ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্সে সিরিজে সমতায় বাংলাদেশ

সিলেটে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2024, 03:48 PM
Updated : 6 March 2024, 03:48 PM

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে কাছে গিয়েও পরাজয়ের ধাক্কা সামলে এবার অনায়াসে জিতল স্বাগতিক দল।

সিলেটে বুধবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জেতে ৮ উইকেটে।

তিন ম্যাচের সিরিজে দুই দলের জয় এখন একটি করে। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ একই মাঠে শনিবার দুপুরে।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেট সবুজ ঘাসে ভরা থাকলেও তা ছিল ব্যাটিং সহায়ক। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে করতে পারে ১৬৫ রান। মাঝারি সেই রান তাড়ায় বাংলাদেশকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। ম্যাচ শেষ ১১ বল বাকি থাকতেই।

দলের জয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য সুখবর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর রানে ফেরা। ৩৮ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

রান তাড়ায় তৃতীয় আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্তে সৌম্য সরকার টিকে যাওয়ায় বিতর্ক ছড়ায় বেশ। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত বড় প্রভাব রাখেনি ম্যাচে।

শরিফুল ইসলামের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ম্যাচের শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে আভিশকা ফার্নান্দোকে উইকেটে বেঁধে রেখে মেইডেন নেন তিনি। তার ৩৬ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের এটি প্রথম মেইডেন।

সেই অস্থিরতা থেকেই পরের ওভারে জোর করে শট বানিয়ে খেলার চেষ্টায় তাসকিন আহমেদকে উইকেট উপহার দেন আভিশকা (৭ বলে ০)। এবার বিপিএলে ভালো করলেও জাতীয় দলের হয়ে তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের অবস্থা করুণ। সবশেষ ১১ ইনিংস মিলিয়ে রান করেছেন মোট ৩৮। ১০টিতেই ছুঁতে পারেনি দু অঙ্ক।

শরিফুল নিজের পরের ওভারেও রান দেন মাত্র তিন। চতুর্থ ওভার থেকে শ্রীলঙ্কা শুরু করে পাল্টা আক্রমণ। তাসকিনের ১৪৩ কিলোমিটার গতির বল ফ্লিক করে গ্যালারিতে পাঠান তিনে নামা কামিন্দু মেন্ডিস।

ওই ওভারে ১৪৭ কিলোমিটার গতিও ছাড়িয়ে যান তাসকিন। তাতে লাভ হয়নি। কামিন্দুর ব্যাট থেকে আরও একটি করে ছক্কা ও চারসহ ওভার থেকে ১৭ রান। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানের ওভারে কুসাল মেন্ডিসের দুটি চার ও এক ছক্কায় আসে ১৫ রান।

প্রথম তিন ওভারে আট রান করা শ্রীলঙ্কা পরের তিন ওভার থেকে তোলে ৪১ রান।

বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙতে সৌম্য সরকারকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। কাজ হয় তাতে। গতি মাত্র ১২১ কিলোমিটার হলেও অফ স্টাম্প ঘেঁষা বাড়তি লাফানো দারুণ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন কুসাল মেন্ডিস।

আগের ম্যাচে ফিফটি করা ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন ৩ ছক্কায় ২২ বলে ৩৬ করে। জুটি থামে  ৪২ বলে ৬৬ রানে।

পরের ওভারে আরেকটি বড় ধাক্কা আসে শ্রীলঙ্কার জন্য। রিশাদ হোসেনকে স্লগ সুইপে বিশাল এক ছক্কা মারার পরের বলেই রান আউটে কাটা পড়েন কামিন্দু মেন্ডিস (২৭ বলে ৩৭)।

থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে একটু কমে আসে শ্রীলঙ্কার রানের গতি। আগের ম্যাচে অপরাজিত ৬১ রান করা সাদিরা সামারাউইক্রামা এবার মুস্তাফিজকে ফিরতি ক্যাচ দেন ১১ বলে ৭ করে।

চারিথ আসালাঙ্কা অবশ্য আরও একবার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন। শরিফুলের শর্ট বলে ছক্কার পর শেখ মেহেদির বল নিজের জোনে পেয়ে ছক্কায় ওড়ান লং অন ও লং অফ দিয়ে।

তবে আগের ম্যাচে ৬ ছক্কার ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হওয়া শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এবার অতটা পার্থক্য গড়তে পারেননি। মেহেদির ওই ওভারেই জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান ১৪ বলে ২৮ করে।

ইনিংসের বাকি তখন আর কেবল ৬ ওভার। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দাসুন শানাকার সামনে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ যেমন ছিল, তেমনি দ্রুত রানও তুলতে হতো তাদের। ম্যাথিউস সেই কাজটি করতে পারলেও পারেননি শানাকা। বাংলাদেশের বোলাররাও বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন সেই সময়টায়।

ম্যাথিউসের সৌজন্যেই মূলত ১৬৫ পর্যন্ত যেতে পারে শ্রীলঙ্কা। ২১ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ ওভারে মুস্তাফিজকে ছক্কার পরও শানাকার রান ১৮ বলে ২০।

আগের ম্যাচের মতোই খরুচে বোলিংয়ে ৪ ওভারে ঠিক ৪২ রান দেন মুস্তাফিজ। সেদিনের মতোই এক ওভারের বেশি বোলিং পাননি ভালো বল করা সৌম্য। উইকেট না পেলেও রান আটকে রাখেন শরিফুল ও রিশাদ হোসেন।

রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয় উড়ন্ত। প্রথম তিন ওভারে লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে আসে তিনটি করে বাউন্ডারি।

এরপরই চরম বিতর্কিত মুহূর্ত। বিনুরা ফার্নান্দোর বলে সৌম্যকে কট বিহাউন্ড আউট দেন আম্পায়ার। ব্যাটসম্যান রিভিউ নেন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। রিভিউয়ে আল্ট্রা এজ-এ বড় স্পাইক ফুটে ওঠে। সৌম্য তা দেখে ড্রেসিং রুমের পথে এগিয়েও যান অনেকটা। কিন্তু একটি ফ্রেম দেখে তৃতীয় আম্পায়ারের মনে হয়, ব্যাট ও বলের মধ্যে ফাঁক আছে কিছু। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তিনি বদলে দেন।

রিপ্লেতে যদিও স্টাম্প মাইকে শব্দ শোনা যায় স্পষ্ট। ব্যাটের কাছাকাছি বল ছাড়া আর কিছু ছিলও না। লঙ্কান ফিল্ডাররা মেনে নিতে চাননি সেই সিদ্ধান্ত। তারা ঘিরে ধরেন আম্পায়ারকে। খেলা বন্ধ থাকে বেশ কিছুক্ষণ।

পরে আবার খেলা শুরু হতে রানের ফোয়ারাও ছুটতে থাকে। টাইমিং ও প্লেসমেন্ট মিলিয়ে জাদুকরি কিছু শট খেলেন লিটন। লঙ্কানদের আলগা বোলিং কাজে লাগিয়ে রান বাড়ান সৌম্যও। পাওয়ার প্লেতে রান আসে ৬৩।

দুই ওপেনারকেই থামান মাথিসা পাথিরানা। আগের ম্যাচে এলোমেলো বোলিংয়ে ওয়াইড-নো বলের জোয়ার বইয়ে দেওয়া পেসার এবার ছিলেন অন্য চেহারায়। তার দুই ওভারে দুটি শর্ট বলে প্রায় একই রকম দুটি শটে উইকেট বিলিয়ে দেন দুজন। ২২ বল খেলে সৌম্য করেন ২৬, ২৪ বলে ৩৬ লিটন।

দুজনের ৬৮ রানের জুটিতে অবশ্য রান রেটের চাপটা দূরে সরে যায় অনেকটা। শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়কে তাই বাড়তি কিছু চেষ্টা করতে হয়নি। লঙ্কানদের বোলিংয়েও ছিল না তেমন কোনো ধার। রাতের শিশির আগের দিনের মতোই বোলারদের কাজ করে তোলে কঠিন।

শুরুতে একটু সময় নিয়ে থিতু হন শান্ত। ১২ ওভার শেষে তার রান ছিল ১৯ বলে ২০। পরের সময়টায় দারুণ কিছু শটে দ্রুত রান তোলেন তিনি। দাসুন শানাকার বলে বিশাল ছক্কায় ফিফটিতে পা রাখার পাশাপাশি ম্যাচ শেষ করে দেন তিনি।

এবারের বিপিএলে তার ব্যাট নিশ্চুপ ছিল পুরোপুরি। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ছিলেন ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ৮ ইনিংসে ছাড়াতে পারেননি ২০। সেই দুঃসময়কে পেছনে ফেলে এবার রানে ফিরলেন তিনি।

শেষ দিকে একটি ছক্কায় হৃদয় অপরাজিত থাকেন ২৫ বলে ৩২ রানে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে রান আসে ৫৫ বলে ৮৭।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬৫/৫ (আভিশকা ০, কুসাল মেন্ডিস ৩৬, কামিন্দু মেন্ডিস ৩৭, সামারাউইক্রামা ৭, আসালাঙ্কা ২৮, ম্যাথিউস ৩২*, শানাকা ২০*; শরিফুল ৪-১-২০-০, তাসকিন ৪-০-৩৮-১, শেখ মেহেদি ৪-০-৩৯-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৪২-১, রিশাদ ৩-০-২১-০, সৌম্য ১-০-৫-১)।

বাংলাদেশ: ১৮.১ ওভারে ১৭০/২ (লিটন ৩৬, সৌম্য ২২, শান্ত ৫৩*, হৃদয় ৩২*; ম্যাথিউস ২.২-০-২২-০, মাদুশাঙ্কা ৪-০-৩৪-০, বিনুরা ৩-০-২২-০, থিকশানা ৪-০-৩৫-০, পাথিরানা ৩.৪-০-২৮-২, শানাকা ১.১—১৯-০)।

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজের দুটি শেষে ১-১ সমতা।

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত।