অল্প সুযোগেও রঙিন তাইজুল

এবারের বিপিএলে খুব বেশি ম্যাচে মাঠে নামানো হয়নি তাকে, তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2024, 02:19 PM
Updated : 23 Feb 2024, 02:19 PM

লিটন কুমার দাস হতভম্ব হয়ে ক্রিজে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল কীভাবে স্টাম্পে ছোবল দিল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না যেন। আন্দ্রে রাসেলের চেহারায় অমন হতচকিত ভাব ফুটে ওঠেনি বটে। তবে ডেলিভারির গতি ও অ্যাঙ্গেলের বৈচিত্রে বিভ্রান্ত তিনিও কম হননি। দুটি আউট দেকেই মনে হচ্ছিল, তুখোড় কোনো বোলারের ঝলক এসব। অথচ সেই বোলারকে টি-টোয়েন্টির উপযোগীই মনে করা হয় না খুব একটা।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার মূল পরিচয় ‘টেস্ট বিশেষজ্ঞ।’ এরপর আর নামটি না বললেও চলে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারীমাত্রই বুঝে ফেলার কথা, তাইজুল ইসলাম ছাড়া আর কে!

এবারের বিপিএলও তার ক্যারিয়ারের এক টুকরো প্রতিচ্ছবি যেন। তাকে মাঠে নামানো হলেই বেশির ভাগ সময় ভালো করেছেন। কিন্তু তার পরও একাদশে সুযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে চাতক পাখির মতো। এই যেমন শুক্রবার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিলেন তিনি টুর্নামেন্টের ফেভারিট কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে।

৪৮ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলে পরে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল। তবে ফরচুন বরিশালের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারটি অনায়াসে পেতে পারতেন তাইজুলও।

টুর্নামেন্টে বরিশালের ১২ ম্যাচের স্রেফ ৫টিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এমন সীমিত সুযোগেও নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেছেন তিনি। স্রেফ একটি ম্যাচে খরুচে বোলিংয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি, বাকি চারটি ম্যাচেই তিনি ছিলেন ক্ষুরধার। উইকেট নিয়েছে ৮টি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন স্রেফ ৬।

এটা শুধু বরিশাল দলেই নয়, সাদা বলের ক্রিকেটে তাকে নিয়ে আস্থার ঘাটতি গোটা বাংলাদেশের ক্রিকেটেই। ওয়ানডেতে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, কার্যকর হয়েছেন বেশিরভাগ সময়ই। কিন্তু অভিষেক ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিকসহ রেকর্ড গড়া বোলিংয়ের পরও ৮ বছরের বেশি ক্যারিয়ারে সম্বল স্রেফ ১৮ ম্যাচের অভিজ্ঞতা। টি-টোয়েন্টিতে তো অবস্থা আরও করুণ। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বলতে সেই ২০১৯ সালের দুটি টি-টোয়েন্টি।

কুমিল্লার বিপক্ষে দারুণ বোলিংয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে সেই আক্ষেপই যেন ফুটে উঠল তাইজুলের কণ্ঠে। 

“ভালো কিছু করলে তো ভালো লাগেই। ভালো লাগাটাই স্বাভাবিক। যখন একজন ক্রিকেটারের আপনি ভরসা রাখবেন বা বিশ্বাস রাখবেন, তার ভালো করাটাই স্বাভাবিক। হয়তো এই জিনিসগুলোর অনেক সময় ঘাটতি ছিল। ক্রিকেটার হিসেবে আরেকজন ক্রিকেটারের পাশে থাকাটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই এই জিনিসগুলো আবার ফিরে আসে।”

তবে এটাও তিনি বললেন, বছরের পর বছর ধরেই সাদা বলের ক্রিকেটে উপেক্ষার পর এখন সেই বেদনা তাকে খুব একটা পোড়ায় না।

“এরকম কিছু এখন আর লাগে না (যন্ত্রণা)… প্রথম দিকে লাগত। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।”

“প্রতিটি ক্রিকেটার দেশের জন্য সব সংস্করণে খেলবে না। এটাই মেনে নিতে হবে। অনেক দেশেই অনেক ক্রিকেটার আছে, ভালো খেলার পরও তার সুযোগ আসে না। আমি একটা জিনিসই চেষ্টা করি, যে সময় সুযোগ আসবে, তখন যেন ভালো করে মেলে ধরতে পারি।”

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাইজুলের ওপর আস্থা ঘাটতির মূল কারণ তার বোলিংয়ের ধরন। অনেকটাই প্রথাগত ঘরানার স্পিনার তিনি। আধুনিক স্পিনারদের মতো জোরের ওপর বোলিং খুব একটা করেন না, অনেক অস্ত্রের সমাহার নেই তার বোলিংয়ে।

তাইজুল জানালেন, সেসব নিয়ে খুব ভাবনাও তার নেই। নিজের মতে বোলিং করেই তিনি সাফল্যের ছবি আঁকেন।

“নতুন কিছু আয়ত্ত করার বিষয় নয় এখানে। হয়তো বলের রঙ আলাদা, তবে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে খেলতে গেলে কিছু বৈচিত্র লাগবেই। সেটা গতির বৈচিত্র বলুন বা অ্যাঙ্গেলের বৈচিত্র, এই সাধারণ জিনিসগুলো সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলো গুরুত্বপূর্ণ। ওই জিনিসগুলো ভালো হচ্ছে।”

ক্যারিয়ারজুড়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে খুব একটা সুযোগ না পেলেও আগামী মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দলের ফেরানো হয়েছে তাকে। তবে তাতে উচ্ছ্বাসে তিনি ভেসে যাচ্ছে না। যাওয়া-আসার অধ্যায় তো কম দেখেননি ক্যারিয়ারে! তাইজুলও তাই দূর ভবিষ্যতে তাকাচ্ছেন না এখনই।

“এই সিরিজের পরে সামনে আবার সুযোগ আসবে কি না, এটা আমিও জানি না। আমি বর্তমানে থাকব, বর্তমান নিয়েই চিন্তা করব। আমার এমনিতে সবসময় চিন্তা থাকেই যে বাংলাদেশের হয়ে ভালো কিছু করব।”