আন্তর্জাতিক অভিষেকে হ্যাটট্রিকের পর এবার টেস্ট ক্রিকেটে তিনশ, মিরপুরের মাঠকে সৌভাগ্যের মানছেন কাগিসো রাবাদা।
Published : 21 Oct 2024, 08:34 PM
‘রেকর্ড সম্পর্কে জানতাম না। তবে এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করবে’- ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততায় ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মৃদু হাসিতে বললেন কাগিসো রাবাদা। সংবাদ সম্মেলনে বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তরও তার কণ্ঠে মিশে থাকল বিনয়। তবে মাঠে তার আগুনে বোলিংয়ের উত্তাপ ঠিকই টের পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি নিজে অবশ্য অবাক মিরপুরের উইকেট থেকে সহায়তা পেয়ে।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার ৩ উইকেট নেন রাবাদা। এর মধ্যে প্রথমটিতে মুশফিকুর রহিমকে বোল্ড করে তিনি পৌঁছে যান তিনশ উইকেটের ঠিকানায়। পরে লিটন কুমার দাস ও নাঈম হাসানকে ফিরিয়ে তার উইকেট এখন ৩০২টি।
গুমোট সকালে নতুন বলে খুব খারাপ বোলিং করেননি রাবাদা। চার ওভারের প্রথম স্পেলে মাত্র চার রান খরচ করেন তিনি। কয়েকবার ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতেও ফেলেন। তবে আলগা বলও কিছু করেন। বাউন্সারগুলো পুরোপুরি নিখুঁত ছিল না।
তবে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম ওভারেই তিনি চমৎকার এক ডেলিভারিতে তিনি বোল্ড করেন মুশফিকুর রহিমকে। লেংথ থেকে তীক্ষ্ণভাবে ভেতরে ঢুকে যাওয়া ডেলিভারিতে ব্যাট নামাতে ক্ষণিকের দেরিতে স্টাম্প ছত্রখান হতে দেখেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
সঙ্গে সঙ্গেই সতীর্থদের আলিঙ্গনে সিক্ত হন রাবাদা। ম্যাচের পরিস্থিতিতে উইকেটটি ছিল যথেষ্ট মূল্যবান। তবে রাবাদার জন্য এটির মূল্য আরেকটু বেশি। কারণ উইকেটেই ৩০০ উইকেট পূর্ণ হয় তার।
দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওই মুহূর্তের অনুভূতি জানান রাবাদা।
“সকালে যখন বোলিংয়ে নামি, আমি শেষ (৩০০তম) উইকেট নিয়ে ভাবিনি। প্রথমত ভাবছিলাম, টস হেরে আগে বোলিং করে কীভাবে আমরা ম্যাচটি জিততে পারি। এই ইনিংসে তাদের ১০ উইকেট নেওয়াই ছিল ভাবনায়।”
“তবে এটি (৩০০ উইকেট) যখন হলো, স্বস্তির ছিল। সবার ভাবনায়ই মাইলফলক থাকে। এটি স্বস্তির ছিল। যেভাবে সতীর্থরা আমাকে সমর্থন দিয়েছে, খুবই ভালো লেগেছে। কখনও ভুলব না। এটি বিশেষ মুহূর্ত।”
টেস্ট ক্রিকেটে তিনশ উইকেট নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ষষ্ঠ বোলার রাবাদা। ৬৫ ম্যাচে এই মাইলফলক ছুঁয়ে দেশের তৃতীয় দ্রুততম তিনি। তবে বিবেচনায় নেওয়া হয় যদি ডেলিভারির হিসাব, ২৯ বছর বয়সী পেসার টেস্ট ইতিহাসেরই দ্রুততম।
এই মাইলফলক ছুঁতে তার লাগে ১১ হাজার ৮১৭ ডেলিভারি। পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনুস ৩০০ ছুঁয়েছিলেন ১২ হাজার ৬০২ ডেলিভারি করে।
রেকর্ডের কথা জেনে রাবাদার ছোট্ট উত্তর, “আমি আসলে রেকর্ড সম্পর্কে জানতাম না। তবে এটি আমাকে সামনে আরও ভালো করতে অনুপ্রাণিত করবে।”
২০১৫ সালে বাংলাদেশেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় রাবাদার। মিরপুরে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই হ্যাটট্রিক করেন তিনি। এর প্রায় ৯ বছর পর আবার বাংলাদেশে এসে দেখা পেলেন আরেকটি মাইলফলকের।
মিরপুরের মাঠ তাই আলাদা হয়েই হৃদয়ে গেঁথে গেছে তার।
“আমার মনে হয়, এটা (সৌভাগ্যের ভেন্যু) বলা যায়… এটি বলতে পারেন। এখানে আমার দারুণ কিছু স্মৃতি আছে। আমার মনে হয়, এই মাঠটি সিম বোলারদের সাহায্য করে। তাই না? (হাসি)।”
দক্ষিণ আফ্রিকার ওই বাংলাদেশ সফরে টেস্ট থাকলেও লাল বলে তখন অভিষেক করানো হয়নি রাবাদার। কয়েক মাস পর ভারতে টেস্ট ক্রিকেটের স্বাদ পান তিনি। তবে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ওই সিরিজটি ভালো কাটেনি তরুণ পেসারের।
তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের সিরিজেই সেঞ্চুরিয়নে ১৩ উইকেটসহ তিন ম্যাচে তিনি নেন ২২ উইকেট। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৬৫ ম্যাচে ১৪ বার ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট নিয়ে তিনি প্রবেশ করলেন ৩০০ উইকেটের ক্লাবে।
রাবাদার আগে এই মাইলফলক ছোঁয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের সবাই পেসার- ডেল স্টেইন (৪৩৯), শন পোলক (৪২১), মাখায়া এনটিনি (৩৯০), অ্যালান ডোনাল্ড (৩৩০) ও মরনে মরকেল (৩০৯)।
দেশের কিংবদন্তি সব পেসারদের কাতারে নাম লেখাতে পেরে গর্বিত রাবাদা।
“আমার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করতে পারা সম্মানের বিষয়। অসাধারণ সব ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া এই তালিকায় ঢুকতে পারা আমার জন্য গর্বের। এর চেয়ে ভালোভাবে আর হয়তো বলতে পারব না।”
দিনের শুরুতে রাবাদা সাফল্য না পেলেও, পেস অলরাউন্ডার ভিয়ান মুল্ডার ধস নামান বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে। উইকেটে শুরু থেকেই ছিল টার্ন। চমক হিসেবে দেখা যায়, বাড়তি বাউন্স। যা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান মুল্ডার।
নিজের প্রথম তিন ওভারে সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তকে ফেরান পেস অলরাউন্ডার। পরে রাবাদাও ধরেন ৩ শিকার। মিরপুরের উইকেটে স্পিনারদের সাহায্য অনুমেয় হলেও পেসারদের মুভমেন্ট দেখে বিস্ময় লুকাননি রাবাদা।
“উইকেটের আচরণ দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম বল ঘুরবে। তবে পেসাররাও মুভমেন্ট পাবে ভাবিনি। নতুন বলে মুভমেন্ট ছিল। তেমন সুইং ছিল না। তবে ‘অফ দা উইকেট’ কিছুটা সিম মুভমেন্ট ছিল।”
“সত্যি বলতে, নেটে এরকমই ছিল উইকেট। নেটের সঙ্গে মাঠের উইকেট প্রায় মিলে গেছে। স্পিনারদের জন্য টার্ন ছিল এবং সিমাররাও সিম মুভমেন্ট পাচ্ছিল। আমাদের জন্য কিছুটা বিস্ময়কর ছিল।”