ভারত-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
পুনে টেস্টে ১১৩ রানের জয়ে এই প্রথম ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়ল কিউইরা।
Published : 26 Oct 2024, 04:41 PM
অনেকটা সময় ক্রিজে কাটিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন রাভিন্দ্রা জাদেজা। এজাজ প্যাটেলকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ধরা পড়লেন লং-অনে। বাউন্ডারিতে টিম সাউদি বল মুঠোয় জমিয়েই শুরু করলেন উল্লাস। আর মাঠের মাঝে জড়ো হয়ে উদযাপনে মাতলেন নিউ জিল্যান্ডের অন্যরা। ভারতের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয় বলে কথা!
তিন দিনেই পুনে টেস্ট ১১৩ রানে জিতে নিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। ৩৫৯ রানের লক্ষ্য দিয়ে শনিবার ভারতকে তারা গুটিয়ে দিয়েছে ২৪৫ রানে।
এক ম্যাচ বাকি থাকতে তিন টেস্টের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে সফরকারীরা। বেঙ্গালুরুতে প্রথম টেস্ট তারা জিতেছিল ৮ উইকেটে।
ভারতের মাটিতে ত্রয়োদশ টেস্ট সিরিজে এসে জয়ের স্বাদ পেল কিউইরা। এর আগে এখানে দুটি সিরিজ ড্র করেছিল তাসমান সাগর পাড়ের দলটি।
ঘরের মাঠে এক যুগ পর টেস্ট সিরিজ হারল ভারত। নিজ আঙিনায় তাদের সবশেষ সিরিজ হার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১২ সালে চার টেস্টের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে। এরপর থেকে ঘরের মাঠে টানা ১৮টি টেস্ট সিরিজ জিতেছিল উপমহাদেশের দলটি।
কিউইদের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের নায়ক মিচেল স্যান্টনার। পুনের টার্নিং উইকেটে তার বাঁহাতি স্পিনের ধ্রুপদি প্রদর্শনীতে দুই ইনিংসেই ব্যাটিং ধসে পড়ে ভারত। প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানে ৭ উইকেট নেওয়া স্যান্টনার দ্বিতীয়ভাগে নেন আরও ৬টি। এমন পারফরম্যান্সের পর ম্যাচ সেরা তিনি ছাড়া আর কে!
ম্যাচে ১৫৭ রান খরচায় মোট ১৩ উইকেট নেন স্যান্টনার। টেস্টে নিউ জিল্যান্ড বোলারদের মধ্যে যা তৃতীয় সেরা। ১৫ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলি। ১৪ উইকেট আছে বাঁহাতি স্পিনার এজাজের।
টেস্টের দুই ইনিংসেই অন্তত পাঁচটি করে উইকেট নেওয়া নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় স্পিনার স্যান্টনার। এর আগে দুই দফায় এই কীর্তি গড়েছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
দিনের শুরুটা অবশ্য ভারতের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। ৫ উইকেটে ১৯৮ রান নিয়ে খেলতে নামা নিউ জিল্যান্ডকে প্রথম ঘণ্টায়ই গুটিয়ে দেয় তারা। স্রেফ ২৪ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রানে থামে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংস।
টম ব্লান্ডেলকে (৩ চারে ৪১) বোল্ড করে ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেট নেন জাদেজা। স্যান্টনার ও এজাজকেও দ্রুত বিদায় করেন তিনি। মাঝে রাভিচান্দ্রান অশ্বিনের শিকার টিম সাউদি। নিউ জিল্যান্ডের শেষ জুটি ভাঙে উইল ও’রোক রান আউট হলে।
২ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন গ্লেন ফিলিপস।
প্রথম ইনিংসে আলো ছড়ানো স্যান্টনার এবার শুরুতেই উজ্জ্বল। তার বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে শর্ট লেগে ধরা পড়েন রোহিত শার্মা। ইয়াসাসভি জয়সওয়াল ও শুবমান গিলের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় ভারত।
গিলকে ফিরিয়ে জমে যাওয়া ৬২ রানের জুটি ভাঙেন স্যান্টনারই। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ভারত। আর কোনো পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি পায়নি স্বাগতিকরা। ইনিংসে একমাত্র ফিফটি করা জয়সওয়ালের আগ্রাসন থামান স্যান্টনার। ৩ ছক্কা ও ৯ চারে ৬৫ বলে ৭৭ রান করেন ভারত ওপেনার।
রান আউটে কাটা পড়ে শূন্য রান ড্রেসিং রুমে ফেরেন রিশাভ পান্ত। প্রথম ইনিংসে স্যান্টনারের ফুল টসে বোল্ড হওয়া ভিরাট কোহলি এবার এই স্পিনারের বলে হন এলবিডব্লিউ। দুই ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটিং গ্রেট করেন ১ ও ১৭ রান।
সারফারাজ খানের স্টাম্প ভেঙে স্যান্টনার পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি ওয়াশিংটন সুন্দার ও অশ্বিন। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যান জাদেজা। তাকে ফিরিয়েই জয়ের আনন্দে মাতে নিউ জিল্যান্ড।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু আগামী শুক্রবার, ওয়াংখেড়েতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৫৯
ভারত ১ম ইনিংস: ১৫৬
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৫৫ (আগের দিন ১৯৮/৫) (ব্লান্ডেল ৪১, ফিলিপস ৪৮*, স্যান্টনার ৪, সাউদি ০, এজাজ ১, ও’রোক ০; অশ্বিন ২৫-২-৯৭-২, ওয়াশিংটন ১৯-০-৫৬-৪, জাদেজা ১৯.৪-৩-৭২-৩, বুমরাহ ৬-১-২৫-০)
ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৫৯) ৬০.২ ওভারে ২৪৫ (জয়সওয়াল ৭৭, রোহিত ৮, গিল ২৩, কোহলি ১৭, পান্ত ০, ওয়াশিংটন ২১, সারফারাজ ৯, জাদেজা ৪২, অশ্বিন ১৮, আকাশ ১, জাসপ্রিত ১০*; সাউদি ২-০-১৫-০, ও’রোক ১-০-৫-০, স্যান্টনার ২৯-২-১০৪-৬, এজাজ ১২.২-০-৪৩-২, ফিলিপস ১৬-০-৬০-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ১১৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মিচেল স্যান্টনার
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড