তিনে সাব্বিরই হাথুরুসিংহের আস্থা

“সত্যিটাই উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, কোচ” সংবাদ সম্মেলন শেষে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন চন্দিকা হাথুরুসিংহে। এই কথা শুনে থমকে দাঁড়ালেন, “থ্যাংকস কিন্তু আমি সবসময় সত্যি উত্তরটিই দেওয়ার চেষ্টা করি।”

ক্রীড়া প্রতিবেদক বার্মিংহাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 04:10 PM
Updated : 13 June 2017, 05:56 PM

সত্যি বলা মানে ভুল স্বীকারের সাহস। পেশাদারী মুখোশের এই যুগে মোটামুটি বিরল। তাসকিন আহমেদকে নিয়ে করা এক মন্তব্যের জন্যও আগে একবার ভুল স্বীকার করেছিলেন হাথুরুসিংহে। গত অক্টোবরে বলেছিলেন, শিগগিরই টেস্টে খেলিয়ে ছেলেটার ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চান না।

কমাস পরই টেস্ট অভিষেক হয়ে যায় তাসকিনের। পরে কোচ বলেছিলেন, তার সেই ধারণা ও মন্তব্য ভুল ছিল। এবার নিজের ভুল মেনে নিলেন সাব্বির রহমানের তিনে খেলা নিয়ে।

ভাবছেন, সাব্বিরকে তিনে খেলানো ভুল? নাহ, উল্টো। হাথুরুসিংহের মতে, সাব্বিরকে তিন থেকে সরানো ছিল ভুল।

ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর জায়গাটা বরাবরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনার একটি। কখনোই ভরসার মত কাউকে পওয়া যায়নি।তিন নম্বর বাংলাদেশর এক নিয়ত ধাঁধা। হাথুরুসিংহের কাছে যেটির আপাত সমাধান সাব্বির।

মূলত কোচের চাওয়াতেই গত কিছুদিন থেকে সাব্বিরকে তিন নম্বরে খেলানো হচ্ছে। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে কখনোই সেভাবে টপ অর্ডারে ব্যাট করেন না তিনি। তার ব্যাটিংয়ের ধরণটিও তিন নম্বরের দাবির সঙ্গে যায় না ততটা। তবে কোচের যুক্তি, সাব্বির তিনে সফল হলে সবচেয়ে বেশি লাভ দলেরই। তিনি যে ধরনের ব্যাটসম্যান, তিনে একটি বড় ইনিংস খেলা মানে দলের জয় আর প্রতিপক্ষের গুঁড়িয়ে যাওয়া।

সমালোচনা চলছিল। কিন্তু নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন কোচ। সাব্বিরও একটু একটু করে পায়ের নিচে জমি পাচ্ছিলেন তিনে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে সবশেষ ম্যাচেও ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউ জিল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে করেছিলেন ৬৫ রান।

অথচ ইংল্যান্ডে এসেই কোচের অটল বিশ্বাস নড়ে গেল। সাব্বিরকে নিচে নামিয়ে প্রথম দুই ম্যাচে তিনে খেলানো হলো ইমরুল কায়েসকে। পরে অধিনায়ক মাশরাফি জানিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডে শুরুতে দ্রুত উইকেট যাতে না হারাতে হয়, এজন্যই তুলনামূলক আক্রমণাত্মক সাব্বিরের জায়গায় একটু ধীরস্থির ইমরুলকে তিনে খেলানো হয়েছে।

সাব্বির তিনে পারবেন কী পারবেন না, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন এই বদল নিয়ে। এতদিন ধরে যাকে তিনে তৈরি করা হলো, তাকে মূল টুর্নামেন্টেই সরিয়ে দেওয়া হলো! সেটিও আগের ম্যাচে ৬৫ করার পরও!

ইমরুল দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আবার সাব্বির শরণ। শুরুটা ভালো করলেও দারুণ একটি ডেলিভারিতে আউট হয়ে যান ৮ রান করে। আবারও কি বদলের অপেক্ষা?

এবার আর নিজের বিশ্বাস থেকে নড়ছেন না হাথুরুসিংহে। নিজের ভুলটা স্বীকার করে জানিয়ে রাখলেন সেই ভুল শোধরানোর প্রত্যয়।

“আমার স্বীকার করা উচিত যে, আমাদের আসল পরিকল্পনা থেকে আমরা সরে গিয়েছিলাম। আমি দায় নিচ্ছি। তবে এখন আমরা আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনাতেই ফিরেছি এবং অটল থাকছি।”

“একজন ক্রিকেটারকে নির্দিষ্ট জায়গায় অভ্যস্ত হতে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে চাই আমরা। আমাদের বিশ্বাস, দায়িত্বটি পালন করার মত যথেষ্ট ভালো ব্যাটসম্যান সে (সাব্বির)। সীমিত যতটুকু সুযোগ সে পেয়েছে, সেটি প্রমাণও করেছে। আমরা ওর ওপরই আস্থা রাখছি।”

তিনে ১৪ ইনিংস খেলে সাব্বিরের রান ২৭.৩০ গড়ে ৩৫৫। অর্ধশতক ৩টি। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনে কেউ কখনোই সেভাবে সফল হতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি ৫৪ ইনিংস ব্যাট করেছে আফতাব আহমেদ। হাজার রানও কেবল আছে তারই। ১ হাজার ৩০৩ রান, গড় ২৬.০৬।

৫১ ইনিংস ব্যাট করে ২০.৫০ গড়ে মোহাম্মদ আশরাফুলের রান ছিল ৯৮৪। ২৮ ইনিংসে ২৮.৮১ গড় ৭৭৮ রান জুনায়েদ সিদ্দিকের। ৪২ ইনিংসে ১৬.৩৩ গড়ে হাবিবুল বাশার করেছেন ৬৮৬ রান। ১৫ ইনিংসে ২৮.০৬ গড়ে মুমিনুল হক ৪২১ রান।

এখনকার দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে আঁটসাঁট টেকনিক মনে করা হয় যার, সেই মুশফিকুর রহিম ১১ ইনিংসে ২০.৫০ গড়ে করেছেন ২০৫ রান। ২০১৫ বিশ্বকাপে চারে নেমে জোড় সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ তিনে ৭ ইনিংসে ১৫৭ করেছেন ২২.৪২ গড়ে।

তিনে বংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরি মোটে তিনটি। সবশেষটি সেই ২০১০ সালে! সাব্বির যদি সংশয় কাটিয়ে সফল হতে পারেন, তাহলে সবচেয়ে বেশি লাভ বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই।