বিদায়ে বিজয়ী মাশরাফি

নুয়ান কুলাসেকারার ক্যাচ হাতে জমালেন মাহমুদউল্লাহ। ফাইন লেগে থাকা মাশরাফি বিন মুর্তজা টুপি খুলে নিলেন বাঁ হাতে, ডান হাতে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলেন কিছু একটা। তার বিদায়ী ম্যাচে অভিষেক হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ এসে জড়িয়ে ধরলেন অধিনায়ককে, অন্যরা একে একে এসে হাত মেলালেন। আবেগময় উদযাপন শ্রীলঙ্কায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের পর।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতকলম্বো থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2017, 05:34 PM
Updated : 7 April 2017, 08:03 AM

দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৪৫ রানের অনায়াস জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে উজ্জ্বল ছিলেন সাকিব আল হাসান। মুস্তাফিজুর রহমান ফিরেছেন চেনা ছন্দে। সৌম্য সরকার-ইমরুল কায়েসের ব্যাটে ছিল ঝড়।

লাসিথ মালিঙ্গার হ্যাটট্রিকেও সিরিজ জেতা হল না শ্রীলঙ্কার। প্রথমবারের মতো দেশটি থেকে কোনো সিরিজ না হেরে ফিরছে বাংলাদেশ। এর আগে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজও ড্র হয়েছিল ১-১ ব্যবধানে।

বাংলাদেশের ৯ উইকেটে করা ১৭৬ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা দুই ওভার বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় ১৩১ রানে। ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ। শরীরী ভাষায় ফুটে ছিল মাশরাফিকে জয় দিয়ে বিদায় দেওয়ার স্পষ্ট ছাপ।

কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ উড়ন্ত সূচনা পায় ইমরুল কায়েস-সৌম্য সরকারের ব্যাটে। তামিমের কোমড়ের ব্যথায় সুযোগ পাওয়া ইমরুলের ব্যাট থেকে এসেছে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, খুনে মেজাজে ছিলেন সৌম্য।

দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের তাণ্ডবে বল ফেলার জায়গা পাচ্ছিলেন না লঙ্কান বোলাররা। বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন আসেলা গুনারত্নে। তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সৌম্যর বিদায়ে ভাঙে ৬.৩ ওভার স্থায়ী ৭১ রানের জুটি। ১৭ বলে খেলা তার ৩৪ রানের ইনিংসটি গড়া ৪টি চার ও দুটি ছক্কায়।

টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অর্ধশতকের পথে ছিলেন ইমরুল। রান আউট হয়ে তাকে থামতে হয় ৩৬ রানে।

সাব্বির রহমান-সাকিব আল হাসানের ৪৬ রানের জুটিতে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের দ্রুত বিদায়ের ধাক্কা সামাল দেয় বাংলাদেশ। ১৩ ওভারে ২ উইকেটে ১২৪ রান করা অতিথিদের সামনে তখন দুইশ রানের হাতছানি।

শেষের দিকে খেই হারিয়ে তত দূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৭ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে থামে তার অনেক আগেই। সঞ্জয়ার বলে বোল্ড হয়ে সাব্বিরের বিদায়ে শুরু উল্টো পথে চলা। নুয়ান কুলাসেকারাকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড সর্বোচ্চ ৩৮ রান করা সাকিব।

মালিঙ্গাকে বিশাল ছক্কা হাঁকানো মোসাদ্দেক পরের ওভারে ফিরেন থিসারা পেরেরার বলে বোল্ড হয়ে।

সাত নম্বরে নেমে মুশফিকুর রহিম খেলছিলেন দারুণ। কিন্তু মালিঙ্গার স্লোয়ার ঠিকমতো বুঝতে পারেননি, ফিরে যান বোল্ড হয়ে। নিজের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইনিংসে মাশরাফি বিদায় নেন প্রথম বলেই, বোল্ড হয়ে। অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজ ঠেকাতে পারেননি মালিঙ্গাকে, স্লোয়ারে ফিরেন এলবিডব্লিউ হয়ে।

টি-টোয়েন্টিতে মালিঙ্গার প্রথম হ্যাটট্রিকেই গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের দুইশ রানের কাছাকাছি যাওয়ার আশা।

৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার মালিঙ্গা। গুনারত্নে, থিসারা, কুলাসেকারা, সঞ্জয়া নেন একটি করে উইকেট।

আশা জাগিয়েও লক্ষ্য তত বড় হয়নি। বোলিংয়ে শুরুতেই দরকার ছিল উইকেট, সেটি এনে দিয়েছেন সাকিব। সেটিও ইনিংসের প্রথম ওভারে।

আগের ম্যাচে প্রথম ওভার করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এবার মাশরাফি বল দিলেন বাঁহাতি স্পিনারকে। প্রথম বলে চার হাঁকালেন কুসল মেন্ডিস। পরের বলেই বোল্ড প্রথম ম্যাচে ঝড় তোলা বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

সাকিব আঘাত হানলেন পরের ওভারেও। এবার তাকে চার হাঁকানোর পর মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন দিলশান মুনাবিরা।

টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন মিরাজ। তার বলে উপুল থারাঙ্গার ক্যাচ জমাতে পারেননি মাশরাফি। পরের ওভারেই আক্রমণে এসে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ককে বিদায় করেন মাহমুদউল্লাহ।

আক্রমণে এসে উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমানও। নিজের প্রথম দুই বলে বিদায় করেন আসেলা গুনারত্নে ও মিলিন্দা সিরিবর্ধনেকে। কয়েকবারের চেষ্টায় কাভারে গুনারত্নের ক্যাচ ধরেন মোসাদ্দেক; পয়েন্টে সিবির্ধনের ক্যাচ তালুবন্দি করেন সৌম্য।

মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া থিসারাকে নিয়ে শুরু হয় চামারা কাপুগেদারার প্রতিরোধ পর্ব। ত্রয়োদশ ওভারে ফিরে ৫৮ রানের সেই জুটি ভাঙেন সাকিব। তার বলে বাইরে এসে স্টাম্পড হয়ে যান থিসারা।

টি-টোয়েন্টিতে নিজের শেষ ওভারে মাশরাফি বিদায় করেন বিপজ্জনক সিকুগে প্রসন্নকে। স্টাম্পের বল লেগে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান।

শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজন ৫৮ রান। সেই সময়ের জন্য মুস্তাফিজের দুটি ওভার রেখে দিয়েছিলেন মাশরাফি। বাঁহাতি পেসারের প্রথম বলে ব্যাটের কানায় লেগে কোনোমতে চার পেয়ে যান কাপুগেদারা, পৌঁছান অর্ধশতকে।

পরের বলে আর বাঁচেননি; অফ কাটারে লংঅফে ধরা পড়েন মিরাজের হাতে। ৩৫ বলে ৫০ রান করে কাপুগেদারার বিদায়ে জয়ের আশা প্রায় শেষ শ্রীলঙ্কার। সেই ওভারের শেষ বলে মালিঙ্গাকে বোল্ড করে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে যান মুস্তাফিজ।

বাকিটা সারেন এই সিরিজেই অভিষিক্ত মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তার বলেই লংঅনে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়েন ভিকুম সঞ্জয়া। টানা আট ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।

২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজ। সাকিব ৩ উইকেট নিতে খরচ করেন ২৪ রান। অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেন তিনিই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭৬/৯ (ইমরুল ৩৬, সৌম্য ৩৪, সাব্বির ১৯, সাকিব ৩৮, মোসাদ্দেক ১৭, মাহমুদউল্লাহ ৪*, মুশফিক ১৫, মাশরাফি ০, মিরাজ ০, সাইফ ৬; মালিঙ্গা ৩/৩৪, কুলাসেকারা ১/৩০, মুনাবিরা ০/২২, সঞ্জয়া ১/৩২, গুনারত্নে ১/১৫, প্রসন্ন ০/১৭, থিসারা ১/২৪)।

শ্রীলঙ্কা: ১৮ ওভারে ১৩১ (কুসল ৪, মুনাবিরা ৪, থারাঙ্গা ২৩, কাপুগেদারা, গুনারত্নে ০, সিরিবর্ধনে ০, থিসারা ২৭, প্রসন্ন ১১, কুলাসেকারা ২*, মালিঙ্গা ০, সঞ্জয়া ৬; সাকিব ৩/২৪, মাশরাফি ১/৩০, মিরাজ ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ১/১৫, মুস্তাফিজ ৪/২১, সাইফ ১/২৪)

ফল: বাংলাদেশ ৪৫ রানে জয়ী

সিরিজ: ১-১ ব্যবধানে ড্র

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

ম্যান অব দ্য সিরিজ: লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)