মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে গাজীর কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “এই দেখুন, এজন্যই শরীফকে দলে রাখি। দলের প্রাণশক্তির উৎস সে। বল হাতেও এখনও যথেষ্ট কার্যকর।”
শরীফের এই দিক চোখে পড়তে বাধ্য প্রায় সবারই। অমিত সম্ভাবনা নিয়ে শুরুর পরও নানা কারণে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে গেছে অনেক বছর আগে। আবার জাতীয় দলে তাকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটার এই বাস্তবতায় হাল ছেড়ে দেন; ক্রিকেট চালিয়ে গেলেও খেলেন স্রেফ খেলার খাতিরে।
শরীফ সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা শত আঘাতেও অটুট শতভাগ। ক্রিকেট মাঠের সবুজের ছোঁয়া এখনও তার অক্সিজেন। টপ অর্ডার হোক বা লোয়ার অর্ডার, প্রতিটি উইকেট রোমাঞ্চ জাগায় সেই শুরুর দিনগুলোর মতো।
বয়স পেরিয়েছে ৩২, পেস বোলার। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এতদিনে তার হয়ে থাকার কথা স্রেফ অতীতের কঙ্কাল। কিন্তু এখনও শরীফের এই প্রাণশক্তি, এতটা নিবেদন, উৎসাহের উৎস কি?
প্রশ্ন শুনে চেনা ভঙ্গিতে হাসেন শরিফ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সময়ের সঙ্গে নিজেকে এভাবেই গড়ে নিয়েছেন তিনি।
“ক্রিকেটকে প্রচণ্ড ভালোবাসি, ক্রিকেট খেলার মত আনন্দ আর কিছুতে পাই না। জাতীয় দলে নেই বলে কি সেই আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করব? নিজেকে তাই এভাবে গড়ে নিয়েছি আমি। ছোট ছোট ব্যাপারগুলিতে খুঁজে নেই বড় আনন্দ।”
“এখনও অনুশীলনে সিরিয়াস থাকি। মাঠে প্রতিটি বলে নিজেকে উজার করে দেই। প্রতিটি উইকেটে এখনও ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেটের মতোই আনন্দ পাই।”
এই ভালোবাসা, নিবেদনের পুরস্কারও মেলে প্রায়ই। ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনও তিনি পেস বোলিংয়ের অন্যতম শীর্ষ নাম। জাতীয় লিগ, বিসিএলে সেরা পেসারদের মধ্যে থাকেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেসার তিনি (৩৬১)। এই তো কদিন আগে, গোটা বাংলাদেশ ও ক্রিকেটবিশ্ব যখন বুঁদ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, শরীফ তখন বিসিএলে নিয়েছিলেন ৪ ম্যাচে ২১ উইকেট।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার এটিই প্রথম। তবে হ্যাটট্রিক তিনি আগেও করেছেন। জাতীয় লিগে করেছেন, লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার আগে ঢাকা লিগেও। এবারের হ্যাটট্রিক তবু তাকে দিয়েছে বাড়তি একটি তৃপ্তি।
“ক্রিকেটীয় মানে ঢাকা লিগ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা। সবার নজরও এখানেই বেশি থাকে। নিজেকে অনুপ্রাণিত করার কাজটিও সহজ হয়েছে এই হ্যাটট্রিকে। এই বিশ্বাসটা আমি নিজে নিতে পেরেছি এবং অনেককে দিতে পেরেছি যে, শুধু টুকটাক উইকেট পাওয়া নয়, এখনও আমি পার্থক্য গড়ে দিতে পারি।”
স্বপ্ন দেখার সাহসটাও তাই তীব্রতর হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের বাস্তবতায় তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের এপিটাফ এতদিনে লেখা হয়ে যাওয়ার কথা। শরীফ তবু নতুন অধ্যায় রচনার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নের সুড়ঙ্গটা খুবই সরু, ভালো করেই জানেন। তবু সুড়ঙ্গের মাথায় আলোতে মাখামাখি হওয়ার আশায় থাকেন।
“কেন স্বপ্ন দেখব না? অবশ্যই সম্ভব আবার জাতীয় দলে ফেরা। আমি ফাইটার, ফা্ইট করে যাব। যতটা সম্ভব, নিজের মত করে চেষ্টা করে যাব।”
“না হলে নেই! এখনকার মতোই চলবে। যত দিন পারি, একই আনন্দ ও ভালোবাসা নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাব। জাতীয় দলই তো সবকিছু নয়। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেও দেশের ক্রিকেটকে অনেক দেওয়া যায়। একটা দেশের ক্রিকেটের ভিত্তিই হলো ঘরোয়া ক্রিকেট।”
“এই যেমন অলকের (কাপালি) মত সিনিয়র থেকে শুরু করে বিজয়ের (এনামুল হক) মত তরুণ ক্রিকেটাররা বলে, ‘শরীফ ভাই, আপনার অ্যাপ্রোচ-অ্যাটিটিউড থেকে অনেক শেখার আছে।’ এটাও তো বড় প্রাপ্তি। ক্যারিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই দেশের ক্রিকেটের জন্য নিজেকে উজার করে দিতে চাই।”
এটাই শরীফ। এখনও মাঠের ভেতরে-বাইরে তার উপস্থিতি আনন্দময়। তার আনন্দের উৎসও ক্রিকেট। ব্যাট-বলের ঠোকাঠুকিতেই পান জীবনের স্বাদ!