ভারতকে হারানো গেল না এবারও

মুশফিকুর রহিম কথা রাখলেন। সেরা সময়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর খেললেন আরও একটি দুর্দান্ত ইনিংস। তবে কথা রাখতে পারল না দল। সবার পারফরম্যান্স গাঁথা হলো না এক সুতোয়, দেখা গেল না ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড’। প্রাপ্তি তাই পরাজয়। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে জয় রয়ে গেল অধরাই।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিকলম্বো থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2018, 05:31 PM
Updated : 14 March 2018, 06:03 PM

ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাত টি-টোয়েন্টির সবকটি জিতল ভারতীয়রা।

শুক্রবার প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচটি কার্যত এখন সেমি-ফাইনাল। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার লড়াইয়ে জয়ী দল উঠবে ফাইনালে।

বুধবার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল খানিকটা শুষ্ক ও মন্থর। উইকেট বুঝে পুরো ২০ ওভার ব্যাট করে ৮৯ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন রোহিত শর্মা। ভারত ২০ ওভারে তোলে ১৭৬ রান।

পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ মুশফিকের একার লড়াইয়ে যেতে পারে ১৫৯ পর্যন্ত। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৭২ রানের পর এবারও ঠিক ৭২ রানেই অপরাজিত মুশফিক।

দুই ইনিংসে মুশফিকের রান সমান হলেও বেশ ফারাক বলে। আগের ম্যাচে ৭২ করেছিলেন ৩৫ বলে, এদিন ৫৫। যেটির মূল কারণ টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। আগের ম্যাচে মুশফিক পেয়েছিলেন দারুণ ভিত্তি। এদিন দলকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করতে হয়েছে, আবার রান-বলের টানপোড়েনও মেলাতে হয়েছে। মুশফিক এদিনও হারেননি। কিন্তু পাশে পাননি কাউকে, তাই হেরে গেছে দল।

খানিকটা মন্থর উইকেটে রান তাড়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ভালো শুরু আর বিচক্ষণতার সঙ্গে এগিয়ে চলা। বাংলাদেশ পারেনি কোনোটিই।

ভারতের নতুন বলেও আছেন একজন অফ স্পিনার। তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে তাই থেকে যান লিটন। তবে এবার আর শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মতো বিস্ফোরক শুরু হয়নি। বরং সেই অফ স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরেই হয়েছে সর্বনাশ।

বলা ভালো, নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই। দারুণ চার মারার পরের বলেই বেরিয়ে এসে আলগা শটে উইকেট দিয়ে এসেছেন লিটন।

তামিম চাপ উড়িয়ে দিয়েছিলেন পরের ওভারেই। শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ম্যান অব দা ম্যাচ শার্দুল ঠাকুরকে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তুলোধুনো করেন টানা চার বলে মারেন তিন চার ও এক ছক্কা।

কিন্তু পরের ওভারেই সুন্দরের বলে আত্মঘাতী শটে উইকেট বিলিয়ে আসেন সৌম্য। ৪ ওভার শেষে তামিমের রান ১২ বলে ২৬, বাকিরা মিলে ১২ বলে ২ উইকেটে ৯।

ইনিংস টানতে পারেননি সেই তামিমও। সুন্দরের শর্ট বলেই বাজে শটে আউট হন ১৯ বলে ২৭ রান করে। ষষ্ঠ ওভারে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৪০।

সুন্দরকেই টানা দুই বলে দারুণ দুটি চারে শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষটা তারও হতাশায় মাখা। যুজবেন্দ্র চেহেলের যে শর্ট বলটি গ্যালারিতে পাঠানোর কথা, বাংলাদেশ অধিনায়ক তুলে দিলেন ফিল্ডারের হাতে।

সেখান থেকে মুশফিকের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। সঙ্গী সাব্বির রহমান। এক-দুইয়ের পাশাপাশি সুযোগমতো বড় শটও খেলেছেন দুজন। সিরাজের এক ওভারে দুই চার এক ছক্কা এসেছে মুশফিকের ব্যাটে। বিজয় শঙ্করের ওভারে দুজনর দুটি চার। চেহেলের শেষ বলে সাব্বিরের বিশাল ছক্কা। ৩৪ বলে আসে জুটির পঞ্চাশ।

বাইরে ছিল না আর কোনো স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। প্রয়োজন ছিল এই জুটির শেষ পর্যন্ত থাকা। হলো না সেটিই। শার্দুলের লেংথ বলে লাইন মিস করে বোল্ড সাব্বির। ৪৮ বলে ৬৫ রানের জুটিতে সাব্বিরের রান ২৩ বলে ২৭।

এরপর মুশফিক চেষ্টা করেছেন। পেরে ওঠেননি। শেষ দুই বলে রান না হওয়ায় নিজের সেরা স্কোরকে ছাড়ানোও হয়নি।

বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল ভালোই। উইকেট না এলেও রানের গতি ছিল না তীব্র।

প্রায় দুই বছর পর দেশের হয়ে খেলতে নেমে বাঁহাতি আবু হায়দার প্রথম ওভারটি করেন দারুণ। প্রথম ৪ ওভারে রান আসে ২৭।

পরের দুই ওভারে ২২ রান নিয়ে পাওয়ার প্লেতে ভারত পায় ৪৯। এরপর আবার রানের গতিতে বাংলাদেশের একটু বাধ। শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার মত দুজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান থাকার পরও ১০ ওভারে ভারত তুলতে পারে ৭১ রান।

দুই ওপেনারই আউট হতে পারতেন আগেই। আবু হায়দার আরেকটু জোর চেষ্টা করলে রুবেলের বলে ৭ রানে আউট হতে পারতেন রোহিত। সীমানায় লিটন বলের ফ্লাইট ভালো বুঝতে পারলে ২২ রানে ফিরতে পারতেন ধাওয়ান।

শেষ পর্যন্ত ১৪৩ কিলোমিটার গতির দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ধাওয়ানের স্টাম্প উপড়েছেন ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলার রুবেল। ২৭ বলে ৩৫ রানে ধাওয়ানের বিদায়ে ভেঙেছে ৭০ রানের জুটি।

রোহিত তখনও লড়ছেন ছন্দ পেতে। দশম ওভার শেষে তার রান ৩২ বলে ৩৩। তবে উইকেট ছুঁড়ে আসেননি। অপেক্ষা করেছেন নিজের পছন্দের জায়গায় বল পাওয়ার। পেলে সেটির ফায়দা তুলেছেন সর্বোচ্চ।

সুরেশ রায়নার ইনিংসও এগিয়েছে একই পথরেখায়। শুরুতে কিছুটা সময় টাইমিং পেতে লড়েছেন। প্রিয় স্লগ সুইপে ছক্কা মারার পর ফিরে পান আত্মবিশ্বাস। মন্থর উইকেটে দারুণ ব্যাটিং করেছেন দুজনই।

১৩ থেকে ১৯, প্রতিটি ওভারেই বাউন্ডারি বের করেছেন রোহিত ও রায়না। বাংলাদেশকে বেশি ভুগিয়েছে আবু হায়দারের করা ১৮তম ওভার। তিন ছক্কায় ওই ওভার থেকে এসেছে ২১।

রুবেলের সৌজন্যে তবু ১৮০ করতে পারেনি ভারত। ইনিংসের শেষ ওভারটি দুর্দান্ত করেছেন রুবেল। প্রথম বলে রায়নাকে ফিরিয়েছেন, শেষ বলে রান আউট করেছেন রোহিতকে। শেষ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৪ রান।

৫টি করে চার-ছক্কায় ৬১ বলে ৮৯ করেছেন রোহিত, ৩০ বলে ৪৭ রায়না। শেষ ১০ ওভারে ভারত তোলে ১০৫ রান।

মুশফিকের আরেকটি বীরোচিত ইনিংসের পরও ভারতের রান রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৭৬/৩ (রোহিত ৮৯, ধাওয়ান ৩৫, রায়না ৪৭, কার্তিক ২*; আবু হায়দার ০/৪৩, নাজমুল অপু ০/২৭, রুবেল ২/২৭, মুস্তাফিজ ০/৩৮, মিরাজ ০/৩১, মাহমুদউল্লাহ ০/৯)

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৯/৬ (তামিম ২৭, লিটন ৫, সৌম্য ১, মুশফিক ৭২*, মাহমুদউল্লাহ ১১, সাব্বির ২৭, মিরাজ ৭, আবু হায়দার ০*; সিরাজ ১/৫০, সুন্দর ৩/২২, শার্দুল ১/৩৭, যুজবেন্দ্র ১/২১, শঙ্কর ০/২৮)

ফল: ভারত ১৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শর্মা