জাতীয় ক্রিকেট লিগ
জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২৬তম আসরের শেষ দিন দাপট দেখালেন বোলাররা, শেষ ম্যাচ হেরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হতে পারল না সিলেট।
Published : 03 Dec 2024, 06:08 PM
এক ম্যাচ বাকি থাকতে শিরোপা নিশ্চিতের পর শেষ রাউন্ডে হেরে গেল সিলেট। তাতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চাওয়া পূরণ হলো না প্রথমবার জাতীয় ক্রিকেট লিগের শিরোপা জয়ী দলটির। আর আসরের শেষ রাউন্ডে এসে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল বরিশাল।
২৬তম আসরের শেষ দিন সিলেটকে হারিয়েছে রাজশাহী। ঢাকাকে হারিয়ে শেষ ম্যাচে প্রথম জয় পেয়েছে বরিশাল। রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ড্র হয়েছে রংপুর-খুলনা ম্যাচ।
নিহাদউজ্জামানের ৫ উইকেট, রাজশাহীর জয়
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে আসরের শেষ দিন মাত্র ২.৪ ওভারে সিলেটের বাকি ২ উইকেট তুলে নিয়ে ৫৪ রানের জয়ে আসর শেষ করেছে রাজশাহী।
প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া নিহাদউজ্জামান দ্বিতীয়বার নেন ৫টি। তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
২০১ রানের লক্ষ্যে ১৪৬ রানে গুটিয়ে গেছে আগেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলা সিলেট।
১২ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে ৭৮৫ রান করে সিলেটের শিরোপা জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অমিত হাসান। তার হাতেই ওঠে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার।
সিলেটের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি দিয়েই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ফরহাদ রেজা। ২০০৫ থেকে প্রায় ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে ১৪৪ ম্যাচ খেলে ৭ সেঞ্চুরি ও ৩৩ ফিফটিতে ৫ হাজার ৯০৪ রানের সঙ্গে ইনিংসে ৯ বার ৫ উইকেটসহ তার শিকার ৩১৫ উইকেট।
ম্যাচ শেষে বিসিবি ও সতীর্থদের কাছ থেকে বিশেষ স্মারক উপহার পান ফরহাদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ২২৬
সিলেট ১ম ইনিংস: ২১২
রাজশাহী ২য় ইনিংস: ১৮৬
সিলেট ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২০১) ৪৩.৪ ওভারে ১৪৬ (আগের দিন ১৪২/৮) (সফর ৩*, নাবিল ২, নাঈম আহমেদ ২; শফিকুল ১৩-০-৪৯-৩, নিহাদউজ্জামান ১৪.৪-৪-২৪-৫, আসাদুজ্জাম্ন ৪-০-১৯-০, ওয়াসি ২-০-১৪-০, মেহেরব ৮-৪-২৩-১, সাব্বির ২-০-১৫-০)
ফল: রাজশাহী ৫৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নিহাদউজ্জামান
শেষ ম্যাচে বরিশালের প্রথম জয়
লিগের শেষ রাউন্ডে এসে এবারের আসরে প্রথম জয় পেয়েছে বরিশাল। রুয়েল মিয়ার চমৎকার বোলিংয়ে ঢাকাকে ১২২ রানে হারিয়েছে তারা।
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ২২১ রানের লক্ষ্যে ৯৮ রানে গুটিয়ে গেছে ঢাকা। প্রথম ইনিংসে বরিশালের ২৮৯ রানের জবাবে ঢাকা করে ৯ উইকেটে ৩১০ রান। পরে বরিশাল অলআউট হয় ২৪১ রানে।
সাত ম্যাচে এক জয় ও দুই ড্রয়ে মাত্র ১২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থেকে আসর শেষ করল বরিশাল। সমান ম্যাচে দুই জয় ও চার ড্রয়ে ২৫ পয়েন্ট ঢাকার।
প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট নেওয়া রুয়েল দ্বিতীয়বারে নেন ৬টি। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
আসরজুড়ে দারুণ বোলিং করা এনামুল হক নেন ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে ১৪ ইনিংসে ৩৬ উইকেট নিয়ে আসরের সবচেয়ে সফল বোলার ঢাকার ২৪ বছর বয়সী এই পেসার।
৫ উইকেটে ২০৭ রানে শেষ দিন শুরু করা বরিশাল মঙ্গলবার আর ৩৪ রান যোগ করতে পারে। মইন খান আউট হন ৪০ রান করে।
রান তাড়ায় রুয়েলের তোপে দেড় সেশনও টিকতে পারেনি ঢাকা। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা রনি তালুকদার এবার করেন দলের সর্বোচ্চ ৩৭ রান।
মাত্র ২৮ রানে ৬ উইকেট নেন রুয়েল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বরিশাল ১ম ইনিংস: ২৮৯
ঢাকা ১ম ইনিংস: ৩১০/৯ ডিক্লে.
বরিশাল ২য় ইনিংস: ৯৭.৫ ওভারে ২৪১ (আগের দিন ২০৭/৫) (মইন ৪০, রুয়েল ১, সোহাগ ০, শামসুল ১২*, তানভির ৯, মোজম্মেল ০; সুমন ১৪-৪-৩৩-১, সালাউদ্দিন ১৭-৬-৪৪-৩, এনামুল ১১-৩-৪৪-২, মোসাদ্দেক ২০.৫-৮-২৭-২, মাহফুজুর ২০-৪-৪৪-১, আরিফুল ৬-৩-১৩-০, তাইবুর ৯-২-২১-১)
ঢাকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২২১) ৩৮.২ ওভারে ৯৮ (জিসান ৪, রনি ৩৭, আরিফুল ২১, আহরার ০, আশিকুর ৮, মোসাদ্দেক ৪, তাইবুর ১৭, সুমন ৪, মাহফুজুর ১, এনামুল ০, সালাউদ্দিন ০*; রুয়েল ৯-২-২৮-৬, মোজাম্মেল ৭-০-২১-২, মইনুল ৭-০-২১-১, সোহাগ ৮.২-২-১৪-১, মইন ৭-২-১২-০)
ফল: বরিশাল ১২২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রুয়েল মিয়া
খুলনায় রোমাঞ্চকর ড্র
খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে নাটকীয়তার পর ড্রয়ে শেষ হয়েছে খুলনা ও রংপুরের ম্যাচ।
ম্যাচের শেষ দিন প্রথম সেশন শেষে ৬ উইকেটে ১৪৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে দেয় খুলনা। রংপুরের সামনে দাঁড়ায় ২৫৯ রানের লক্ষ্য। একপর্যায়ে রংপুরকে চেপে ধরে খুলনা। পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৭ উইকেটে ২৪২ রানে দিন শেষ করে রংপুর।
সাত ম্যাচে দুই জয় ও চার ড্রয়ে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে লিগ শেষ করল রংপুর। সমান ম্যাচে দুই জয় ও চার ড্র করা খুলনার সংগ্রহ ২৪ পয়েন্ট।
শেষ দিন খুলনার হয়ে ৩৯ রান করেন অমিত মজুমদার। শেখ পারভেজ রহমান ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন। মুকিদুল ইসলাম নেন ৩ উইকেট।
রান তাড়ায় মেহেদি হাসানের তোপে ১০২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। পরে নবিন ইসলামকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন তানবীর হায়দার।
৩২ রান করে নবিন আউট হওয়ার সময় দিনের খেলা এক ঘণ্টার বেশি বাকি ছিল। কিন্তু এরপর আর সাফল্য পায়নি খুলনা।
অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮১ রান যোগ করে বাকি সময় পার করে দেন তানবীর ও আরিফুল হক। ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে কয়েক ওভার খেলা হলে ম্যাচ জেতার চেষ্টা করেন তারা। তবে শেষপর্যন্ত সফল হননি।
তানবীর ৮ চারে ১৩৩ বলে ৭৮ ও আরিফুল ৭ চারের সঙ্গে ১ ছক্কায় ৫২ বলে ৫৬ রান করে অপরাজিত থাকেন।
খুলনার হয়ে ৪ উইকেট নেন মেহেদি। এর সঙ্গে প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন বাঁহাতি পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা ১ম ইনিংস: ২৪৪
রংপুর ১ম ইনিংস: ১৩৩
খুলনা ২য় ইনিংস: ২৮ ওভারে ১৪৭/৬ ডিক্লে. (আগের দিন ৬/০) (এনামুল ১৪, অমিত ৩৯, রবিউল ০, মিঠুন ৯, নাহিদুল ২৬, জাওয়াদ ৫, পারভেজ ৩১*, মাসুম ১৮*; মুকিদুল ৯-০-৪৮-৩, মেহেদি ৮-০-৪৯-১, রিজওয়ান ৫-০-১৫-০, আরিফুল ৬-০-৩২-২)
রংপুর ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৫৯) ৫৫ ওভারে ২৪২/৭ (মিম ১৫, নজরুল ৫, খালিদ ২৭, রিজওয়ান ২, মামুন ০*, নাঈম ১৫, তানবীর ৭৮*, নবিন ৩২, আরিফুল ৫৬*; আল আমিন ৮-২-৩৫-০, মাসুম ১৩-৩-৪৮-২, মেহেদি ১৪-০-৭০-৪, পারভেজ ৪-০-২২-০, নাহিদুল ৩-০-১৩-০, আরিদুল ১৩-১-৪৩-১)
ফল: ম্যাচ ড্র
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান