নিউ জিল্যান্ডের ১০ ওভারের ঝড়ে এলোমেলো বাংলাদেশ

প্রথম ২০ ওভারে ১১১ রান তোলার পর শেষ ১০ ওভারে চার-ছক্কার ঝড়ে নিউ জিল্যান্ড তুলল ১২৮ রান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2023, 05:30 AM
Updated : 17 Dec 2023, 05:30 AM

১২টি চার, ৮টি ছক্কা। মোট ২০ বাউন্ডারি। নাহ, গোটা ইনিংসের পরিসংখ্যান নয়। নিউ জিল্যান্ডের স্রেফ ১০ ওভারের সাইক্লোনের চিত্র এটি! 

প্রথম ২০ ওভারে মোটামুটি লড়াই চলছিল দুই দলের। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে কিউই ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবে বাংলাদেশ যেন বিধ্বস্ত জনপদ। ২০ ওভারে যে দলের রান ছিল ১১১, তারাই শেষ ১০ ওভারে তুলে ফেলল ১২৮ রান! 

এই ১০ ওভারেই বলা যায় নিউ জিল্যান্ড চলে গেল বাংলাদেশের নাগালের বাইরে। 

অথচ শুরুটা কত দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশের। মেঘলা আকাশের নিচে টস জিতে বোলিংয়ের সুযোগ। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হতেই প্রথম ওভারে দুই উইকেট! ম্যাচের প্রথম বলে বাউন্ডারি হজম করলেও অসাধারণ দুটি ডেলিভারিতে রাচিন রবীন্দ্র ও হেনরি নিকোলসকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। 

উইল ইয়াং ও টম ল্যাথামের লড়াই। সৌম্য সরকার যদি ১৮ রানে ল্যাথামের ক্যাচ না ছাড়তেন, আরেকটু চাপে পড়ে যেত তারা। 

জীবন পেয়ে সাবলিল ব্যাটিংয়ে ল্যাথাম পৌঁছে গেলেন ফিফটিতে। ইয়াংও সঙ্গ দিয়ে এগিয়ে গেলেন। শতরানের জুটি গড়ে উঠল। রান রেট তবু ছিল ওভারপ্রতি ছয়ের নিচে। নিয়ন্ত্রণ তখনও কিছুটা ছিল বাংলাদেশের। 

বিশতম ওভারে আবার বৃষ্টি এসে খেলা বন্ধ হলো তৃতীয় দফায়। বৃষ্টি শেষে ম্যাচ নেমে এলো ৩০ ওভারে। এই সময়টাতেই সবকিছু চলে গেল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। 

এই বৃষ্টি বিরতি কিছুটা দুর্ভাগ্যও বয়ে আনল বাংলাদেশের জন্য। ৩০ ওভারের ম্যাচে ৬ ওভারের বেশি করতে পারবেন না কোনো বোলার। কন্ডিশনের সহায়তা নিতে শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমানের ৫ ওভার করে শেষ ততক্ষণে। ২০ ওভার শেষে হাসান মাহমুদের ৬ ওভারও শেষ। 

মূল বোলারদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজের ৪ ওভার তখনও বাকি। কিন্তু এই কন্ডিশনে তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় তো ছিলই। সেটা সত্যিও হলো। বিশেষজ্ঞ বোলারের ঘাটতি নিয়ে একাদশ সাজানো দলকে বাকি ওভারগুলোর জন্য নির্ভর করতে হলো সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেনদের ওপর। 

মিরাজ-সৌম্য-আফিফরা শেষের সেই চ্যালেঞ্জে মুখ থুবড়ে পড়লেন। বোলিংয়ে কোনো ধার তো দেখাই গেল না, লাইন-লেংথেও ধারাবাহিক হতে পারলেন না তারা। ল্যাথাম, ইয়াং ও পরে মার্ক চ্যাপমান তা কাজে লাগিয়ে বইয়ে দিলেন রানের জোয়ার। 

শেষ ১০ ওভারের খেলা শুরু হতেই প্রথম বলেই সৌম্যকে স্কুপ করে কিপারের ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ালেন ল্যাথাম। ওই ওভারেই আরেকটি স্কুপ শটে ছক্কা মারলেন ইয়াং। মিরাজ আক্রমণে এলেন। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে তাকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন ল্যাথাম। সৌম্যর পরের ওভারে মারলেন টানা তিনটি চার। 

চার-ছক্কার স্রোত বয়ে যেতে থাকল। আফিফ হোসেনের একমাত্র ওভার থেকে এলো ১৭ রান। মিরাজকে স্লগ করতে গিয়ে ল্যাথাম সেঞ্চুরি হারালেন বটে (৭৭ বলে ৯২), কিন্তু রানের গতি কমল না। চ্যাপমান ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারলে চোখধাঁধানো টাইমিংয়ে। দুই বল পরই ছক্কা। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ার ডেলিভারিতেও সোজা ব্যাটে দুর্দান্ত শটে ছক্কায় ওড়ালেন চ্যাপম্যান। 

সৌম্যর এক ওভারে চারটি বাউন্ডরি এলো ইয়াংয়ের ব্যাট থেকে। কাজটা সহজ করে দিলেন বোলার নিজেই। একের পর এক আলগা ডেলিভারি করলেন তিনি, শর্ট পিচ-হাফ ভলি-ফুল টস! তার মতো এই পেস নিয়ে এসব ডেলিভারি করলে তো আর রক্ষা নেই। ফিল্ডিং অনুযায়ী বল করতে পারলেন কমই। 

স্কয়ার লেগ সীমানায় ফিল্ডার না থাকার পরও শর্ট বল করে গেলেন বারবার। তা দেখে ধারাভাষ্যকার ক্রেইগ ম্যাকমিলান তো এক পর্যায়ে বলেই ফেললেন, “সীমানায় ফিল্ডার না রেখে এটা স্রেফ পাগলাটে বোলিং…।”

 পরের ওভারে মিরাজকে চার-ছক্কা মেরে ইয়াং সেঞ্চুরিতে পৌঁছে গেলেন ৮২ বলে। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরি গেলেন তিনি স্রেফ ২১ বলে! 

শেষ ওভারটি বাউন্ডারি দিয়ে শুরুর পরও রান খুব বেশি হলো না তিন ব্যাটসম্যান রান আউট হওয়ায়। কিন্তু সর্বনাশ তো যা হওয়ার, হয়েই গেছে! 

বাংলাদেশের সম্ভাবনার সমাধি বলা যায় ওই ১০ ওভারেই।