এবারের আইপিএলে তার খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই ৪৩ বছর বয়সী কিংবদন্তি ইঙ্গিত দিলেন আরও কয়েক বছর খেলার।
Published : 28 Oct 2024, 09:55 AM
বয়স ৪৩ পেরিয়ে গেছে বেশ আগেই। তবে মাহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে ‘সাবেক ক্রিকেটার’ পরিচয় এখনও পুরোপুরি সেঁটে যায়নি। সহসা তা হচ্ছে না বলেও ইঙ্গিত দিলেন তিনি। ভারতীয় কিংবদন্তি খেলতে চান আরও কয়েক বছর। এই সময়টায় তিনি ফিরে যেতে চান শৈশবে। প্রতিদিন বিকেলে যেমন মনের আনন্দে ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে ছুটে যেতেন, সেভাবেই উপভোগ করতে চান ক্যারিয়ারের বাকি দিনগুলি।
ধোনির এই কথায় তার ভক্তরা যেমন খুশির উপকরণ পাবেন, তেমনি স্বস্তি পাবেন চেন্নাই সুপার কিংসের সমর্থকেরাও। চেন্নাইয়ের সমার্থক হয়ে যাওয়া এই ক্রিকেটার এবারের আইপিএলে খেলবেন কি না, এটা নিয়ে সংশয় এখনও আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানা যায়নি।
আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ধরে রাখা ক্রিকেটারের তালিকা জমা দিতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে। চেন্নাই সুপার কিংস ম্যানেজমেন্ট তাই এখন নিশ্চয়ই জেনে গেছেন ধোনির ইচ্ছের কথা। তবে গোয়াতে একটি প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি যা বললেন, তাতে তার চাওয়াটা পরিষ্কার হয়ে গেল সবার কাছেই।
ধোনি বললেন, ক্যারিয়ারের বাকি সময়টায় তিনি স্রেফ খেলার আনন্দে খেলে যেতে চান।
“শেষ যে কবছরই খেলতে পারি, স্রেফ উপভোগ করে যেতে চাই আমি। ছেলেবেলায় যেমন বিকেল ৪টার দিকে মাঠে গিয়ে খেলতাম, সেভাবেই উপভোগ করতে চাই। তবে পেশাদার ক্রীড়ায় খেলাটাকে স্রেফ খেলার মতো উপভোগ করা কঠিন। এটাই আমি করতে চাই।”
“হ্যাঁ, অবশ্যই সেখানে আবেগ ও প্রতিজ্ঞা থাকবে। তবে আগামী কয়েক বছর স্রেফ খেলাটাকে উপভোগ করতে চাই।”
২০১৯ বিশ্বকাপের পর ভারতের হয়ে আর খেলেননি ধোনি। পরের বছর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের ঘোষণা দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। তার ক্রিকেটার সত্তা টিকে আছে এখন কেবল আইপিএলেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, শেষ কয়েক বছরের খেলা বলতে তিনি এই টুর্নামেন্টকেই বুঝিয়েছেন।
গত মৌসুমেও অবশ্য অনেকটা একই ভূমিকায় দেখা গেছে। চেন্নাইয়ের নেতৃত্ব ছেড়েছেন তিনি রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের কাছে। ব্যাটিংয়েও তিনি নেমেছেন একদম শেষের দিকে, কয়েকটি বল খেলার জন্য।
সেটির পেছনের কারণ এবার ব্যাখ্যা করলেন তিনি।
“আমার ভাবনাটা ছিল খুব সাধারণ। অন্যরা যদি ঠিকঠাক কাজ চালিয়ে নেয়, আমাকে কেন ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে উঠতে হবে? গত মৌসুমের কথা বললে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার সময় এগিয়ে আসছিল। সেখানে জায়গার লড়াইয়ে যারা ছিল, তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ার ব্যাপার ছিল। আমাদের দলে (রাভিন্দ্রা) জাদেজা ছিল, শিভাম দুবে ছিল। ভারতীয় দলে ঢোকার জন্য নিজেদের প্রমাণ করার ব্যাপার ছিল ওদের জন্য।”
“আমার এরকম কোনো ব্যাপার ছিল না। দল নির্বাচন বা অন্য কিছুই ছিল না। ওদের পেছনে (ব্যাটিং অর্ডারে) থাকতে পারাই আমার জন্য ছিল ভালো এবং আমার ভূমিকায় দলও খুশি ছিল।”
নিচের দিকে ব্যাট করেও নিজের ভূমিকায় তিনি ছিলেন দারুণ সফল। গোটা আসরে ১১ ইনিংস ব্যাট করে মোট ৭৩ বল খেলেছিলেন তিনি। তাতেই রান করেছিলেন ১৬১। ৮ ইনিংসে অপরাজিত থাকায় গড় ছিল ৫৩.৬৬। স্ট্রাইক রেট ছিল ২২০.৫৪, আসরে অন্তত ৬০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ধোনি কথা বলেছেন সমসাময়িক টেস্ট ক্রিকেট নিয়েও। সাদা পোশাকে খেলা ছেড়েছেন তিনি প্রায় ১২ বছর আগে। তবে এখন যে ‘বাজবল’ ক্রিকেট খেলছে ইংল্যান্ড, বিশ্বজুড়েই যে আগ্রাসী ক্রিকেট হচ্ছে, তা দারুণ আনন্দ দেয় ৯০ টেস্ট খেলা ক্রিকেটারকে।
“ক্রিকেটকে আপনি যে নামই দেন না কেন, আমরা যা দেখছি, তা হলো ক্রিকেট বিকশিত হয়েছে। যেভাবে খেলাটা এখন খেলা হচ্ছে, তা খুবই আলাদা। একটা সময় ওয়ানডেতে যে স্কোরকে নিরাপদ মনে করা হতো, এখন টি-টোয়েন্টিতেও তা নিরাপদ নয়।”
৫৩৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার পেছন ফিরে তাকালেন নিজের সময়টায়। নিশ্চিত ড্র ম্যাচের শেষ দিনটায় তার মাঠে থাকতেই ইচ্ছে করত না।
“আমার জন্য টেস্ট ম্যাচের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল শেষ দিনটা, যখন জানতাম যে ম্যাচ নিশ্চিতভাবেই ড্র হবে। তখনও হয়তো আড়াই সেশন কিপিং করতে হতো আমাকে। সবচেয়ে ক্লান্তিকর অংশ ছিল সেটিই। বোঝাই যেত কোনো ফলাফল হবে না, স্রেফ খেলার জন্য খেলতে হতো।”
“হ্যাঁ, তখনও বোলাররা উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করে, ব্যাটসম্যানরা রান করার। কিন্তু ম্যাচ থেকে কিছু পাওয়ার নেই। আমার মনে হতো, সব শেষ করে চলে যাওয়া ভালো, এখানে আমার থাকতে হবে কেন! এজন্যই আমার এখন খুব ভালো লাগে যে, টেস্ট ক্রিকেটের ধরন পাল্টে যাচ্ছে।”
ধোনির মতে, এখন টেস্ট ক্রিকেটেও যে আগ্রাসী ঘরানায় খেলছে দলগুলি, ক্রিকেটের জন্যই এটা দারুণ বিজ্ঞাপন।
“ভেবে দেখুন, ক্রিকেট সম্পর্কে যে খুব একটা জানে না, তাকে যদি বোঝাতে যান যে, পাঁচ দিন ধরে খেলে, সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু করে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত, কখনও কখনও ৫টা পর্যন্ত খেলেও পাঁচ দিন পর ফলাফল পেলাম না… তাহলে সেটা তো মোটেও ভালো কিছু নয়।”
“এজন্যই আমার খুব ভালো লাগে যে, এখন ফলাফল অনেক বেশি হয়। এমনকি এক দিনের খেলা বৃ্ষ্টিতে ভেসে গেলেও চার দিনে ফলাফল হয়ে যাচ্ছে। এটাই টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য এবং এমনটিই হওয়া উচিত। পাঁচদিন খেলার পর ফলাফল হওয়া উচিত, ড্র হওয়া উচিত নয়।”