বাংলাদেশ ক্রিকেট
পুরো সফরের সূচি তিন দিন করে পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
Published : 07 Aug 2024, 05:50 PM
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে পিছিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান সফরের নতুন সূচি পেল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। আগামী শুক্রবার দেশ ছাড়বেন মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হকরা। পুরো সফরের সূচি তিন দিন করে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বুধবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে এই খবর।
পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার কথা ছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দলের। কিন্তু অনিবার্য কারণ দেখিয়ে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয় সেটি। শেষ পর্যন্ত সফরটি পেছাল ৭২ ঘণ্টা।
আগামী শুক্রবার রওনা দেবে ‘এ’ দল। আগের সূচিতে ১০ অগাস্ট শুরু কথা ছিল প্রথম চার দিনের ম্যাচ। নতুন সূচিতে সেটি শুরু হবে ১৩ অগাস্ট। একইভাবে পরের ম্যাচগুলোও তিন দিন করে পিছিয়ে গেছে।
নতুন সূচিতে দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচটি শুরু হবে ২০ অগাস্ট। আর এক দিনের ম্যাচ তিনটি যথাক্রমে ২৬, ২৮ ও ৩০ অগাস্ট। সবগুলো ম্যাচই হবে ইসলামাবাদে।
গত সোমবার সফর পেছানোর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনিবার্য কারণ প্রকাশ করেনি বিসিবি। তবে সেটি যে সারা দেশে চলমান গণআন্দোলন ও পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের সঙ্গে জড়িত, তা বুধবার নিশ্চিত করেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফীস।
পাকিস্তান সফরের জন্য চট্টগ্রামে প্রায় দুই সপ্তাহের প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছেন ক্রিকেটাররা। এনামুল হককে চার দিনের ও তাওহিদ হৃদয়কে এক দিনের ম্যাচগুলোর জন্য অধিনায়ক করে ভিন্ন তিনটি দল ঘোষণা করেছে বিসিবি।
চট্টগ্রাম থেকে ফিরে গত শনিবার ঢাকায় শুরুর কথা ছিল অনুশীলন পর্ব। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেদিন শুধু ফিটনেস পরীক্ষা দেন ক্রিকেটাররা। পরে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয় পরবর্তী দিনগুলোর অনুশীলন।
এখন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় বুধবার নতুন করে অনুশীলন শুরু করেছে ‘এ’ দল। বুধবার সকালে ব্যাট-বল হাতে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার আগে গত কয়েক সপ্তাহের জাতীয় আন্দোলনে শহীদদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বিসিবির কোচ মিজানুর রহমানের তত্ত্বাবধানে বুধবারের অনুশীলনে যোগ দেন ১৯ ক্রিকেটার। ‘এ’ দলে থাকা মুশফিক, মুমিনুল, জাকির হাসানরা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে অনুশীলনে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, রিশাদ হোসেনরা।
অনুশীলন শেষে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন শাহরিয়ার নাফীস।
“আজ আমরা ‘এ’ দলের অনুশীলন শুরু করেছি। পিসিবির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, ৯ অগাস্ট আমরা উড়াল দিতে পারব। আমাদের ৬ অগাস্ট যাওয়ার কথা ছিল। ১০ অগাস্ট খেলাটা শুরুর কথা ছিল।”
“এখন আজকের আলোচনা অনুযায়ী, আমরা ১৩ অগাস্ট খেলা শুরু করতে পারব। পুরো সিরিজের সূচি একই থাকছে। আমরা শুধু ৩ দিন বডিলি শিফট করার কথা বলেছি। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে থেকেও আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।”
‘এ’ দলের পর জাতীয় দলেরও পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে গত শনিবার থেকেই শুরুর কথা ছিল জাতীয় দলের অনুশীলন। কিন্তু ফিটনেস ট্রেনিংয়ের পর সেটিও স্থগিত হয়ে যায়।
নাফীসের আশা, বৃহস্পতিবার থেকে অনুশীলনে ফিরতে পারবেন ক্রিকেটাররা।
“দেশের গত দুই-তিন দিনের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জন্য (জাতীয় দলের) অনুশীলন শুরু করাটা সবার আগে চিন্তার জায়গা ছিল। আলহামদুলিল্লাহ্ আজকে আমরা (‘এ’ দলের) অনুশীলন শুরু করতে পেরেছি।”
“বিগত তিন-চার দিনের অবস্থায় আমাদের অনুশীলনের সুবিধাদির কী অবস্থা, সেটাও আমরা বুঝতে পারছিলাম না। কারণ মাঠকর্মীরা নিয়মিত কাজ করতে পারছিল না। আজকে এসে দেখেছি মাঠকর্মীরা সব প্রস্তুত রেখেছে। তাই ‘এ’ দলের অনুশীলন শুরু করতে পেরেছি। আশা করি, আগামীকাল জাতীয় দলের অনুশীলনও শুরু করতে পারব।”
গত জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরপরই ছুটিতে চলে যান জাতীয় দলের বিদেশি কোচরা। পাকিস্তান সফরের জন্য গত মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল তাদের। কিছুটা পিছিয়ে ১ অগাস্টের মধ্যে দেশে চলে এসেছেন তারা।
তাই জাতীয় দলের অনুশীলনে প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহেসহ কোচিং স্টাফের সকল সদস্যকে পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন নাফীস।
“বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের যে সাপোর্ট স্টাফ, তারা সবাই দেশে আছেন। গত ১ অগাস্ট থেকেই তারা দেশে আছেন। তারা অনুশীলন শুরুর অপেক্ষায় আছেন। আমরা যদি অনুশীলন শুরু করতে পারি, তাহলে তারা অবশ্যই অনুশীলনে থাকবেন ইনশাআল্লাহ্।”
এদিকে মঙ্গলবার ও বুধবার কোনো বোর্ড পরিচালকের দেখা মেলেনি বিসিবিতে। শাহরিয়ার নাফীস ও বিভিন্ন কমিটির কয়েকজন ম্যানেজার তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রসঙ্গে নাফীস জানান, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ও ভাইস চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তার।
“বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যারা পরিচালক, তারা সবাই ভলান্টারি পরিচালক। তারা নিজের ব্যক্তিগত পেশার বাইরেও এখানে নির্বাচিত হয়ে কাজ করেন। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। তারা অফিসে আসার জন্য বাধ্য নন। তারা নিজেদের কাজগুলো রুটিনমাফিক করছেন।”
বোর্ড পরিচালকদের অনুপস্থিতিতে অনেকটা বদলেছে বিসিবির বাহ্যিক পরিস্থিতি। এমনিতে সবসময় নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা থাকলেও মঙ্গলবার ছিল না তেমন কোনো ব্যবস্থা। দুই দিনই অবাধ যাতায়াত দেখা গেছে অনেক মানুষের। বুধবার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে বসে ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখেন প্রায় ৫০ জন। কিছু দিন আগেও যা ছিল নিষিদ্ধ।
এর আগে মঙ্গলবার ‘ক্রিকেট সংগঠকবৃন্দ’ ব্যানারে বিসিবি কার্যালয় প্রাঙ্গনে মিছিল, সমাবেশ করেন বেশ কিছু ক্লাবের সংগঠকরা। বিসিবির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বোর্ড পরিচালক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে দুই সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান ও বোরহান উদ্দিনও ছিলেন এই সমাবেশে।
এছাড়া ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল, পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ, প্রাইম দোলেশ্বরের যুগ্ম-সম্পাদক মুশতাক হোসেন, মোহামেডানের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম টিটুরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিসিবি প্রাঙ্গনে অবস্থান ও সমাবেশের পর বিসিবির সভাকক্ষে গিয়ে বসেন তারা। তখন বোর্ড প্রধানের চেয়ারে দেখা যায় রফিকুল ইসলামকে। পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে বিসিবি থেকে অযোগ্য সংগঠকদের সরিয়ে যোগ্য ক্রিকেট সংগঠকদের আনার দাবি রাখেন তিনি।