বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে বরিশাল বুলসকে ৭৮ রানে উড়িয়ে দিয়েছে চিটাগং ভাইকিংস। চিটাগংয়ের ১৮৫ রানের পাহাড় তাড়ায় শুরু থেকেই দিশাহারা বরিশাল গুটিয়ে যায় ১০৭ রানে।
আট ম্যাচে এটি চিটাগংয়ের চতুর্থ জয়। ঢাকায় প্রথম ম্যাচ জেতার পর টানা তিন ম্যাচ হেরে এসেছিল তারা চট্টগামে। ঘরের মাঠের শুরুটাও ছিল হার দিয়ে। কিন্তু এরপর টানা তিন ম্যাচ জিতে যখন ফিরছে ঢাকায়, শেষ চারের লড়াইয়ে উঠে এসেছে তারা দারুণ ভাবে!
চিটাগংয়ের জয়ের ভিত গড়া হয় প্রথম ইনিংসেই। দুর্দান্ত দুটি ইনিংসে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন স্মিথ ও মালিক।
ঢাকা পর্বের শেষ ম্যাচে মন্থর ব্যাটিংয়ের পর প্রবলভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন স্মিথ। জায়গাও হারিয়েছিলেন একাদশে। পরে দলে ফিরে খুঁজে পেয়েছেন নিজেকেও। তবে আগের দুই ম্যাচে ঝড় তুললেও দীর্ঘায়িত হয়নি। এবার খেললেন প্রত্যাশিত বড় ইনিংস। ৪৯ বলে ৬৯।
মালিক শুরুর তিন ম্যাচ খেলে ফিরে গিয়েছিলেন পারিবারিক বিয়ের একটি আয়োজনে যোগ দিতে। ফেরার পর থেকেই দারুণ ফর্মে। আগের ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে বড় রান তাড়ায় খেলেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। এদিন আরও খুনে ইনিংসে দলকে এনে দিলেন বড় রান; ৩০ বলে ৬৩!
ম্যাচের প্রথম ওভারে এক রান দিয়ে শুরু করেছিলেন তাইজুল ইসলাম। পরের ওভারেই আবু হায়দারকে দুটি চার মেরে ডানা মেলার চেষ্টা করেন তামিম। তাইজুলকে দুই বাউন্ডারিতে শুরু স্মিথের। বাঁহাতি স্পিনারের পরের ওভারে দুই ব্যাটসম্যান মিলে নেন ১৬ রান।
তবে স্থায়ী হয়নি সেই ঝড়। কামরুল ইসলাম রাব্বিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ১৯ রানে ফেরেন তামিম। ফর্মে থাকা এনামুল হকও এদিন সুবিধা করতে পারেননি। থিসারা পেরেররা অনেক বাইরের ফুল টস তাড়া করে ক্যাচ হয়ে ফেরেন ১৩ বলে ১১ রানে।
তবে স্মিথ চালিয়ে যান। আবু হায়দারকে বিশাল দুটি ছক্কায় উড়িয়ে দেন এক ওভারেই। ২৮ বলে স্পর্শ করেন এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম অর্ধশতক।
বরিশাল তাকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল ৫৩ রানে। কিন্তু কামরুল রাব্বির বলে সহজ ক্যাচ ছাড়েন ডেভিড মালান।
খানিক পর স্মিথও ফেরেন পেরেরার ফুল টসে ক্যাচ দিয়ে। ৩ ছক্কায় করেন ৪৯ বলে ৬৯।
ফুল টস উইকেট প্রসবা হয়েছে আরও একবার, বোলার এবার কামরুল রাব্বি। বিস্ফোরক মোহাম্মদ নবি (৪) এবার আর ঝড় তুলতে পারেননি।
নবি না পারলেও পেরেছেন মালিক। শেষদিকে তুলোধুনো করে ছাড়েন বরিশালের বোলারদের। কামরুল-এমরিটদের ভাসিয়েছেন চার-ছক্কায়। শেষ তিন ওভার থেকে এসেছে ৪৭ রান!
রান তাড়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে তারা ডানা মেলার আগেই। নাদিফ চৌধুরিকে ওপেনিংয়ে আনার ফাটকা কাজে লাগেনি। চোট কাটিয়ে ফিরে ডেভিড মালান পারেননি কিছু করতে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই এই দুজনকে ফেরান মোহাম্মদ নবি।
ব্যাটে না পারার ব্যর্থতা বল হাতে পুরো পুষিয়ে দেওয়ার পণ করছিলেন নবি। ফিরিয়ে দেন জিবন মেন্ডিসকেও।
আরেক প্রান্তে শুভাশীষ রায়কে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে বোল্ড শাহরিয়ার নাফীস। উইকেট উৎসবে যোগ দেন তাসকিন আহমেদও। ৩৯ রানে বরিশাল হারায় ৭ উইকেট। শঙ্কা তখন বিপিএলের সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার। এই আসরেই ৪৪ রানে গুটিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত যে রেকর্ড খুলনা টাইটানসের।
তবে অভিষিক্ত এনামুল হকের ব্যাটে সেই শঙ্কা কাটিয়ে আরও এগিয়ে যায় বরিশাল। মূলত অফ স্পিনার হলেও টুকটাক মারতে পারেন। দলের বিপর্যয়ে এদিন পুরোদস্তুর টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানই হয়ে যান। তার ব্যাটে অভাবনীয় ভাবে একশ’ রানও ছাড়িয় যায় বরিশাল।
চার ছক্কায় ৩৭ বলে ৪২ করে অপরাজিত এনামুল। তাতে কমেছে বরিশালের পরাজয়ের ব্যবধান।
তার পরও ব্যবধানটা বিশাল, সেটিই বলে দিচ্ছে চিটাগংয়ের দাপট!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৮৫/৫ (তামিম ১৯, স্মিথ ৬৯, এনামুল ১১, মালিক ৬৩, নবি ৪, জহুরুল ৭*; তাইজুল ০/৩৮, আবু হায়দার ০/৩৭, কামরুল রাব্বি ২/২৯, এমরিট ১/৪১, পেরেরা ২/৩৭)।
বরিশাল বুলস: ১৮.৪ এভারে ১০৭ (মালান ৫, নাদিফ ৪, শাহরিয়ার ১, মুশফিক ১৯, মেন্ডিস ১, এমরিট ৬, পেরেরা ০, এনামুল ৪২*, তাইজুল ১২, আবু হায়দার ৯, রাব্বি ৪; শুভাশীষ ২/১৬, নবি ৩/১৬, সাকলাইন ০/১৬, তাসকিন ২/২০, মালিক ১/১৫, ইমরান ১/২৪ )।
ফল: চিটাগং ভাইকিংস ৭৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শোয়েব মালিক