শাহবাগে ছাত্র পরিষদের কর্মীদের উপর হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন জসীম উদদীন হলের কয়েক ছাত্রলীগকর্মী।
Published : 23 Aug 2022, 11:58 PM
শাহবাগে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগকর্মীদের দুঃখ প্রকাশ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে নয় বলে জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মারধরে জড়িত ছাত্রলীগকর্মীরা বলেন, ছাত্রলীগের নির্দেশে তারা সংঘর্ষে জড়াননি। তাৎক্ষণিক ‘ভুল বোঝাবুঝির’ কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, যার কারণে তারা ব্যক্তিগতভাবে সমঝোতায় এসে দুঃখ প্রকাশ করেন।
ফেইসবুক মেসেঞ্জারে এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মেফতাহুল মারুফ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রকে পুলিশে দেন জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।
মারুফের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো ‘পর্যাপ্ত উপাদান’ পুলিশ না পাওয়ায় পরদিন দুপুরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে সময় থানার সামনে অবস্থান করা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা মারুফকে নিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকসহ একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের বাক-বিতণ্ডা হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদদীন হল শাখা ছাত্রলীগের একদল কর্মী সেখানে হামলা চালিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা সালেহউদ্দিন সিফাত ও আহনাফ সাইয়্যেদ খানকে আহত করে।
হামলায় কবি জসীম উদদীন হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে ইত্তেজা হাসান রাকিব, মো. সুমন আলী, হেদায়েতুল ইসলাম, তানজীর আরাফাত তুষার, আবদুল্লাহ আল-মাসরুর রৌদ্র ও রোকোনুজ্জামান মারধরে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা ইন্টারনেটে অভিযুক্তদের ছবিসহ নাম-পরিচয় প্রকাশ করে মামলা করার হুমকি দেন।
এরে ওই ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত দাবি করে সোমবার ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে দুঃখ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা।
এরপর ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা অভিযুক্তদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে ‘ভুলভাবে’ সংবাদ উপস্থাপন হয়েছে দাবি করে মঙ্গলবার সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগকর্মী ইত্তেজা হাসান রাকিব লিখিত বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সাথে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আমরা দুঃখ প্রকাশ করি এবং ভুল বোঝাবুঝি দূর করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করি।
“কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু অনলাইন পোর্টালে নিউজ করা হয়, ‘ছাত্রলীগ বা ছাত্রলীগকর্মী ক্ষমা চেয়েছে’, যা সত্য ঘটনার সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের ব্যক্তিগত ভুলে সংগঠনকে দায় দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করায় আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি।”
‘ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে’ দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে রাকিব বলেন, “মূল ঘটনাটি হলো আমরা সবাই ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং উভয় পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছি। কারণ আমরা ছাত্রলীগের নির্দেশে সংঘর্ষে জড়াইনি। এমনকি ছাত্রলীগের প্রতিনিধি হিসেবেও দুঃখ প্রকাশ করিনি।
“সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে চাই, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমরা ব্যক্তিগতভাবে লজ্জিত। আমাদের ব্যক্তিগত ভুলের জন্য কোনভাবেই সংগঠনকে জড়ানো ঠিক হবে না। তাই উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, সঠিক তথ্যটি দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে আপনারা সহযোগিতা করুন।”