৩১৬ রান করে নিশ্চয়ই অনেকটানিশ্চিন্ত ছিল লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এটি ২৯৬তম ওয়ানডে, তিনশ রান তাড়ায় জয়েরকীর্তি ছিল না একটিও। জিম্বাবুয়ে গড়ল নতুন ইতিহাস!
ওপেনিংয়ে অসাধারণ সেঞ্চুরিকরলেন সলোমন মিরে। শন উইলিয়ামসের সঙ্গে গড়লেন ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া জুটি। ম্যালকমওয়ালারকে নিয়ে কাজ শেষ করলেন সিকান্দার রাজা। ১৪ বল বাকি রেখেই ৬ উইকেটের জয়। ৫ ম্যাচসিরিজের প্রথমটি জিতে এগিয়ে গেল র্যাঙ্কিংয়ে এগারোয় থাকা দলটি।
শ্রীলঙ্কায় রান তাড়ার আগেররেকর্ড ছিল স্বাগতিকদেরই, ২০০৯ সালে ডাম্বুলায় জিতেছিল তারা পাকিস্তানের ২৮৮ রান তাড়ায়।
বল হাতে বিবর্ণ জিম্বাবুয়েরব্যাটিংয়ের শুরুতেও ছিল না তেমন ঝাঁজ। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজাও ক্রেইগ আরভিন ফিরে যান ৪৬ রানের মধ্যে। ১০ ওভার তখন পেরিয়ে গেছে।
ওপেনার মিরে টিকে আছেন তখনঅস্বস্তি নিয়ে। ১৫ রানে ক্যাচ হতে হতেও বেঁচে গেছেন, মনে হচ্ছিলো বেশ নড়বড়ে। দলের প্রথম১৩ ওভারে ৪৯ বলই ডট!
শন উইলিয়ামস উইকেটে যাওয়ারপর পাল্টাতে থাকে চিত্র। রান বের করতে থাকেন এই বাঁহাতি। তাতে যেন নিজেকে ফিরে পানমিরেও। খেলতে থাকেন দারুণ সব শট।
স্পিনাররা আক্রমণে আসার পরসুইপ-রিভার্স সুইপে লাইন-লেংথ এলোমেলো করে দেন দুজন। সময়ের সঙ্গে তীব্র হয় রানের স্রোতও।
২০১৪ সালে অভিষেক সিরিজেইবাংলাদেশে দুটি ফিফটি করেছিলেন মিরে। এরপর ধারাবাহিকতা হারিয়ে থিতু হতে পারেননি দলে।অস্ট্রেলিয়ার গ্রেড ক্রিকেটে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে নজরকাড়া এই অলরাউন্ডার এদিন নিজেরজাত চেনালেন।
৯৪ রানে জীবন পেলেন মালিঙ্গারহাতে। কপাল পুড়ল লঙ্কার। ৮৫ বলে স্পর্শ করলেন সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিম্বাবুয়েরদ্রুততম!
উইলিয়ামস তার আগেই ছুঁয়েছেনঅর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙলেন শ্রীলঙ্কার ‘গোল্ডেন আর্ম’ আসেলা গুনরাত্নে। আগেওবেশ কবার দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া অলরাউন্ডার এদিনও সফল। নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে ফেরালেনমিরেকে।
৯৬ বলে ১১২ করেছেন মিরে। উইলিয়ামসেরসঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ১৬১ রানের জুটি ১৩৩ বলে!
পরের ওভারে গুনারত্নে ফেরান৬৫ রান করা উইলিয়ামসকেও। হঠাৎ একটু শঙ্কায় জিম্বাবুয়ে। এই অবস্থা থেকেও পথ হারিয়ে ম্যাচহেরেছে তারা অনেকবারই।
তবে এদিন আর হড়কায়নি পা। শক্তহতে দলকে পথে রেখেছেন সিকান্দার রাজা। দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন ম্যালকম ওয়ালার। ৮০ বলে দুজনগড়েছেন ১০২ রানের অবিচ্ছন্ন জুটি।
৫৬ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত রাজা,২৯ বলে ৪০ ওয়ালার। ইনিংসের প্রথম ছক্কায় দলকে জয়ের ঠিকানায় নিয়ে যান রাজা।
প্রথম ইনিংস শেষেও জিম্বাবুয়েরএই জয়কে মনে হচ্ছিলো অসম্ভব। নিরোশান ডিকভেলাকে শুরুতে হারালেও দ্বিতীয় উইকেটেই শ্রীলঙ্কাপায় শতরানের জুটি। দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুসল মেন্ডিস গড়েন ১১৭ রানের জুটি।
৬০ রান করে গুনাথিলাকা ফেরেনউইলিয়ামসের বলে। ৮০ বলে ৮৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে মেন্ডিস ফিরতি ক্যাচ দেন গ্রায়েমক্রিমারকে।
লঙ্কানদের ব্যাটিং ঝড় থামেনিতাতে। ৩০ বলে ৪৩ করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। চারে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাক উপুলথারাঙ্গার ব্যাটে ৭৩ বলে ৭৯। স্কোরবোর্ড তাতে বেশ হৃষ্টপুষ্ট। কে জানত, লাল পোশাকেরউচ্ছ্বাসের ঢেউয়ে ভেসে বেদনায় নীল হবে লঙ্কানরা!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩১৬/৫(ডিকভেলা ১০, গুনাথিলাকা ৬০, মেন্ডিস ৮৬, থারাঙ্গা ৭৯*, ম্যাথিউস ৪৩, গুনারত্নে ২৮,মাদুশানাকা ১*; চাতারা ২/৪৯, টিরিপানো ০/৪৫, উইলিয়ামস ১/৫৭, ক্রেমার ১/৫৭, মিরে ১/৪৭,রাজা ০/৫৮)।
জিম্বাবুয়ে: ৪৭.৪ ওভারে ৩২২/৪(মাসাকাদজা ৫, মিরে ১১২, আরভিন ১৮, উইলিয়ামস ৬৫, রাজা ৬৭*, ওয়ালার ৪০*; মালিঙ্গা ১/৫১,প্রদিপ ০/৫২, দনঞ্জয়া ১/৬১, আপোন্সো ০/৭৭, গুনাথিলাকা ০/১৩, মাদুশানাকা ০/১৮, গুনারত্নে২/৪৫)।
ফল: জিম্বাবুয়ে ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সলোমনমিরে
Exceptional knock from Mire. Congratulations Zimbabwe for winning the 1st ODI against Sri Lanka. #SLvZIM pic.twitter.com/RUKYA9Tanu
— Sri Lanka Cricket (@OfficialSLC) June 30, 2017