের স্লাবে ব্যাটিং করার পুরোনো অনুশীলন তো ছিলই। গতি সামলাতে নতুন কোচ স্টিভ রোডস এবার গ্রানাইট পিচ্ছিল করে ব্যাটিং করিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের।

কোচ যেমন নতুন, পুরোনো দায়িত্বে নতুন করে ফিরছেন তেমনি অধিনায়কও। বাংলাদেশের ক্রিকেটে শুরু হচ্ছে নতুন অধ্যায়। গত ডিসেম্বরে টেস্ট নেতৃত্ব ফিরে পেয়েছেন সাকিব আল হাসান, কিন্তু এই দফায় সাদা পোশাকে প্রথমবার টস করতে সময় লাগল ৬ মাসের বেশি। চোটের কারণে খেলতে পারেননি ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। নেতৃত্বের নতুন অধ্যায় শুরু করছেন সেখানে, যেখানে শুরু হয়েছিল প্রথম অধ্যায়ও।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিলেন সাকিব সহ-অধিনায়ক হয়ে। প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন সকালে ইনজুরিতে পড়লেন নেতৃত্বে অভিষিক্ত মাশরাফি বিন মুর্তজা। ম্যাচের মাঝ থেকেই শুরু হলো সাকিবের দায়িত্ব। পরের টেস্টে অধিনায়ক হিসেবেও হয়ে গেল অভিষেক।

সেই সিরিজ সাকিব ও বাংলাদেশের জন্য হয়ে আছে দারুণ সুখস্মৃতি। বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় যদিও ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল দল, তবে রেকর্ড বলবে, দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয় ও প্রথমবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।

গা গরমের ম্যাচে সেঞ্চুরি করে প্রস্তুতি দারুণভাবে সেরে নিয়েছেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ। রান পেয়েছেন সাকিবও। উইকেট যদি সত্যিই পেস সহায়ক হয়, বাংলাদেশ তাকিয়ে থাকবে পেসারদের দিকেও।

অনুশীলন ম্যাচ থেকে যা ইঙ্গিত, তাতে তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে পারেন লিটন দাস। ব্যাটিং লাইন আপে মুমিনুল হক, সাকিব, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ তো থাকছেনই, সুযোগ মিলতে পারে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানের। উইকেটের চরিত্র বুঝে ঠিক হতে পারে, একাদশে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ নাকি আরও একজন পেসার। পেস আক্রমণে একাদশে ফিরতে পারেন শফিউল ইসলাম। অভিষেক হতে পারে আবু জায়েদ চৌধুরীর।

তবে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা দলের সেরা পারফরমারকে ঘিরেই। ২০০৯ সালের সফরে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। এবারও দল তার কাছে চাইবে তেমনই অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব। সুযোগ এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল দলকেই হারানোর। যদি জ্বলে ওঠেন সাকিব, উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সম্ভাবনাও।